কাজের খবর নেই, নামফলক লাগাতে ব্যস্ত মেয়র আরিফ

টাকা এখনো ছাড় হয়নি। টেন্ডার ড্রপ কিংবা ওয়ার্ক অর্ডার হয়নি। এরই মধ্যে তড়িঘড়ি করে শুরু হয়েছে সিলেট নগরীর শেখঘাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নির্মাণকাজ। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ফলক বসিয়ে এ কাজের উদ্বোধন করেন।

এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগের রাতে এই মসজিদের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন নিয়ে শেখঘাট এলাকায় তোলপাড় চলছে। এলাকার মানুষ এই ফলক উন্মোচন ভোট টানার ফলক উন্মোচন হিসেবে দাবি করেছেন। এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয় এলাকায়। এই বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর সিকন্দর আলী।

তবে তিনি দাবি করেছেন, এটা সিটি করপোরেশনের দাপ্তরিক বিষয়। তার একার নয়। তিনি এলাকার মানুষের স্বার্থ বিবেচনা করে ওই কাজের জন্য লবিং করেছিলেন। সিলেট নগরীর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শেখঘাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। বৃহত্তর শেখঘাটের বেশির মানুষ এই মসজিদটিতে নামাজ আদায় করেন। কিন্তু দিন দিন মানুষ বাড়ার কারণে দ্বিতলা বিশিষ্ট শেখঘাট জামে মসজিদেও মুসল্লিদের স্থান সংকুলান হচ্ছে না। এ কারণে সম্প্রতি সময়ে এই নতুন করে মসজিদ নির্মাণের তাগিদ দেখা দিয়েছে। প্রায় কোটি টাকার ব্যয়ে এই মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশন থেকে গ্রহণ করা হয়।

স্থানীয় ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সিকন্দর আলী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত করেন। তবে এটি তিনি অনেক আগে থেকে শুরু করলেও শেষ বেলায় এসে কাজের কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে।

এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা করা হয়েছে। তফশিল ঘোষণার ঠিক আগের দিন মেয়র হঠাৎ করে শেখঘাট জামে মসজিদে গিয়ে ওই ফলক উন্মোচন করে আসেন।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ফলকে লিখা রয়েছে- ‘শেখঘাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পুনঃনির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সিকন্দর আলী। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে গত তিন দিন ধরে শেখঘাট মসজিদে ফলক নির্মাণ করা হয় বলে জানিয়েছেন মুসল্লিরা।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, শেখঘাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের ইতিমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু টেন্ডার ড্রপ কিংবা ওয়ার্ক অর্ডার হয়নি। ওয়ার্ক অর্ডার হতে আরো অনেক দেরি হবে। এর মধ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন কতটুকু আইন সম্মত- এ প্রশ্নের জবাবে নূর আজিজুর রহমান বলেন, ওয়ার্ক অর্ডার না হওয়া পর্যন্ত ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করার নিয়ম নেই। এখন কী কারণে সেটি করা হয়েছে- সেটি তো সবাই জানেন বলে উল্লেখ করেন নুর আজিজুর রহমান।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ফলক উন্মোচনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ফলক উন্মোচন করা হয়েছে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জনগণের চাপাচাপিতে। তবে মসজিদের কাজ যেহেতু সে কারণে এই কাজ আটকাবে না। সবার আগে এই কাজ শুরু ও শেষও হবে। ইতিমধ্যে প্রায় এক কোটি টাকা রাজস্ব খাত থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

সিলেটের প্রথম মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জানিয়েছেন, কোনো উদ্যোগ না নিয়েই নির্মাণকাজের ফলক তফশিল ঘোষণার ঠিক আগের দিন উন্মোচন করা প্রতারণার সামিল। এটা মসজিদের সঙ্গে প্রতারণা। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় এমনটি করা হয়েছিল। স্থানীয় এলাকার মানুষ এতে ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণে বিষয়টি তিনি জেনেছেন।

তিনি বলেন, সিলেট নগরীতে গেল কয়েক দিনে অনেক কিছুই ঘটেছে। সেগুলোর খেসারত এই নগরের বাসিন্দাদের দিতে হবে। আর সবকিছু করা হয়েছে নির্বাচনকে সামনে রেখে। ভোট টানতে অত্যন্ত কৌশলে নগরবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে বলে দাবি তার।

এর আগে নগরীর চৌহাট্টা-নয়াসড় রাস্তা কাজ শেষ হওয়ার আগেই তড়িগড়ি করে উদ্বোধন করেন তিনি। এর পর চৌহাট্টাস্থ পাবলিক টয়লেট উদ্বোধন করা হলেও আজ পর্যন্ত তা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়নি। এনিয়ে নগরজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

নগরবাসী মনে করেছেন, নির্বাচনী তপসীল ঘোষনা হওয়ার পর লোক দেখানোর জন্যই তড়িগড়ি করে নগরীতে উন্নয়ন কর্মকান্ডের নামে শুধু নাম ফলক লাগানো হচ্ছে। আর এতে করে জনগনকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এ বিভাগের অন্যান্য