বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্বপ্ন পূরণের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত
জাহিদ হাসান
জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন তো সবারই। উচ্চশিক্ষা লাভ করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্ন সবাই দেখে। কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা আশা করে ভালো চাকরির। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তেমনি এক বড় সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন পথের সারথি। ৫৭ বছরের পথচলায় এ বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ৪৩ হাজার কৃষিবিদই তৈরি করেনি, কৃষিক্ষেত্রে ঘটিয়েছে বিপ্লব, দেশকে করেছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ময়মনসিংহ শহরের অদূরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাম্পাস বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। সবুজে ঘেরা প্রকৃতিকন্যাখ্যাত শিক্ষাঙ্গনটিতে পড়তে আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থী। স্বপ্ন একজন দক্ষ কৃষিবিদ হিসেবে গড়ে ওঠা, স্বপ্ন দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতি হিসেবে গড়ে তোলা। স্বাধীনতা-পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠিত করে ক্ষুধামুক্ত দেশে পরিণত করতে এই কৃষিবিদদের ভূমিকা ছিলো অনবদ্য। সে সময়ের ৭ কোটি মানুষের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দেওয়া অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হলেও বর্তমানে ১৮ কোটি জনগণের চাহিদা মিটিয়ে খাদ্য বিদেশে রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে। কৃষিবিদদের হাত ধরে তা যে দেশের কৃষিখাতের বৈপ্লবিক উন্নতির ফল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি এখানে দেওয়া হয় হাতে-কলমে শিক্ষা। প্রত্যেক শ্রেণিকক্ষে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া ব্যবস্থা। ১২০০ একরের বিশাল ক্যাম্পাসটির সবখানেই রয়েছে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক বিচরণ। সকাল হলেই কৃষিতত্ত্ব বিভাগের বিশাল মাঠের দিকে চোখ বুলালে চোখে পড়বে শিক্ষার্থীদের কৃষিকাজের দৃশ্য। কেউ ফসল লাগাচ্ছে, কেউ নিড়ানি দিচ্ছে, কোথাও বা চোখে পড়বে শিক্ষকের দিকনির্দেশনার চিত্র। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের চাহিদা মেটাতে রয়েছে সমৃদ্ধ এক গ্রন্থাগার। বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা নিশ্চিত করতে রয়েছে হেলথ কেয়ার সেন্টার।
আবহমান বাংলার কৃষির ঐতিহ্য ও কৃষি উপকরণসমূহ দেশের ভবিষ্যত্ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এখানে রয়েছে দেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর। ভবিষ্যত্ প্রজন্মের কাছে দেশের মত্স্য সম্পদের বিশালতা ও বিলুপ্ত প্রজাতির মাছের পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে এখানে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একমাত্র মত্স্য জাদুঘর। বিলুপ্তপ্রায় ও দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদের সংগ্রহশালা হিসেবে এখানে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন। তাছাড়াও এখানে রয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় এবং এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহত্ ফলদ বৃক্ষের সংগ্রহশালা বাকৃবি জার্মপ্লাজম সেন্টার। অপার সম্ভাবনার বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতি পরতেই যেন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে জ্ঞান, সদিচ্ছা মাত্রই রয়েছে আহরণের সুযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েট হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দেশে রয়েছে অবারিত চাকরির সুযোগ। বাংলাদেশ কর্ম কমিশনে (বিসিএস) কৃষিবিদেরা টেকনিক্যাল ও সাধারণ উভয় ক্যাডারে আবেদনের সুযোগ পাওয়ায় দেশের সব কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে পারে। তাছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিরি), পাট, ইক্ষু, মসলা, তুলা, চা গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে চাকরির সুযোগ।
ভেটেরিনারি অনুষদ থেকে গ্রাজুয়েটরা বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সার্জন পদে যোগদান করতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন কেন্দ্র ও দুগ্ধ খামার, হরিণ প্রজনন কেন্দ্র, ছাগল প্রজনন কেন্দ্র, মহিষ প্রজনন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রাণী গবেষণা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে চাকরির সুযোগ। মাত্স্যবিজ্ঞান থেকে গ্রাজুয়েটদেরও রয়েছে এমনই অবারিত চাকরির সুযোগ। অন্যদিকে দেশের কৃষি ব্যাংকগুলোতে অগ্রাধিকারসহ দেশের সরকারি-বেসরকারি সকল ব্যাংকে চাকরির সুযোগ রয়েছে এখানকার গ্রাজুয়েটদের।
অনেকে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে নিজেই হয়ে ওঠেন উদ্যোক্তা, গড়ে তোলেন নিজস্ব খামার। শিক্ষাজীবনের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন অসংখ্য বেকারকে। দেশ ও দশের সেবা এবং সমৃদ্ধ মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দেখাচ্ছে আলোর হাতছানি। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এবং দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গ্রহণ সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত।