সিলেটের ৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নে এগিয়ে যারা
আসামী সংসদ নির্বাচনে সিলেট জেলার ৬টি আসনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মনোনয়ন চাইবেন প্রভাবশালী ২০ জন নেতা। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছেন সিলেটের শীর্ষ নেতারা। তাঁরা বলছেন, হাইকমান্ড যাকে চূড়ান্ত প্রার্থী নির্ধারণ করবে তৃণমূল বিএনপি থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতারা সেই প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। তবে, দলের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, দুটি আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী দেখা যেতে পারে। ওই সূত্রের মতে, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই এমনটি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবশ্য সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-১ আসনে জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী হবেন বলে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
সিলেট-১: সিলেট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন তিনজন প্রভাবশালী নেতা। এঁরা হলেন, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এম.এ হক এবং চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। বিএনপির একটি পক্ষ দাবি করেছে, বিএনপির সকল পদ থেকে অবসরগ্রহণকারী বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী বীরবিক্রমকেও এ আসনে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। গত সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শমসের মবিন চৌধুরী। পরে আদালত তাঁকে জামিনে মুক্তি দেন। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর তিনি বিএনপির সকল পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং রাজনীতি থেকে অবসর নেন। তিনি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর চাকরি মেয়াদ শেষে করে ২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপিতে যোগ দেন শমসের মবিন চৌধুরী। সে সময় তিনি খালেদা জিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিলে শমসের মবিনকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়। এরপর থেকে গুটা সিলেটে তাঁকে নিয়ে আলোচনা হয়। সর্বমহলে আলোচনা হয় তিনিই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে সিলেট-১ আসনে নির্বাচন করবেন। আর খন্দকার আবদুল মুক্তাদির নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। দেশের গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-১ আসনে তিনি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় তাঁর নির্বাচন করা হয়নি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে খন্দকার মুক্তাদির তাঁর তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
সিলেট-২: বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ (একাংশ) নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসনে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও বিএনপির নিখোঁজ নেতা, সাবেক এমপি এম. ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনাকে প্রার্থী করা হবে বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। দলীয় সূত্র মতে, এম. ইলিয়াস আলী ফিরে না আসলে ওই আসনে লুনাকেই প্রার্থী দেখতে চান নেতারা। এম. ইলয়াস আলীর সম্মানে এ আসনে বিএনপির অন্য কোনো নেতা প্রার্থী হতে আগ্রহী নন বলেও জানিয়েছেন শীর্ষ নেতারা।
সিলেট-৩: দক্ষিণ সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ (একাংশ) নিয়ে গঠিত এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন চারজন নেতা। এঁরা হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল গফ্ফার, বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার এমএ সালাম।
সিলেট-৪: গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসনে মনোনয়ন চাইতে পারেন ৪ জন প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন না পেলে এ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী দেখা যেতে পারে বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নুরুল হক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবদুল হাকিম চৌধুরী।
সিলেট-৫: জকিগঞ্জ-কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৫ আসনে তিনজন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী। এঁরা হলেন, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি আবদুল কাহির চৌধুরী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব পলাতক হারিছ চৌধুরীর ভাই, জেলা বিএনপির নেতা কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন।
সিলেট-৬: গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৬ আসনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম এবং জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ।
আগামী সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এম.এ হক বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সবশ্রেণির নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে মাটে নেমেছেন। তিনি বলেন, সিলেট-১ আসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে জিয়া পরিবারের কাউকে প্রার্থী করা হোক তা আমরা মনেপ্রাণে চাই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দল যদি আমাকে যোগ্য মনে করে, নির্বাচনের অনুমতি দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করব। কোনো আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার আশঙ্কা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার প্রার্থীর বিপরিতে কেউ নির্বাচন করবেন না। সবাই দলের মনোনীত প্রার্থীর হয়ে কাজ করবেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, সংসদ নির্বাচনে সিংহভাগ আসনে দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে এখন থেকেই আমরা কাজ শুরু করেছি। তিনি বলেন, বিএনপি অত্যন্ত সুশৃঙ্খল দল। এই দলে বিদ্রোহের সুযোগ নেই। নেত্রীর সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো আসনে প্রার্থী হলে হাইকমান্ড সাথে সাথে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলেও দল থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দলের মনোনয়ন পেলে আগামী সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে তিনি প্রার্থী হতে আগ্রহী।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিলেট-১ আসনে জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী হবেন। তবে তারেকপত্নী ডা. জোবাইদা রহমান এ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন।
যদি জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী না হন, তাহলে এ আসনে দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী বীরবিক্রমকেও দল মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।