এবং অবান্তিকা, সঞ্জয় দত্ত
______আমি আর অবান্তিকা________
সঞ্জয়দা তুমি ব্যস্ত না থাকলে বাসায় আসবে একটু,প্লিজ।আসবো,অবশ্যই আসবো।অবান্তিকা বয়সে চার বছরের ছোটো।ওর প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে।অবান্তিকা কে দেখলে আমার বুকের ভেতরে বৈশালী তোলপাড় শুরু হয়।গলা শুকায়।হাত নিসপিস করে ছুঁয়ে দিতে অবান্তিকার চুল।কিন্তু সম্পর্কের ওজনে তা আর কোনোদিন করা হয়ে উঠেনি।আজ সে-ই অবান্তিকা আমাকে বাসায় ডাকছে?!এ যে রীতিমতো আনন্দঘন পরিস্থিতি,আমার জন্য দুর্গাপূজা তিথি!নীল টি-শার্ট,চুলে কদূর তেল,কালো প্যান্ট,ফিটফাট হয়ে অবান্তিকার বাসার উদ্দেশ্যে ছুটলাম।পকেটে ফ্রুটফিল,হাতে হাফ লিটার কোক,কেক।কোক অবান্তিকার খুবই পছন্দের ড্রিংকস।এইতো সেদিন,কদমতলী বাসস্টপেজে দেখা হয়েছিলো অবান্তিকার সঙ্গে।দেখা মাত্রই,সঞ্জয়দা এক লিটার কোক প্লিজ।যদিও সেদিন পকেট ফাঁকা প্রায়।কিন্তু তবু,এমন হৃদয় ছুঁয়ে দেয়া কোনও মেয়ে কিছু আবদার করলে,নিজের গায়ের শার্ট খুলে দিতেও ইতস্তত করা যায়না।শত হোক!ভালোবাসা বলে কথা।
.
এক হৃদয় আশা দিয়ে এক লিটার ধরিয়ে দেই অবান্তিকার হাতে।সেদিন কী সুন্দর করে হেসেছিলো অবান্তিকা।ভেবেছিলাম অবান্তিকা হয়তো কোকের শেয়ার দেবে।কিন্তু না!ঢকঢক করে এক লিটার ফিনিশ।শেষ পর্যন্ত খালি কোকের বোতল নিয়েই বাড়ি ফিরি।বোতলে জল রেখে অবান্তিকাকে বোতলের জলে আঁকি।
.
বাসায় যাবার পর অবান্তিকা দরজা খোলে।নীল ফ্রক,ঠোঁটে লাল লিপস্টিক,কপালে কালো টিপ।ভালোবাসার জ্যান্ত দেবী যেন!ভেতরে ঢুকে অবশ্য আমার আগেকার সে অনুভূতি থাকেনি।নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল।বাসায় কেউ না থাকার ছুতোয় অবান্তিকা কিনা উজ্জ্বল কে ঘরে বসিয়ে রেখেছে!উজ্জ্বল কে আমি চিনি। বড় লোকের ছেলে।স্মার্ট।দেখতে লম্বাচওড়া।কিন্তু তাই বলে রাতে একটি ছেলে??!আমি নাহয় অবান্তিকার দূর সম্পর্কের আত্মীয় হই।কিন্তু উজ্জ্বল?এক পর্যায়ে অবান্তিকা সব খোলে বলে।উজ্জ্বল এর সঙ্গে অবান্তিকার বিয়ে পাকাপোক্ত।
.
এই কথা শোনার পর আমার ভেতরকার হৃদপিন্ড বেরিয়ে বাইরে আসতে চায়।শ্বাসতন্ত্র শ্বাসকার্য চালাতে অসম্মতি জানায়।অবান্তিকা আমার হাতে ধরে অনুরোধ করে,প্লিজ সঞ্জয়দা।তুমি থাকলে কেউ সন্দেহ করবে না।তার মানে অবান্তিকা আমাকে একরকম ব্যবহার করছে।তার চাহিদা মেটানোর কর্মে বাধাবিপত্তি আসলে তা সামাল দেয়ার জন্যে আমাকে পাহাড়াদার করে রাখছে।রাতে এক রুমে আমি।অন্য রুমে ওরা।পরদিন খুব সকালে ফিরে আসি।দশদিন ঠিকমতো খাওয়া,নাওয়া স্বাভাবিকভাবে চালাতে পারিনি।শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালের আজকের তারিখে,অবান্তিকার বিয়ে হয়।সেদিন সবার চোখ আড়াল করে অবান্তিকা আমার কাছে আসে।আমার ঘাড়ে হাত রাখে।আমার চোখে চোখ রাখে।সঞ্জয়দা তোমার কষ্ট হচ্ছে?নিজেকে তখন আর সামলে নিতে পারিনি।চোখ ফেটে দুই পরমানু হাইড্রোজন এক পরমাণু অক্সিজেন নাক ভেজায়।হঠাৎ লক্ষ্য করলাম উজ্জ্বল।আমি কষ্ট আড়াল করে এক পর্যায়ে বলেই ফেললুম আরে উজ্জ্বল দেখতে কত স্মার্ট,তোদের মানিয়েছে অবান্তিকা।অবান্তিকা হয়তো কিছু একটা বলতে চেয়েছিল।কিন্তু সেটা কী?আর জানা হয়নি।অবান্তিকা এখন অনেক দূরে।হৃদয় থেকে হৃদয়ের দূরত্ব তো এক আলোকবর্ষ সম হবেই অন্যদিকে দুই বাংলার এপারওপার।উজ্জ্বল কলকাতায় অবান্তিকাকে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছে।বিবিসির কলকাতা প্রতিনিধি উজ্জ্বল।চড়া বেতনের সাম্রাজ্যে অবান্তিকা হয়তো ভালোই আছে।কিন্তু আমি?কেমন আছি?ভালো আছি?হয়তো আছি হয়তো না।কিন্তু সে খবর আর কবে কে নিলো?
কবি ও প্রাবন্ধিক