মানুষ কেন ভালোবাসা খোঁজে? উত্তর পেলেন বিজ্ঞানীরা
ভালোবাসা নিয়ে মানুষের চিন্তার শেষ নেই। মোটামুটি খাদ্য, পানি এবং অক্সিজেনের পরেই ভালোবাসা সবচাইতে জরুরী বলে অনেকে দাবি করেন আবেগের মুহূর্তে। কিন্তু ভালোবাসার মত একটা আবেগ কখন এবং কীভাবে মানুষের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো?
ভালোবাসার পেছনে কোনো জেনেটিক বা নিউরোলজিক্যাল বিষয় জড়িত আছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, ভালোবাসা আসলে মানুষের প্রজনন প্রক্রিয়ার সাফল্যের সাথে জড়িত। ফলে এটাও ধরে নেওয়া যায় যে এর পেছনে বিবর্তনের হাত আছে।
ফ্রন্টিয়ার্স অফ সাইকোলজি জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের একটি দল তানজানিয়ার একটি আদিবাসীর ওপরে গবেষণা করেন। হাদজা নামের এই আদিবাসীদের প্রেমে পড়া এবং সন্তান ধারণের ব্যাপারটার ওপরে জোর দেন। তারা স্টার্নবার্গের ভালোবাসার সংজ্ঞা ব্যবহার করেন, যাতে তিনটি মূল ব্যাপার হলো অন্তরঙ্গতা (Intimacy), তীব্র আকর্ষণ (passion) এবং সম্পর্ক ধরে রাখার সংকল্প (commitment)।
গবেষকেরা ব্যাখ্যা করেন, “স্টার্নবার্গের মতে ভালোবাসার এই তিনটি উপাদান মানুষের বংশবিস্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এবং এদেরকে বায়োলজিক্যাল অ্যাডাপটেশন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু মিলিত হবার ক্ষেত্রে তারা আলাদা ভূমিকা পালন করে।”
গবেষণায় দেখা যায়, নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে ‘কমিটমেন্ট’ বেশী হলে সন্তানের সংখ্যাও বেশী হতে দেখা যায়। এছাড়া নারীর ক্ষেত্রে ‘প্যাশন’ বেশী থাকলে সন্তানের সংখ্যা বেশী হয়। কিন্তু ‘ইনটিমেসি’ এবং সন্তানের সংখ্যার মাঝে বিপরীত সম্পর্ক দেখা যায়। প্রাচীন সামাজিক ব্যবস্থায় মানুষ নিজেই নিজের সঙ্গী পছন্দ করে নিন, তাদের পিতামাতা এক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্ত নিত না। গবেষকেরা মনে করেন, প্যাশন এবং কমিটমেন্ট থাকলে সেই মানুষটিকে বেশী যোগ্য মনে করা হত, এবং ভালোবাসার সুযোগ তার বেশী থাকত। এ ব্যাপারটা বিবর্তনের ক্ষেত্রে বেশী গুরুত্ব পেয়েছিল। তবে এ ব্যাপারে আরো বিশদ গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে তারা মনে করেন।
হাদজা আদিবাসীদেরকে বেছে নেবার কারণ হলো, আমাদের সবার পূর্বপুরুষ কী আচরণ করতেন তার ওপর ভিত্তি করে এই গবেষণা। মানুষ কৃষিকাজ শুরুর আগে এই অবস্থায় ছিল। গবেষণার ফলাফল বেশী চমকপ্রদ, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে তা বেশ সীমিত পরিসরে করা হয়েছে। এছাড়া তার ভিত্তি ছিল কোরিলেশন (correlation), কজেশন (causation) নয়। হাদজা গ্রুপটি হয়তো আমাদের পূর্বপুরুষদের মতো নাও হতে পারে। বা হাজার বছর আগের ভালোবাসার ধারণা আর এ সময়ের ভালোবাসার ধারণা হয়তো একেবারেই আলাদা।
এটা অবশ্যই মেনে নিতে হবে যে, সময় ও সামাজিক পরিস্থিতি সাথে সাথে ভালোবাসার ধারনাটাও পাল্টেছে, বিবর্তিত হয়েছে। তবে গবেষণার লক্ষ্য ছিল যে মানব সভ্যতার শুরুতে এর কী প্রভাব ছিল। সুতরাং এর সাথে বংশবিস্তার এবং প্রজননের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়াটা আসলে অবাক হবার মত কিছু নয়। আদিকাল থেকেই মানুষের রক্তে আছে ভালোবাসা খুঁজে পাওয়ার প্রবণতা, গবেষণা থেকে এটাই প্রমাণিত হয়।