জীবনের এ অংশটুকু যেন হঠাৎ করে চলে আসা এক বার্তাবিহীন খোলা চিঠি
ফারিন সুমাইয়া:
মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম, মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল। মোরা বিধাতার মত নির্ভয়, মোরা প্রকৃতির মত সচ্ছল ॥ তারুণ্য মানেই যেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এ কবিতার মতোই প্রাণময়। তারুণ্য না মানে কোনো বাধা, বিপত্তি আর শঙ্কা। জীবনের এ অংশটুকু যেন হঠাৎ করে চলে আসা এক বার্তাবিহীন খোলা চিঠি। সময়ের মায়াজালে বন্দি এ জীবনে তারুণ্যের ছোঁয়া বৈচিত্র্যতাই আনে না কেবল, সঙ্গে তাকে নিজের মাঝে ধারণ করার এক বিশাল চ্যালেঞ্জ কাজ করে। এ সময়ের কিশোরীদের নিয়ে লিখেছেন- ফারিন সুমাইয়া
এ সময়টিতে মনের কোণে যেমন নিজেকে নিয়ে তৈরি হয় নানা কল্পনার জগৎ তেমনি থাকে নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন, ভয় আর অসামান্য প্রবল ইচ্ছা শক্তি। মূলত জীবন চক্রের এ সময়টি প্রত্যক মানুষের জীবনে খুব গুরুতপূর্ণ একটি সময়। মূলত বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি এ সময়ের উন্মাদনার একদিকে যেমন ইন্দন দেয়, তেমনি তাকে কোণঠাসা করতে প্রস্তুত সর্বদা। এ সময়টিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তাই মেয়েদের। একদিকে নতুন করে সব কিছুর প্রতি যেমন ভালোবাসা তৈরি হয় তেমনি শরীরে আসা বেশ কিছু পরিবর্তন তাকে সেই উন্মাদনা থেকে নিয়ে যায় কয়েকশ’ মাইল দূরে। বয়সের এ অংশটুকু একদিকে যেমন খুব জটিল অন্যদিকে খুব সরল। জটিল তখনি হয়ে উঠে যখন আপনি এ সময়ের মাঝে চলমান মানুষটির কথা বুঝতে পারবেন না। আর সরল তখনি যখন তার না বলা কথাগুলো তার কাজের মাধ্যমে আপনার কাছে ধরা দেবে। তাই এ সময়ে মেয়েদের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ দুই দিকেই পরিবারের নজর দিতে হয়। তার সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটাতে হয় আর গল্পের মাধ্যমে তার থেকে তার মনের কথা বের করে আনতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই সে আপনার সঙ্গে তার সব কথা বলতে চাইবে না। তাই তার সঙ্গে আগে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ুন এর পরে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে আসুন। বয়সের এ সময়টিতে সব সময় তার নিজেকে মনে হবে হয়তো আমি সবার মাঝে শ্রেষ্ঠ নয়তো আমাকে সবার খুব বেশি অপছন্দ। তাই তার মাঝে থেকে এ দোটানা দূর করতে তাকে প্রাধান্য দিন আপনার প্রত্যেকটি কাজে। তার পছন্দের খাবার তৈরি কিংবা পছন্দের জায়গায় পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি তার মত নিয়ে করার চেষ্টা করুন। এতে করে তার যেমন পরিকল্পনা করার ক্ষমতা আসবে তেমনি তাকে বাস্তবায়ন তার মাধ্যমে যে সম্ভব তার দৃঢ বিশ্বাস জন্মাবে। কিশোরী থেকে আর এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার এ সময়টি আরেকটি কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে মনের পরিবর্তনের সঙ্গে দৈহিক বেশ পরিবর্তন আসে। তাই তাকে ঢিলে ঢালা পোশাকে অভ্যস্ত করুন। তবে তা যেন তার পছন্দ আর ফ্যাশনের সঙ্গে যুগোপযোগী হয় সেই দিকে অবশ্যই নজর রাখুন। খুব বেশি চকচকে রঙ নির্বাচন না করে হালকা কিংবা তাকে মানাচ্ছে এমন রঙ পছন্দ করুন। এতে সে যেমন খুশি হবে তেমনি তার মাঝেও তাকে পরিপাটি করে রাখার এক অভ্যাস গড়ে উঠবে। খাবারের বিষয়ে এ সময় সবার মাঝে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বাইরের খাবারের প্রতি ঝুঁকে পড়ে প্রায়শই এরা। ফলে নানা রোগ যেমন আক্রমণ করতে পারে খুব সহজে তেমনি মন খারাপের আরেকটি কারণ তৈরি হয়ে যায়। তাই যতটা সম্ভব বাসায় খাবার তৈরি করে তার মনের মতো করে পরিবেশনের চেষ্টা করুন। ঘরে চটপট কিছু খুব সহজেই যাতে তৈরি করতে পারেন সেই ব্যবস্থা রাখুন। এ সময়ের আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে অকারণে মন খারাপ। তাই এ অকারণে মন খারাপ দেখলে মেয়ের ওপর সন্দেহ করবেন না। তার সঙ্গে কথা বলে তাকে শান্ত করে তার থেকে কথা বের করে আনার চেষ্টা করুন। এতে করে সে আপনার সঙ্গে সব কথা ভাগাভাগি করতে আর দ্বিধা করবে না। পড়াশোনার বিষয়েও তাকে চাপ না দিয়ে তার যা পড়তে ভালো লাগে তাকে তাই পড়তে উৎসাহী করুন। নতুন নতুন লেখক, বই এদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। তাহলে একদিক থেকে যেমন পড়ার প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হবে তেমন বই থেকে সে শিখতে পারবে নানা অজানা বিষয় সম্পর্কে। নানা ধরনের প্রতিযোগিতায় তাকে অংশ গ্রহণ করতে উৎসাহী করুন। হার জিৎ ছাড়াও যে কেবল আনন্দের জন্য মানুষ বেঁচে থাকে এ বিষয়গুলো তাকে ছোট ছোট করে শিক্ষা দিতে থাকুন। এছাড়া প্রত্যেক মাসের বিশেষ দিনগুলোতে তার প্রতি একটু বেশি যত্ন নিন। এতে করে তার মাঝে যেমন পরিবার পরিজনের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে তেমনি নিজের মাঝে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে নতুনভাবে। এতে করে সে যেমন জীবনে প্রত্যেক স্তরে পাবে নিজেকে নতুন করে তেমনি এ ছোট ছোট বিষয়গুলো বিশাল বড় আকারে তাকে ছায়া দেবে ঠিক বটবৃক্ষের মতো।