বি চৌধুরীকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যে অনিশ্চয়তা

বি চৌধুরীকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যে অনিশ্চয়তাআনোয়ার আলদীন১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ইং সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াসহ চার দল আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার ঘোষণা দিলেও অনিশ্চয়তা কাটছে না। বি চৌধুরীকে নিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়ায় জড়িতদের মধ্যে সন্দেহ-সংশয় দেখা দিয়েছে। ঐক্য প্রক্রিয়াকে কার্যকর ও এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তার সক্রিয়তা এবং আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অপারাপর নেতারা। ঐক্য প্রক্রিয়ার একজন নেতা বলছেন, বি চৌধুরীর কর্মকাণ্ড নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। তাকে আরো সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। সেটা না হলে বিকল্প চিন্তা করা যাবে।ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রভাবশালী একজন নেতা বলেন, বি চৌধুরী ও তার পুত্র মাহী বি চৌধুরী শুরুতে জোটের ব্যপারে আগ্রহী থাকলেও মাঝপথে এসে রহস্যজনক ভুমিকা পালন করছেন। বি চৌধুরীকে বৈঠকে হাজির করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। ঈদের আগে ড.কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠক ডাকা হলে সেখানে যাননি তিনি। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে পাঁচ দফা দাবি ও নয়টি লক্ষ্য ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি আসেননি। বলা হচ্ছে প্রেসক্লাবে যাওয়ার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই অসুস্থতা কি সত্যি, নাকি এর পেছনে অন্য কোন রহস্য আছে তা সন্দেজনক। বি চৌধুরী প্রেসক্লাবে তার যে প্রতিনিধি পাঠান তিনি বড় কোন নেতা নন। বিকল্পধারার মহাসচিব বা প্রভাবশালী কাউকে পাঠাতে পারতেন। তার ছেলেকেও পাঠাতে পারতেন। তার ছেলে মাহী বি চৌধুরী ‘প্রজন্ম বাংলাদেশ’ নামে একটি আলাদা প্লাটফরম করেছেন। নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এই ঐক্য প্রক্রিয়া মূলত: বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুগপত্ভাবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বেশকিছু দাবি নিয়ে একযোগে মাঠে নামতে চান। তবে এক্ষেত্রে বি চৌধুরীর পক্ষ থেকে শুরুর দিকে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও শেষ পর্যায়ে এসে তা কমে যায়। আসন ভাগাভাগিসহ ভবিষ্যতে সরকারে যাতে ভারসাম্য থাকে সেজন্য বিএনপির সাথে দরকষাকষিতে গুরুত্ব দেন তিনি। সূত্র জানায়, দরকষাকষি ছাড়াও ঐক্য প্রক্রিয়ায় বড় বাধা হয়ে দাড়ায় নেতৃত্বের বিষয়টি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কে জোটের নেতৃত্ব দেবেন তা নিয়ে নানা আলোচনা হয়। পরে বিএনপি কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মনোভাব দেখানোর পর ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের পথ সহজ হয়। বৃহত্তর ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে শুরুতেই বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোকে গুরুত্ব দেয় বিএনপির হাইকমান্ড। বৃহত্তর ঐক্যের প্রস্তাব নিয়ে বি. চৌধুরীর বাসায় যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরিস্থিতি উত্তরণে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া বাস্তব রূপ দিতে বি. চৌধুরীকে অনুরোধ করেন তিনি। এতে বি. চৌধুরীও ইতিবাচক সাড়া দেন। কিন্তু বাধ সাধেন তার ছেলে মাহী বি. চৌধুরী। ওই বৈঠকে উপস্থিত মাহী বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ করে বলেন, আগামীতে যাতে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে সেদিকে গুরুত্ব দিয়েই বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে যুক্তফ্রন্টসহ অন্য দলগুলোর জন্য বিএনপিকে দেড়শ’ আসন ছেড়ে দিতে হবে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, ১৫০ আসনের দাবিতে এখনো অনঢ় আছে বি চৌধুরীর দল।এদিকে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবি জানিয়ে ড.কামাল হোসেন, আসম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ নেতারা বক্তব্য ও বিবৃতি দিলেও অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী তার মুক্তির বিষয়ে এ যাবত্ কোন সুস্পস্ট বক্তব্য দেননি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সম্বলিত একটি বিবৃতি তার কাছে নেওয়া হলে তিনি তাতে স্বাক্ষর করতেও সম্মত হননি বলে জানা যায়।বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমরা সবাই একমত যে, দেশে এখন একটা দুঃশাসন চলছে। এ অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য বৃহত্তর ঐক্য। তবে যে কোনো ঐক্য হলে যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে ব্যালেন্স। বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য নিয়ে আমাদের আলোচনা হচ্ছে। আমরা তাদের বলেছি, যেসব দল নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলা হবে সেখানে যাতে ভারসাম্য থাকে সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ কোনো জোটের বিশেষ একটি দলের প্রভাব থাকলে সেই ঐক্য বেশিদিন থাকে না। এ জন্য আমরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছি। সেগুলো নিয়ে দরকষাকষি চলছে। আশা করি একটি সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব হবে।  জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার পুরোধা, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রথম ও শেষ কথা জাতীয় ঐক্য। আমাদের ঐক্য হচ্ছে জনগণের ঐক্য। সবাই মিলে যদি কৌশল অবলম্বন করা যায় যে, আমরা একদলীয় নির্বাচন চাই না, একপেশে নির্বাচন চাই না। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চাই। সর্বদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হোক। সরকার ভাল হোক, বিরোধী দল সবাই মিলে যাতে ভূমিকা রাখতে পারে, যেটা গণতন্ত্রে আকাঙ্ক্ষিত এমন নির্বাচন দেখতে চাই। তিনি বলেন, দেশের প্রকৃত মালিক জনগণ। এটা বাস্তবায়ন করতে সুষ্ঠু একটি নির্বাচন দরকার। স্বাধীনতার ৫০ বছরকে সামনে রেখে জাতীয় সংসদে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেই লক্ষ্য প্রতিষ্ঠার জন্য ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে’র কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই ঐক্য জনগণের ঐক্য। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি ও স্বাধীনতা বিরোধীরা বাদে সকলকে আমরা আমাদের জাতীয় ঐক্যে ডাক দিয়েছি। আমাদের নিজেদের মধ্যে কোন সমস্যা নেই।
এদিকে নাগরিক ঐক্য আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ইত্তেফাককে বলেন, আমাদের মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয় নেই। ঐক্য প্রক্রিয়ায় কাউকে নিয়ে অনিশ্চয়তাও নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকবো। বি চৌধুরী সাহেব অসুস্থ এজন্য প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে যেতে পারেননি। গতকাল আমরা তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেন,আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার দাবি ও লক্ষ্য ঘোষনা করেছি। আমাদের দাবি যে ন্যায্য তা নিশ্চিত করার জন্য এই মাসজুড়ে গণসংযোগ করা হবে। তারপর সময় অনুযায়ী সবকিছু হবে।
এদিকে এখন বিএনপির সঙ্গে যেকোনো প্রকারে ঐক্য গঠনে আগ্রহী ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। গত শনিবার প্রেসক্লাবে ডা.কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে দাবি ও লক্ষ্য ঘোষণা করা হয় সেই দাবিগুলো বিএনপি এতোদিন করে আসছিল। যেখানে গুরুত্ব পেয়েছে সংসদ ভেঙে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি, ভোটের সময় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন ও ইভিএমের ব্যবহার বাতিল। যুক্তফ্রন্টের এসব দাবির ৪টিরই হুবহু মিল রয়েছে ঠিক ১১ মাস আগে ইসির সঙ্গে সংলাপে দেয়া বিএনপির ২০ প্রস্তাবের। আর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে সে সংলাপে কোনো প্রস্তাব না থাকলেও সম্প্রতি এ ইস্যুতেও বেশ সরব বিএনপি নেতারা। তবে যুক্তফ্রন্টের ঘোষণায় স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে বাদ দিয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেও এখন ফ্রন্টের নেতাদের কথায় কিছুটা ভিন্ন সুর। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতেরে থাকা না থাকাকে কোনো বড় ইস্যু মনে করছেন না তারা । নাগরিক ঐক্য আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের জোট অনেক দিনের। তাছাড়া জামায়াতের নিবন্ধন নেই। ঐটাকে ইস্যু করে ঐক্যটার ক্ষতি করতে চাই না। তিনি বলেন, জামায়াতের নিবন্ধন নেই। তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না। তারা তাদের মতো আন্দোলন করতে পারে। আমাদের ঐক্য প্রক্রিয়ায় তাদের রাখা হবে না। আর ২০ দলীয় জোটে তাদের রাখবে কি রাখবে না সে সিদ্ধান্ত বিএনপির।

এ বিভাগের অন্যান্য