চ্যালেঞ্জের মুখে এবার আর্জেন্টিনা কাঁপাতে আসছে বিশ্বকাপ
ফেবারিট হলেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে এবার আর্জেন্টিনা। শেষ তিনটি ফাইনালেই যে হেরেছে ম্যারাডোনা-বাতিস্তুতার উত্তরসূরীরা।
চলছে ক্ষণগণনা। বাকি রয়েছে আর মাত্র ৫০ দিন। আগামী ১৪ জুন পর্দা উঠবে ২০১৮ বিশ্বকাপের।
ফুটবল বিশ্বকাপ মানেই অন্যরকম এক উন্মাদনা! যতই এগিয়ে আসছে বিশ্বকাপ ততই বাড়ছে তার উত্তাপ। এবারের আয়োজক রাশিয়া। ইতিহাসের প্রথমবারের মতো পূর্ব ইউরোপে শুরু হতে চলেছে বিশ্বকাপের ২১তম আসর। ছয় মহাদেশের ২০৯ দলের ৮৬৪ ম্যাচের লড়াই শেষে চূড়ান্ত হয়েছে স্বপ্নের বিশ্বকাপের ৩২ প্রতিনিধি। স্বাগতিক রাশিয়া আর সৌদি আরবের ম্যাচ দিয়ে শুরু হবে লড়াই। ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফুটবলের মহোৎসবে মাঠ মাতাবেন বিশ্বসেরা তারকারা। কিন্তু তার আগে থেকেই বিশ্বকাপজ্বরে কাঁপছে পুরো বিশ্ব।
রাশিয়া বিশ্বকাপে ফেবারিটের তকমাটা গায়ে মাখানো ব্রাজিলের। ল্যাটিন আমেরিকা থেকে সবার আগেই ২০১৮ বিশ্বকাপের টিকিট কাটে পেলে-রোনালদোর উত্তরসূরীরা। নিজের দল নিয়ে এতোটাই আত্মবিশ্বাসী যে রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর প্রায় মাস তিনেক আগেই দলের ২৩ সদস্যের মধ্যে ১৫ জনের নাম ঘোষণা করে দেন ব্রাজিলের কোচ তিতে! ২০১৪ বিশ্বকাপে নিজেদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে সেলেসাওরা যে এবার মরিয়া!
এবারের বিশ্বকাপে হট ফেভারিট ব্রাজিল। ছবি: সংগৃহীত
পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সাথে এবার জার্মানি, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডের মতো দলগুলোও ফেবারিটের তালিকায়। ব্রাজিল বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি গত বছর ফিফা কনফেডারেশন কাপেও বাজিমাত করেছে। চিলিকে হারিয়ে তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়েই শিরোপা উৎসব করে জোয়াকিম লোর দল।
ফেবারিট হলেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে এবার আর্জেন্টিনা। শেষ তিনটি ফাইনালেই যে হেরেছে ম্যারাডোনা-বাতিস্তুতার উত্তরসূরীরা। কোপা-বিশ্বকাপ-কোপার ফাইনাল হারের পর রীতিমতো ঝড় বয়ে গেছিল আর্জেন্টিনার। শুধু কী তাই? রাশিয়া বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও তো সমর্থকদের চরম হতাশ করেছিল হোর্হে সাম্পাওলির দল। যদিওবা ইকুয়েডরের বিপক্ষে নাটকীয় জয়ে রাশিয়ার টিকিট কাটতে সক্ষম হয় আর্জেন্টিনা। তবে বারবার স্বপ্ন জাগিয়েও দলকে শিরোপা জেতাতে ব্যর্থ হওয়া মেসি-অ্যাগুয়েরোরা কী পারবে এবার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে? সেই আশাতেই আবার বুক বাধছে আর্জেন্টাইন সমর্থকরা।
অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের মিশেল ফ্রান্স দলটাও এবার দুর্বার। গত বছর ইউরোর ফাইনালে পর্তুগালের কাছে হারলেও বাছাইপর্বে দুর্দান্ত খেলে রাশিয়ায় আসা অন্য দলগুলোর জন্য দারুণ একটা ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা। তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে গড়া দল ইংল্যান্ডও এবার দুর্দান্ত। এছাড়া ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরোজয়ী স্পেনও হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েই বিমান ধরবে রাশিয়ার।
রাশিয়া মাতাতে প্রস্তুত মেসি-রোনালদো-সুয়ারেজ কিংবা বেল-লেভানডোস্কির মতো তারকারা। প্রস্তুত হচ্ছেন নেইমারও। তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারদের মধ্যে এবার আলাদা করেই নজর কাড়বেন মোহামদ সালাহ, হ্যারি কেন, ফিলিপে কোটিনহো, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, কিলিয়ান এমবাপ্পে, পল পগবা, অ্যান্থনি গ্রিজম্যান, কেভিন ডি ব্রুইন কিংবা ইডেন হ্যাজার্ডরা।
তবে ফুটবলপ্রেমীরা নিশ্চিত মিস করবে ইতালিকে। ৬০ বছরের মধ্যে এই প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব থেকেই বাদ পড়ে গেল চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। জিয়ানলুইজি বুফনদের মিস করাটাই তো স্বাভাবিক! ইউরোপের আরেক পরাশক্তি হল্যান্ডও নেই এবার। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের বাধা পেরোতে পারেনি দক্ষিণ আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের আসর কোপা আমেরিকার টানা দুবারের চ্যাম্পিয়ন চিলিও।
১৯৫৮ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে খেলতে পারছে না ইতালি। ছবি : সংগৃহীত
তবে রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে কিন্তু রাজনৈতিক আর কূটনৈতিক খেলাতেও মেতে ওঠেছে বেশ কয়েকটি দেশ। যাদের মধ্যে রয়েছে-ব্রিটেন, আইসল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান। ইতোমধ্যেই রাশিয়া বিশ্বকাপের বয়কটের হুমকি দিয়েছে তারা। এই ছয়টি দেশ বিশ্বকাপে অংশ নিলেও সেদেশের কর্মকর্তারা বিশ্বকাপে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। যুক্তরাজ্য মূলত কূটনৈতিক কারণে বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। আর বাকি দেশগুলো যুক্তরাজ্যের পাশে দাঁড়িয়েছে আঞ্চলিক মিত্র হিসেবে।
যতই এগিয়ে আসছে বিশ্বকাপ ততই আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। কখন, কোথায় অনুষ্ঠিত হবে সেই ম্যাচগুলো। এসব জানতেও আগ্রহের কমতি নেই মানুষের। বিশ্বকাপের ৬৪টি ম্যাচ হবে রাশিয়ার ১১টি ভেন্যুর ১২টি স্টেডিয়ামে। প্রায় এক মাসের এই আসরের ফাইনাল হবে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে।