আ.লীগের কাছে ১৯৪ আসন চায় শরিকরা একাদশ নির্বাচনে মহাজোটের আসন বণ্টন
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ১৯৪টি আসন চায় মহাজোট শরিকরা। আওয়ামী লীগের কাছে শরিকরা তাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, জোট শরিকদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির প্রতিফলন ঘটবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর। নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশ নেওয়া না নেওয়ার ওপর নির্ভর করবে জোটের চূড়ান্ত আসন বণ্টন। জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, ১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আদর্শিক জোট। আগামী সংসদ নির্বাচনেও ১৪ দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে অংশ নেবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের জোটটা নির্বাচনী। এই জোট আগামী নির্বাচনেও থাকবে কি থাকবে না, তা নির্ভর করবে তফসিল ঘোষণার পর। নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতসহ সব দল অংশ নিলে এক ধরনের জোট হবে; আর সবাই অংশ না নিলে আরেক ধরনের জোটের চিন্তাভাবনা রয়েছে আওয়ামী লীগে।
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের জোটশরিকরা বর্তমানের চেয়ে কম আসন পাবে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে বর্তমানের আসনগুলো ঠিক থাকবে, পাশাপাশি আরও দুয়েকটা আসন বেশি
পাবে জোট শরিকরা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব) ফারুক খান গতকাল সময়কে বলেন, ১৪-দলীয় জোট আগামী নির্বাচনেও ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেবে। তবে জোটের শরিকদের আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে জোটনেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচনী জোট গঠন হয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে। তফসিল ঘোষণার পর এটি বোঝা যাবে।
নির্বাচনী জোট গঠনের বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার আমাদের সময়কে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচন কী প্রক্রিয়ায় হবে, তা উপলব্ধি করছি। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হলে আমাদের দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানাব।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ সময়কে বলেন, জোট শরিকদের আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শরিক দলের নেতারা বিভিন্ন আসনে নির্বাচন করতে চান। সেখানে আমাদের দলীয় প্রার্থীও রয়েছে। তবে কে কোন আসনে নির্বাচন করবেনÑ এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নির্বাচনে আগে তিনি জোট শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে এটি চূড়ান্ত করবেন।
১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো নিজ নিজ দলীয় কৌশলে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। ভোটের আগে জোটের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও অনানুষ্ঠানিকভাবে শরিক দলগুলোকে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টি এবং ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে সব মিলিয়ে ১৯৪ আসন চান। এর মধ্যে জাতীয় পার্টি চায় ৭০, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (ইনু-শিরিন) ৩০, জাসদ (আম্বিয়া-প্রধান) ১৫, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১৫, ন্যাপ ২০, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ৬, গণতন্ত্রী পার্টি ১০, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) ২, সাম্যবাদী দল ৪, গণআজাদী লীগ ১০, তরিকত ফেডারেশন ১০, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ২টি। জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, দলটির শীর্ষ নেতারা আগামী নির্বাচনে ৭০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে আওয়ামী লীগকে।
তবে ১৪-দলীয় জোটের এমন কিছু শরিক দল আছে, যাদের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই। দলগুলো হলোÑ গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র এবং বাসদ। নিবন্ধন ছাড়া এমন দল পরিস্থিতি বুঝে আওয়ামী লীগের কাছে নির্বাচনের টিকিট চাইবে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক অসীত বরণ রায় আমাদের সময়কে বলেন, আমাদের যাদের নিবন্ধন নেই, তারাও জোটের কাছে মনোনয়ন চাইব। জোট যদি মনোনয়ন দেওয়ার আশ্বাস দেয়, তখন নিবন্ধন সময়ের ব্যাপারমাত্র।
জাতীয় সংসদের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, বর্তমান সংসদে বিভিন্ন আসনে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের ১৮ জন নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ৭, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ৬, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ২, জাতীয় পার্টির (জেপি) ২ এবং ন্যাপের একজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছেন। কয়েকজন অবশ্য নিজ দলের প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মহাজোটের শরিক সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ৩৪ জন সরাসরি নির্বাচিত এমপি রয়েছেন সংসদে।