চোখ মেলে তাকালে:মাহমুদ
তার কণ্ঠের মাদকতায় শ্রোতা-ভক্তরা যেমনি মুগ্ধতার সাগরে ভাসে, তার চাহনিতে তেমনই ব্যাকুল হয়ে ওঠে দর্শকের মন। খুব অল্প সময়েই বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে ইতিমধ্যেই গড়ে নিয়েছেন নিজের শক্ত অবস্থান। বলছি, তরুণ জন্মের প্রতিভাময়ী কণ্ঠশিল্পী ঐশীর কথা। যার নামের অর্থই ঈশ্বরীয় বা ঊর্ধ্বগামী। একের পর এক নতুন গানে ভক্তশ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। ফোক গান কিংবা আধুনিক সব গানই যেন তিনি পরম মমতা দিয়ে গেয়ে যান। অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন ২০১৬ সালের চ্যানেল আই-সিনে মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের ‘পপুলার চয়েসে’ শ্রেষ্ঠ নবাগত শিল্পীর পুরস্কার। এ ছাড়া পেয়েছেন নানা পুরস্কার। যদিও পুরস্কার পাওয়ার চেয়ে মনে রাখার মতো কিছু গান করতে চান ঐশী। শিল্পী হিসেবে তার লক্ষ্য, মানুষের মুখে মুখে যেন ফেরে তার গান। দর্শকের আরও কাছাকাছি যাওয়ার জন্য ইদানীং দেশে-বিদেশে স্টেজ পারফর্মে ব্যস্ত ঐশী। গাজীপুর, কুষ্টিয়া, টাঙ্গাইল, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা ও নরসিংদী- চষে বেড়াচ্ছেন দেশের বিভিন্ন জেলায় কনসার্টে শ্রোতাদের সামনে গান গাইতে।
সম্প্রতি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে কলকাতা মাতিয়ে এলেন সঙ্গীতশিল্পী ঐশী। ভারতের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস (এসভিএফ) কলকাতায় প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে লাইভ মিউজিক্যাল কনসার্টের। ‘গান পিরিতি’ নামের এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে জেমস ও ঐশী। নিজের জনপ্রিয় মৌলিক, ফোকসহ মোট ৮টি গান পরিবেশন করেন সেই অনুষ্ঠানে। নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবতী ভাবতেই পারেন যখন বাংলাদেশের প্রতিনিধত্ব করেন। এ ছাড়া কলকাতা থেকে অংশ নিয়েছিলেন অনুপম রায়, ইমন চক্রবর্তী, জনপ্রিয় ব্যান্ড ফসিলস। যুক্তরাজ্য থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসেন শাহানা বাজপেয়ি। এর আগে ভারতে অনেকবারই কনসার্টে অংশ নিয়েছেন জেমস। অন্যদিকে কয়েকবার গেলেও এবারই প্রথম সেখানে এ ধরনের সরাসরি গানের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ঐশী। জেমস নিজের জনপ্রিয় গানগুলোই কনসার্টে পরিবেশন করেন। আর ঐশী গেয়েছেন নিজের মৌলিক গানগুলো। পাশাপাশি প্রচলিত কিছু বাংলা ফোক গানও গান তিনি।
এই তো কয়েক দিন আগে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আয়োজনে ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ৭১ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত কনসার্টে অংশ নিতে গিয়েছিলেন কক্সবাজার। সমুদ্র ভীষণ প্রিয় তার। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সমুদ্রে নামা হয়নি। সে আফসোস রয়েই গেল। কয়েক দিন পরে আবার যাবেন সমুদ্রে। সমুদ্রের কাছ থেকে নিয়ে আসবেন আরও কিছু গান।
কনসার্ট নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকায় ইদানীং নতুন সিঙ্গেলস প্রকাশে সময় নিচ্ছেন ঐশী। তবে তার গাওয়া বেশ কিছু প্লেব্যাক মুক্তির অপেক্ষায়। ‘গহীন বালুচর’ সিনেমায় প্লেব্যাক করার পর আরও কিছু বাংলা চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ঐশী। এর মধ্যে ফরিদুর রেজা সাগরের উপন্যাস অবলম্বনে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘আলতা বানু’ সিনেমায় ‘জীবন মানে’ শিরোনামে। এই গানটি নিয়ে ভীষণ আশাবাদী ঐশী।
সব মিলিয়ে বর্তমানে ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন ঐশী। এত কিছুর পরও তিনি পরিশ্রমের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে উদার মানসিকতা এবং শিল্পের প্রতি অসীম মায়ায়। তার ইচ্ছা ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা। তাই শিল্পীজীবনের পাশাপাশি পড়াশোনা নিয়েও ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে।
ঐশীর গায়কী শ্রোতাদের হৃদয়ে কতটুকু জয় করতে সক্ষম হয়েছে তার সাক্ষ্য বহন করছে ইউটিউব। তার গাওয়া ‘দিল কি দয়া হয় না’ গানটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে ইউটিউবে। ইতিমধ্যেই শুধু এই গানটির শ্রোতাসংখ্যা প্রায় ৪০ লাখের। শুধু এই গান নয়, তার প্রতিটি গানই দর্শকশ্রোতারা যেন বারবার দেখেন, শোনেন।
ঐশীর এগিয়ে যাওয়ার পেছনে তাকে ভীষণভাবে সহযোগিতা করছেন তার মা-বাবা। মা-বাবার পরামর্শ, যত্ন, মমতায় গুছিয়ে নিচ্ছেন নিজের ক্যারিয়ার। ছবি আঁকা ও আবৃত্তি করতে ভালো লাগে ঐশীর। যখন একা থাকেন নিজের মনে কবিতাটায় সুর বসান গানের মতো করে। বহুগুণে গুণান্বিতা এই কণ্ঠশিল্পীর চোখের চাহনিতে যেন অন্য এক মায়ায় পড়ে যান দর্শকশ্রোতারা সবসময়। তার অদ্ভুত সুন্দর কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে যান দর্শক। একের পর এক গান গেয়ে দর্শকের মনে গেঁথে যাক আজীবন।