আওয়ামীলীগের দুর্গ ভাঙতে চান নাছির.শামসুলের বাজিমাত
সুনামগঞ্জ-২ আসন আলোচনার শীর্ষে নাছির ও শামসুল ইসলাম
মবরুর আহমদ সাজু:
সবাই এমপি হতে চান। কেউ আর কর্মী থাকতে চান না। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সবাই ছুটছেন। কোন রাজনৈতিক অতীত নেই, এলাকায় জনসম্পৃক্ততা নেই, নেই কোনো জনপ্রিয়তা এমন ব্যক্তিরাও এমপি হতে চান। বাবা সেই কোন আমলে এমপি ছিলেন তার নাম ভাঙিয়ে সন্তানরা এমপি হতে চান। মাঠের রাজনীতিতে তার ভূমিকা থাক না থাক, তাতে কিছু আসে যায় না। তারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন। এইসব এমপি পদ প্রত্যাশীরা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল দলের নেতাদের দুয়ারে যত না ছুটছেন তার চেয়ে বেশি যাচ্ছেন গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে। জাতীয়, স্থানীয় দৈনিকে হামেশাই তাদের প্রার্থী হিসাবে নাম লেখাচ্ছেন, ছবি ছাপাচ্ছেন।আবার অনেকে এমপি হতে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে গিয়ে দলের বিরুদ্ধে দুর্নাম ছড়াচ্ছেন, নিজ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জ-২ আসনে স্বাধীনতার পর শুধু একটি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। ৮বারের সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে জয়ী হন তার স্ত্রী ড. জয়া সেন গুপ্তা কিন্তু তিনি ভাটিবাংলার রাজনীতিতে লাগাম ধরতে ব্যর্থ হন? এবার সংসদ নির্বাচন আসায় এ আসনেকে ঘিরে নতুন নেতৃত্ব চায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ। তারা বলেন আওয়ামীলীগে এমন প্রার্থী দরকার যে এলাকার রাজনীতি বুঝে। এই সুযোগে বিএনপিসহ অন্যান্য দলও প্রস্তুত আসনটি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে ,আর ভোটাররা বলছেন, যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে উন্নয়ন করতে পারবেন এমন প্রার্থীকেই নির্বাচিত করতে চান তারা। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নির্বাচনী এলাকার গ্রাম গ্রামান্তর চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় হাইকমান্ডের নজর কাড়তে ইতোমধ্যে ত্রাণ বিতরণ, পথসভা ও গণসংযোগসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। মহাজোটের একাধিক নবীন প্রবীণ প্রার্থী থাকলেও বিএনপির রয়েছে একক প্রার্থী। নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছাতে শুরু করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী, তিনি বিএনপি ও সহযোগীসংগঠন ঢেলে সাজাতে দিরাই-শাল্লায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের চির প্রতিদ্বন্দ্বী নিজের হারানো আসন ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন, কিন্তু তিনি তৃণমূলদের শক্তিশালি করতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন জয়া কথাগুলো বলছিলেন এলাকার সচেতন জনগণ। জানাযায় বয়সের বারে নুহ্য হওয়া জয়াসেন এখন আর রাজনীতিতে না আসাটাকে স্বাগতম জানান তারা ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মনোননয়ন প্রত্যাশী নেতা বলেন উপনির্বাচনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একাধিক তরুণ নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে তাঁরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। এবার সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে তারা বিশেষ করে সিলেট আইন কলেজের সাবেক ভিপি, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অতি ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত, সিলেট জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম। তিনি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রয়াণের পর থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার আশায় নিজ পক্ষের জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে ত্রাণ বিতরণ, মতবিনিময় ও গণসংযোগসহ ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাইবেন আরেক যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহবায়ক সামছুল হক চৌধুরী। অপরদিকে মহাজোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী আজহার এবং গণতন্ত্রী পার্টি সিলেট জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক গুলজার আহমদ। যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহবায়ক সামছুল হক চৌধুরী বলেন ছাত্রজীবন থেকে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করে আসছি, প্রবাসে থাকলেও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে দিরাই-শাল্লার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আমাদের প্রিয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু হাইকমান্ডের নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করি, আমার সকল দিক বিবেচনা করে হাইকমান্ড আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেবে এ আমার বিশ্বাস। বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী আজহার বলেন, দিরাই-শাল্লা এক সময় বাম রাজনীতির ঘাঁটি ছিল। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, নাছির উদ্দিন চৌধুরীসহ এই এলাকার অনেক নেতাই ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী দিরাই-শাল্লার মানুষ মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে রায় দেবেন।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ চৌধুরী বলেন, দিরাই-শাল্লা হচ্ছে বিএনপির ঘাঁটি। আমাদের নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরী ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পরাজিত করে দিরাই-শাল্লায় নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। আমাদের দলের একক প্রার্থী নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সাথে বয়সের ভারে নতজানু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মিণী জয়া সেনগুপ্তার নির্বাচন জমে উঠবে না। আগে নির্বাচন জমে উঠত সুরঞ্জিত-নাছির দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মাঝে, এখন তো মাঠ খালি।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামছুল ইসলাম বলেন, আমি শহরের রাজনীতির দায়িত্বশীল পদে থাকলেও হাওরপারের সন্তান হিসেবে দিরাই-শাল্লার মানুষের সাথে রয়েছে আমার আত্মার সম্পর্ক। জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের হাত ধরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যক্রমে দিরাই-শাল্লা চষে বেড়িয়েছি, প্রিয় নেতার মৃত্যুর পর নেতার রেখে যাওয়ায় অসমাপ্ত কাজ করে যাওয়ার লক্ষ্যে গত উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম, অবশেষে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মনোনয়ন প্রত্যাহার করি। হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী শহিদ তালেবের ছোট ভাই অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম আরো বলেন, আমার বড় ভাই হারানোর বেদনা বুকে ধারণ করে ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতি করে আসছি, দলের দুঃসময়েও আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হইনি। দিরাই-শাল্লায় আওয়ামী লীগের দুর্গ গড়তে কাজ করে গেছি। আমি আশাবাদী, দলীয় মনোনয়ন পাব। জানাযায় দুর্গম জনপদ দিরাই ও শল্লা উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জ-২ আসন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আব্দুস সামাদ আজাদ এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেই থেকে একক আধিপত্য আওয়ামী লীগের।দলটির প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ আসনে ৮ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ৬ বারই নৌকা প্রতীকে জয় পান তিনি। তার মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে জয়ী হন তার স্ত্রী ড. জয়া সেন গুপ্তা।এ আসন থেকে মাত্র একবার করে সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। আগামী নির্বাচনেও আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।