স্বাগতম মাহে রমজান

স্বাগতম মাহে রমজান। প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় আজ থেকে শুরু হলো পবিত্র রমজান মাস।শক্রবার দেশের আকাশে চাঁদ দেখার খবর জানার পরই রোজার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এশার পর আদায় করেন তারাবির নামাজ। শেষ রাতে সাহরি খাওয়ার মধ্য দিয়েই মূলত শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার প্রথম দিনের আনুষ্ঠানিকতা।ইবাদতের মহৎ রমজান মাস ইবাদতের মহৎ মৌসুম। এ মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা নেক আমলের সওয়াব সীমাহীন বৃদ্ধি করে দেন। দান করেন অফুরন্ত কল্যাণ। উন্মুক্ত করেন নেক কাজে উৎসাহী ব্যক্তির জন্যকল্যাণের সব দ্বার। এটি কোরআন নাজিলের মাস; কল্যাণ ও বরকতের মাস; পুরস্কার ও দানের মাস। আল্লাহ বলেন, ‘রমজান মাস, যাতে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কোরআন, যা বিশ্ব মানবের জন্য হেদায়েত, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী।’ (সূরা আল বাকারা : ১৮৫)।
এ মাস রহমত, মাগফিরাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। যার প্রথমে রয়েছে রহমত, মাঝে রয়েছে মাগফিরাত এবং শেষে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এ মাসের মর্যাদা ও ফজিলতের ব্যাপারে এসেছে অনেক হাদিস, যেমন এসেছে অনেক বাণী। যেমনÑ সহিহ বোখারি ও মুসলিমে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়; জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।’ (বোখারি : ১৮৯৯; মুসলিম : ১০৭৯)।
এ মাসে জান্নাতের দ্বারগুলো খুলে দেয়া হয় অধিক হারে নেক আমল করার জন্য এবং আমলকারীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য। আর জাহান্নামের দ্বারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় ঈমানদারদের গোনাহ কম অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে। শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, যাতে সে অন্য মাসের মতো এ মোবারক মাসে মানুষকে পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যেতে না পারে। আল্লাহ তায়ালা মাহে রমজানের এ প্রতিদানের মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের ওপর তিন দিক থেকে করুণা ও মেহেরবানি করেছেন।
প্রথমত, আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য এ রমজানে নেক আমল করার এমন ব্যবস্থা করেছেন, যা তাদের মর্যাদা বুলন্দ করাসহ তাদের গোনাহ মাফের কারণ হবে। যদি তিনি তাদের জন্য এ ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে তারা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করত না। সুতরাং রাসুলদের কাছে ওহি প্রেরণ ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। এজন্যই যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করার ব্যবস্থা করেন, তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা অসন্তুষ্ট হন এবং তাদের কাজকে শিরকের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নাকি তাদের জন্য কোনো শরিক বা অংশীদার ব্যক্তি আছে, যারা তাদের জন্য কোনো দ্বীন বা জীবনাদর্শ চালু করেছে, যা আল্লাহ মোটেই অনুমতি দেননি।’ (সূরা আশ-শুরা : ২১)।
দ্বিতীয়ত, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের এ রমজানে নেক আমল করার তৌফিক দান করেন। অথচ অধিকাংশ মানুষই এ নেক আমলকে পরিত্যাগ করে থাকে। যদি আল্লাহর সাহায্য ও মেহেরবানি তাদের প্রতি না থাকত, তবে তারা নেক আমলের সম্মান দিতে পারত না। সুতরাং এটি সম্পূর্ণই আল্লাহর দান এবং তিনিই পারেন কাউকে নেয়ামতের খোঁটা দিতে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা আপনার প্রতি (ওহে নবী (সা.) ইসলাম গ্রহণের এহসান বা অনুগ্রহ প্রকাশ করছে। আপনি বলে দিন, তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমার প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করো না; বরং আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তিনি মেহেরবানি করে তোমাদের ঈমানের পথে পরিচালিত করেছেন। যদি তোমরা তোমাদের দাবিতে সত্যবাদী হও।’ (সূরা আল হুজুরাত : ১৭)।
তৃতীয়ত, আল্লাহ তায়ালা এ রমজানে অনেক প্রতিদান দিয়ে মেহেরবানি করেছেন। প্রতিটি নেক আমল ১০ থেকে ৭০০ বা তার চেয়েও বেশি গুণে বর্ধিত হবে। সুতরাং নেক আমল করে অনেক সওয়াব অর্জন করা এটা আল্লাহ তায়ালারই করুণা ও মেহেরবানি; আর যাবতীয় প্রশংসা সব সৃষ্টির রব আল্লাহর জন্যই।

এ বিভাগের অন্যান্য