সব দুর্নীতিবাজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
সরকারের পতন ঘটাতে দুর্নীতিবাজদের তথাকথিত জাতীয় ঐক্য হয়েছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের পতন ঘটাতে সব দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, খুনের আসামিরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে নিউইয়র্কের মিডটাউনের হোটেল হিলটনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দেয়া এক সংবর্ধনায় যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসম্বর্ধনায় আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। কি-নোট স্পিকার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় প্রধানমন্ত্রী সম্বর্ধনাস্থলে এলে মুহুর্মুহু শ্লোগান আর করতালির মাধ্যমে স্বাগত জানান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পরই সভাস্থল থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের অপসারণের দাবিতে শ্লোগান ভেসে আসতে থাকে ‘নো মোর সিদ্দিক’ ‘ভুয়া ভুয়া’।
এসময় প্রধানমন্ত্রী মুখে আঙ্গুল দিয়ে সবাইকে চুপ থাকতে বলেন। সাথে সাথেই প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উপবিষ্ট সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপুমনির কাছে জানতে চান সভাস্থলের পরিস্থিতি সম্পর্কে। ততক্ষণে বেশ কয়েক দফা সভাস্থলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একই ধরণের শ্লোগান আসতে থাকে। পরে শেখ সেলিম এমপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ধমকের সুরে বক্তব্য রাখা শুরু করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি মুহাম্মদ ইউনুসেরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পরও তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ছাড়েন না। কারণ, এমডির পদ ছাড়লে তো গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা মারা যাবে না।
এসময় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে বলেন, সাংবাদিকরা নিজেদের স্বার্থে এই আইনের বিরোধিতা করছেন। সামাজিক যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেদিকে তাদের কোনো লক্ষ্য নেই। অপপ্রচার রোধ ও শিশুদের সুরক্ষা করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। এতে সাংবাদিকদের উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ তিতিক্ষা সম্পর্কে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা পড়তে হবে।
তিনি আরো বলেন, বাসের ধাক্কায় দু’টি শিশুর বিচার চাইতে তারা আমার কাছে বিচার চাইতে রাস্তায় নামে। কিন্তু আমরা দুই বোন দেশে ফিরে আমাদের পিতার হত্যার বিচার চাইতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, শিশুরা আন্দোলন করেছে, তাদের গায়ে কেউ হাত দেয়নি। কিন্তু তিন দিন না যেতেই শিশুদের ঘাড়ে পারা দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে নেমেছিল একটি মহল। আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার উস্কানি দেয়া হয়েছিল। ধর্ষণ ও হত্যার অপপ্রচার চালানো হয়েছিল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।
এসময় আলোকচিত্রী শহিদুল আলম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যে কয়েকটি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে প্রত্যেকটি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের কোনো ভালো কাজ সে দেখেনি। তাকে নিয়ে এখন দুনিয়াজুড়ে কান্নাকাটি শুরু হয়েছে। শহিদুল আলমের মামা পাকিস্তানী রাজাকার ছিল বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আরো জানান, তাকে পুলিশের পক্ষ থেকে ফেসবুকে অপপ্রচার বন্ধের অনুরোধ জানালে তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর হুমকি দেন।
সদ্য গঠিত জাতীয় ঐক্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা মানুষ হত্যাকারীদের সঙ্গে জোট করতে পারে তাদের মুখে দেশের স্বার্থের কথা মানায় না। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন সরকারের পতন ঘটাতে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, খুনী, দখলদার আসামিরা সব একজোট হয়েছে। সরকার উৎখাত করতে হবে, কিন্তু কেন? এমন কি কাজটা আমরা দেশের জন্য করিনি? এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে আমরা উন্নয়ন করিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সুনজরে ছিলেন বলে দুই দফা নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তারা রাজনীতি করুক তাতে কোনো আপত্তি নেই। আওয়ামী লীগের বিপরীতে যারা ভোট দিবে তাদের জন্যও একটি দল লাগবে। জনগণ তাদেরকে ভোট দিলে দেবে। আওয়ামী লীগ সততায় বিশ্বাস করে। আগামী নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
শিগগিরই ঢাকা-নিউ ইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট চালুর আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের সাথে যা কথা হচ্ছে, ডাইরেক্ট ঢাকা থেকে নিউ ইয়র্ক আসতে পারব।