মাদকবিরোধী অভিযান এবং কিছু কথা: জাহাঙ্গীর আলম

 

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে কথিত বন্দুক যুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের নিহত হওয়াই কি মাদক নির্মূলের একমাত্র পন্থা? এ যেন মাথা ব্যথার উপশমের জন্য মাথাটাই কেটে ফেলা! মাদক একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যাধি। মাদক গ্রহণে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর প্রভাব পরে ও আসক্তি তৈরী করে। প্রতি বছর ২৬ জুন বিশ্ব মাদক মুক্ত দিবস সারা বিশ্বেই যথাযথ প্রতিপাদ্য বিষয়ের মাধ্যমে মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরীর মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। মাদক নির্মূলের জন্য চাই সামাজিক সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় আইনের বাধ্যবাধকতা। রাষ্ট্রকে অবৈধ মাদক উৎপাদন বিক্রি বন্ধে কঠোর হতে হবে। ধর্মীয় ও পারিবারিক অনুশাসন মাদক নির্মূলে ভুমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে অবৈধ মাদক পাচার যাতে বন্ধ করা যায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিশেষ করে ভারত ও মায়ানমার থেকে বাংলদেশে এসে যাতে অবৈধ মাদক ঢুকতে না পারে বর্ডার গার্ডদের সচেষ্ট থাকতে হবে। আমরা বিগত বছর গুলোতে দেখেছিলাম, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নির্মূলের জন্য ক্রসফায়ার নামক নাটক মঞ্চস্থ হতে। কাহিনীটি এরকম, সন্ত্রাসী ধরার পর রাতের আধাঁরে তাকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অস্ত্র উদ্ধারে বের হয়। পথে পূর্বে থেকেই অপেক্ষায় থাকা সন্ত্রাসী বাহিনীর সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক গুলি বিনিময় হয় এবং সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলে নিহত হয়। মজার ব্যাপার হলো, এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য বা সন্ত্রাসী বাহিনীর আর কোনো সদস্যকে নিহত হতে দেখা যায় না। নিহত সন্ত্রাসীরও শুধু বুকে-পিঠে গুলির চিহ্ন। কখনোই বুঝে আসতো না অভিযানের জন্য রাতই কেনো বেছে নেওয়া হতো। মাদক এবং সন্ত্রাস গোটা বিশ্বেরই অন্যতম প্রধান সমস্যা। আর কোনো দেশকে তো এরকম অদ্ভুত অভিযান চালাতে দেখা যায়না। আমদের অভিযানে হয় কি? অভিযান শেষে দেখা যায় চিহ্নিত গডফাদাররা বহাল তবিয়তেই আছেন। কিছু চুনোপুটি ধরলেই কি সমস্যার সমাধান হবে? রাগব বোয়ালদেরও ধরতে হবে। কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। মাদক নির্মূলের জন্য চলমান আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের বাড়ি থেকে ডেকে নেওয়া হয়। কখনো রাতের অন্ধকারে তাদের বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিংবা কখনো রাত্রিবেলা তাদের নিয়ে মাদক উদ্ধার অভিযানে বের হচ্ছে। ফলাফল মাদক ব্যবসায়ী কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত। আশংকার বিষয় হচ্ছে এতে ইতিমধ্যে কিছু নিরীহ লোকজনকে বন্দুকযুদ্ধের নামে খুন করা হচ্ছে। আরো আশংকার কারণ হচ্ছে সরকার দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, “এরকম মাদকবিরোধী বড় অভিযানে দুয়েকটা ভুল হতেই পারে।” দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে এরকম বক্তব্য কাম্য নয়। আলোচিত কক্সবাজারের টেকনাফে কাউন্সিলর ও যুবলীগের সভাপতি একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনা পুরো মাদকবিরোধী অভিযানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মাদক নির্মূল হোক এবং মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে কাউকে খুন করে যেমন মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না তেমন এই হত্যাকাণ্ড কখনোই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। কক্সবাজারের টেকনাফে কাউন্সিলর ও যুবলীগের সাবেক সভাপতি একরামুল হকের নিহত হওয়ার ঘটনা পুরো মাদকবিরোধী অভিযানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, “কেউ যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যায়ভাবে কাউকে অভিযানে নিয়ে হত্যাকাণ্ড করে থাকে তবে জুডিশিয়াল তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।” পারবেন নিহত নিরীহ ব্যক্তিকে জীবিত তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে? মাদক নির্মূল হোক এবং মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। কথিত বন্দুক যুদ্ধের নামে কাউকে খুন করে যেমন মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না তেমন এই হত্যাকাণ্ড কখনোই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।

এ বিভাগের অন্যান্য