আমাদের সমাজ ও ইফতারি সংস্কৃতি
মাওলানা রেজওয়ান আহমদ: ইফতার ইসলামের একটি ইবাদাত। কিন্তু এই ইবাদাতকে আমরা অনেক ক্ষেত্রে অভিশাপে পরিনত করতে যাচ্ছি। যেমন,মেয়ের বাড়ি বেশি ইফতার পাঠালে মেয়ের মুখ উজ্বল হবে এমন একটি প্রথা অামাদের সমাজে প্রচলিত।মেয়ে বিয়ে দেয়ার পর অামাদের সমাজে চিরচারিত নিয়মগুলো প্রায়-ই লক্ষ্য করা যায়। তা হলো
❏ রমযানে ইফতারি❏ মৌসূমি অাম-কাঠাল
❏ ঈদ উপলক্ষে হাদিয়া❏ সন্তানের অাকিকায় হাদিয়া
❏ বিভিন্ন উৎসবে মেয়ের বাবার বাড়ি হাদিয়া।
❏ বিয়ের সময় মামার বাড়ির অবদান – ইত্যাদি।
একজন মেয়ে সন্তানকে লালনপালন করে স্বামীর হাতে তুলে দেয়ার পরও বর্তমান সমাজের চিরচারিত নিয়ম পিতা-মাতার উপর জুলুম করছে।রমযান মাস যেন ইফতারি খাওয়ানোর প্রতিযোগিতা !ছেলের শাশুড়বাড়ি থেকে প্রথম রমযানে কি এলো? ইফতারি কতটুকু অাসলো?CNG দিয়ে এলো নাকি পিকাপ দিয়ে এলো?যদি না অাসে কোন দিন অাসবে? ইত্যাদি গুণগুণ অাওয়াজের মাধ্যমে একজন বিবাহিত মেয়েকে নির্যাতন করছে একটি সমাজ।
রমযান মাস এলে অনেক মেয়র পিতা-মাতাগণ খুবই পেরেশানিতে দিনগুলো অতিবাহিতকরেন।যেকোনো মূল্যে ইফতার পাঠাতে হবে না হয় মেয়ে মুখ দেখাতে পারবেনা ! এমন পরিস্থিতিতে কখনো ঋণ করে কখনো সুধের মাধ্যমে কখনো ঘরের বলদ বিক্রি করে।অনেক মহিলা মেয়ের বাড়ি ইফতারি পাঠানোর জন্যে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে!
যদি ছেলের পরিবারকে ইফতার খাওয়ালে হয়ে যেতো তো অালহামদুলিল্লাহ।সেক্ষেত্রে ছেলের গণগোষ্ঠী সবাইকে খুশি করার মতো ইফতার খুব ঘটা করে পাঠাতে হয়।অনেকের শ্বশুরবাড়ি হয়ত অনেক পয়সাওয়ালা৷ তাদের জন্যে এসব কিছুই না৷দরিদ্রদের অবস্থা কি হবে?অনেক গরিব বাবার মেয়ে অাছে কয়েকজন তিনি কি করবেন? এটা ভেবে দেখার বিষয়।
কিন্তু এই কুসংস্কার আমাদেরকে এমন বর্বর বানিয়েছে যে, যদি ইফতার না দেয়া হয় তাহলে অামরা মেয়েকে গালাগাল দেই নির্যাতন করি।
হযরত রাসূল (স:) বলেন: তোমরা মেয়েদের গালি দিওনা কেননা অামি মেয়েদের বাবা।
এইসমস্ত কুসংস্কারের জন্য অাবারও সেই জাহিলী যোগে চলে যাচ্ছি ।জাহেলি যুগে মেয়ে সন্তান জন্মনিলে বাবার মূখ কয়লার মতো কালো হয়ে যেতো! বর্তমানেও সকল পরিবার চায় যে অামার ছেলেসন্তান হোক! গর্ভবতী মায়েরও সেই কামনা থাকে।মেয়ে সন্তান জন্ম হোক এটা কেউ কামনা করেনা।অথচ একজন লজ্জাশীল নারী তার মা বাবার জন্য গর্ব , তার ভাইয়ের জন্য সম্মান, স্বামীর জন্য সম্পদ,তার সন্তানদের জন্য আদর্শ মা।
রোজা রাখার উদ্দেশ্য হলো পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরহেজগারি বা তাকওয়া বৃদ্ধি করা।রমজান মাস রহমত ও বরকত ও গোনাহ মাফির মাস। পবিত্র কুরঅান শরিফ নাজিল হয়েছে এ মাসে ।অাত্ম-সংযমের মাসে আমাদের প্রত্যেকের-ই উচিত বেশী বেশী কোরঅান তেলাওয়াতকরা আল্লাহর ইবাদত করা এবং রমজান মাসে রোযা রাখা ফরজ এটি ইসলাসের তৃতীয়স্তম্ভ।ইফতার করানোর বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ غَيْرَ أَنَّهُ لا يَنْقُصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْئًا“যদি কেউ কোনো রোযাদারকে ইফতার করায়, তাহলে সে উক্ত রোযাদারের সমপরিমাণসাওয়াব লাভ করবে, তবে এতে উক্ত রোযাদারের সাওয়াব একটুও কমবে না।”( তিরমিযী )
রাসুলুল্লাহ (স.) অন্য হাদিসে বলেন: যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে প্রতিদান স্বরুপ তার গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং তাকে জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি দেয়া হবে।
ইফতারি সহ সমাজে চিরচারিত নিয়মগুলো একতরফা ভাবে মেয়ের পিতা-মাতা পালন করতে হবে এটা কেমন কথা?
ইফতার করানো সুন্নত সেই সুন্নতের উপর অামল করা কি শুধু মেয়ের পিতা-মাতার উপর ?
অার ছেলের পিতা-মাতারা কি শুধু খাবেন?
এমন রীতি ইসলাম কখনো সমর্থন করেনা। ইসলামের কোথাও মেয়ের শশুড় বাড়িতে ইফতার পাঠানো বাধ্যতামূলক বলে উল্লেখ নেই।
আমাদের সমাজের ঐসব কু-প্রথার বীজ এমন ভাবে রোপণ হয়েছে যার বেড়াজাল থেকেমুক্ত হতে হলেপ্রত্যেক বিবাহিত পুরুষদের এগি অাসতে হবে।ছেলে পক্ষ থেকে মেয়ে পক্ষকে জানিয়ে দিতে হবে, “ইফতারির এই সংস্কৃতি বন্ধ করুন। এটি একটি কুসংস্কার৷সামাজের প্রতিটি মানুষকে-ই সোচ্চার হতে হবে।
আর সেটা শুরু করতে হবে নিজপরিবার, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-পড়শীর মধ্য দিয়ে।
লেখক,সৌদি আরব প্রবাসী।