লোকে জেনে গিয়েছে তাঁর গোপন কোন কথা?
কমবেশি কিছু গোপন কথা আমাদের সকলেরই আছে। কথাগুলো অন্য কেউ জেনে গেলে আমরা সমস্যায় পড়বো বা সামাজিক ভাবে হেয় হতে পারি অথবা আমার দুর্বলতার সুযোগ কেউ নেবে বলেই সেগুলো গোপন কথা। এটা জরুরী না যে কোন কথা গোপন করা মানেই প্রতারণা করা বা সেটা খুব খারাপ কিছু। অনেক সময়ে আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা চাওয়া-পাওয়ার বিষয়গুলোও গোপন রাখতে চাই নানান সামাজিক-পারিবারিক সমস্যার কারণে।
এতে অসুবিধা কিছুই নেই, আপনি চাইতেই পারেন নিজের ব্যক্তিগত বিষয় গোপন রাখতে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে তখন, যখন এই আড়াল করে রাখা কথাগুলোই জেনে যায় অন্য কেউ। এমন কেউ, যিনি কিনা ব্যাপারটিকে বদনামে পরিণত করতে চান। কিছু মানুষ জগতে এমন আছেনই, যাদের কাজকর্ম কেবলই অন্যের জীবনের ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো নিয়ে। অন্যদিকে, কখনো ক্ষণিকের দুর্বলতায় আমরা নিজেরাও হয়তো কোন গোপন কথা বলে ফেলি কাউকে। আর কাছের মানুষকে বিশ্বাস করে প্রতারিত হবার ঘটনা তো অহরহ ঘটে। প্রায়ই দেখা যায় আমাদের কাছের মানুষেরাই সবচাইতে বেশি বিশ্বাস ভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।
কারণ যেটাই হোক, এখন তো গোপনে রাখতে চাওয়া বিষয়টি জেনে গিয়েছে অন্য কেউ- এই ব্যাপারটি কীভাবে মোকাবেলা করবেন? চলুন, আজকের ফিচারে আমরা কথা বলি এই বিচিত্র, কিন্তু প্রত্যেকের জীবনেই উপস্থিত সমস্যাটি নিয়ে।
মন শান্তি রাখতে চেষ্টা করুন
এমন একটি ঘটনা ঘটে গেলে, অর্থাৎ খুব গোপন একটি ব্যাপার ফাঁস হয়ে গেলে যে কেউই চট করে আতংকিত ও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। মাথার মাঝে অনেক প্রশ্ন ঘোরে, যেমন- কীভাবে জানলো বা এখন কী হবে! সেই মুহূর্তে কী করবেন সেটা বুঝতে উঠতে পারেন না অনেকেই। কেউ কেউ ভয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েন, আবার কেউ রেগে যান। যদিও দুটির একটিও ঠিক নয়। নিজের কোন দুর্বলতা আরেকজনের হাতে চলে যাবার বিষয়টি নিঃসন্দেহে একটি বিপদ। কিন্তু আতংকিত বা উত্তেজিত হয়ে এর সমাধান মিলবে না। বরং মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবতে বসুন যে এরপর সে বা তারা কী কী করতে পারে। অর্থাৎ কীভাবে আপনার ক্ষতি করতে পারে সেটা খুঁজে বের করুন এবং সেটা প্রতিহত করার চেষ্টা করুন।
সম্পর্ক ভাঙাবেন না কিছুতেই
আমাদের কোন গোপন কথা অন্য কেউ জেনে গেলে তাঁর সাথে সম্পর্ক ভাঙার ভুলটি কিন্তু করা যাবে না কিছুতেই। দূরে থাকার অভিপ্রায়ে সম্পর্ক নষ্ট করলে উপকারের চাইতে তখন ক্ষতি হবে বেশি। স্বাভাবিক বা ভালো সম্পর্ক থাকলে চক্ষুলজ্জার কারণে হলেও তিনি কথাগুলো চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিতে দুবার ভাববেন। অন্যদিকে সম্পর্ক যত খারাপ হবে, ততই মহা উৎসাহে সত্য-মিথ্যা বানিয়ে রটনা রটাবার সম্ভাবনা প্রবল।
মিথ্যা বলে ঢাকার চেষ্টা করবেন না
আপনার একটি গোপন সত্য হয়তো প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে, কিন্তু তাই বলে হড়বড় করে অনেকগুলো মিথ্যা বলে সেটাকে ঢাকার চেষ্টা করবেন না। এতে হিতে বিপরীত হয় বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। পুরো পরিস্থিতিটা ঘোলাটে হয়ে ওঠে আর আপনিও সকলের সামনে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেন। গোপন কথাটি ভালো-খারাপ যাই হোক না কেন, সততার সাথে মোকাবেলা করুন। কারণ দোষ/ অপরাধ যাই হয়েছে সেটা অতীতে, বর্তমানে নয়। অতীতের একটি খারাপ কাজের জন্য বর্তমানেও অসৎ হওয়া নিষ্প্রয়োজন।
অনুরোধ করতে যাবেন না
কেউ হয়তো আপনার একটি গোপন কথা জেনে গিয়েছে, হয়তো এরপর জনে জনে বলে বেড়াবে। আপনি গিয়ে তাঁকে অনুরোধ করলেন বিষয়টি কাউকে না বলতে। ভাবছেন তাতে কাজ হবে? একদম না। বরং যিনি গসিপ করেন, তিনি এতে আরও মহা উৎসাহে গসিপ করবেন। আর যিনি চুপ থাকার, তাঁকে আপনি না বললেও তিনি ব্যাপারটা নিজের কাছে রাখবেন।
ব্যাপারটিকে স্বাভাবিক হিসেবে নিন
নিজের আচরণে এমন কিছুই প্রকাশ করবেন না যাতে মনে হয় আপনি গোপন কথাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিব্রত বা লজ্জিত। বরং খুব স্বাভাবিক আচরণ করুন যেন এটা কোন ব্যাপারই না। যদি রটনা এড়িয়ে যেতে হয়, তাহলে স্বাভাবিক আচরণের বিকল্প নেই।
ভুল স্বীকার করুন, ক্ষমা চান
বিষয়টি যদি এমন হয় যে আপনার লুকিয়ে রাখা কোন দোষ বা অপরাধের গোপন কথা প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে, তাহলে লুকোবার চেষ্টা না করে বরং স্বীকার করে নিন ও আন্তরিকতার সাথে ক্ষমা চেয়ে নিন। যা একবার প্রকাশ পেয়ে গেছে তা শত চাইলেও ঢেকে রাখা সম্ভব না। তাই অনর্থক চেষ্টা না করে ক্ষমা চাওয়াই উত্তম। এতে আপনার সম্মান রক্ষা হবে।
পরিশেষে, ছোট্ট এই জীবনটা যত স্বচ্ছতার সাথে অতিবাহিত করা যায় ততটাই স্বস্তির। যদি নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থেকে নিজের কর্মগুলি নির্ধারণ করি আমরা, তাহলে সহজ হয়ে আসবে জীবনের অনেক কিছুই।