বর্ষবরণ উৎসবে সিলেটে ভিন্নরকম আয়োজন: মবরুর আহমদ সাজু :
বছর ঘুরে আবারো এসেছে বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখ। আগামীকাল শনিবার আবহমান বাংলা ও বাঙালির সেই সুবর্ণ দিন। বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পয়লা বৈশাখ এ পুরাতন ও জীর্ণতাকে অতিক্রম করে নতুন ও পরিবর্তনকে আহবান জানানোর মধ্যে দিয়ে শুরু হবে ১৪২৫ বঙ্গাব্দ। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আগামীকাল ১ বৈশাখ সিলেটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে বাঙালি জাতির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ বরণে প্রস্তুত সিলেট। বাঙালি ঐতিহ্য উপস্থাপনের মধ্যদিয়ে প্রতিবারের মতো এবারো বর্ষবরণের জন্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাঙালিয়ানা সাজে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণের সকল আয়োজন ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এমসি কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ক্বীনব্রিজ পার্শ্ববর্তী সুরমা তীরসহ বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজনসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে থাকবে পান্তা ইলিশের পাশাপাশি থাকবে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা।এদিকে, বৈশাখ বরণে সিলেট নগরের শপিংমল, বিপনীবিতান ও ফুটপাতে কেনাকাটায় ব্যস্ত সর্বস্তরের মানুষ। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে মাটি আর বেতের তৈরী হরেক রকমের পণ্যের কারিগররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৃৎশিল্পীরা সারা বছরের ব্যবসায়িক মন্দা কাটিয়ে লাভের আশায় পসরা সাজিয়ে বসেছে বিভিন্ন স্থানে। বিশেষ করে নগরের প্রাণকেন্দ্র সুরমার তীরে ক্বীনব্রিজের পাশে চলছে জমজমাট হাট। বিভিন্ন ধরণের বৈশাখি অনুসঙ্গ তৈরীর পর সেখানে রঙ তুলি দিয়ে আল্পনাও আঁকা হচ্ছে। সিলেট জেলা প্রশাসন বাংলা বছরকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ-সন্ধ্যা। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গন থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা, কেন্দ্রীয় কারাগার, সকল হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবার পরিবেশন, বাগবাড়ি ও রায়নগরে শিশু পরিবারের শিশুদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কারাবন্দীদের পরিবেশনায় সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভাগীয় গ্রন্থাগার প্রাঙ্গনে রচনা প্রতিযোগিতা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গনে ইমামদের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা। জেলা শিল্পকলা একাডেমি নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। । উৎসব প্রাঙ্গণ অপরূপ সাজে সজ্জিত করেছে একাডেমীর চরুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ওই দিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে চলবে এই বর্ণাঢ্য উৎসবটি। মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন ও ঢাকের বাদ্যের মধ্য দিয়ে মাঙ্গলিক শুভ উদ্বোধন হবে বর্ষবরণ উৎসবের। দিনব্যাপী পরিবেশিত হবে বৈশাখের গান, লোকসংগীত, কাঠিনৃত্য, ঝুমুরনৃত্য, লোকনৃত্য, লাঠি খেলা, একক ও সম্মেলক সংগীত, বৃন্দ আবৃত্তি, জারিগান, ধামাইল, মণিপুরীনৃত্য, আবৃত্তি, বাউলগান এবং চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা। সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে সিলেটে সুরমা নদীর তীরে ১৫ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে। এছাড়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সিসিকের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো গেছে। পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায় শোভাযাত্রার মাধ্যমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হবে। সারদা হল থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হবে। ওই দিন বিকেলে সারদা হল সংলগ্ন সুরমা নদীর তীরে শুরু হবে পাঁচ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৈশাখী মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়াও বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ উদযাপন উপলক্ষে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে সিটি করপোরেশন। শ্রুতি ঃ শ্রুতির শতকন্ঠে বর্ষবরণ উৎসব নগরীর সুবিদবাজারস্থ ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। শ্রুতির দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে, আবৃত্তি, সংগীত, নৃত্য, রং-তুলিতে বর্ষবরণ ও বৈশাখীমেলা। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অনুষ্ঠান আয়োজনের সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত। সমাজসেবা কার্যালয় ঃ সিলেট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উদ্যোগে বাগবাড়িস্থ সমাজকল্যাণ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানসূচির মধ্যে রয়েছে-সকাল ৭টায় বর্ণাঢ্য র্যালি, সকাল সাড়ে ৭টায় শিশু পরিবারের সাংস্কৃতিক দল ও সিলেটের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন-সংগীত শিল্পীবৃন্দের অংশ গ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।