আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী রোল মডেল সিলেটে রাষ্ট্রপতি
মবরুর আহমদ সাজু:
বাংলাদেশের বারবার নির্বচিত রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেছেন, আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী রোল মডেল। কৃষিখাতে আজ যে অভাবনীয় সাফল্য দৃশ্যমান, এর পেছনে নিরলসভাবে কাজ করছেন আমাদের কৃষিবিদগণ। নিরনমশা গবেষণার মাধ্যমে তারা পরিবেশ উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ সব পর্যায়ে তা দ্রুত হস্তান্তর ও বিস্তারেও ভূমিকা রাখছেন। কৃষিতে উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখতে কৃষক পর্যায়ে কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া পচনশীল কৃষি পণের সংরক্ষণ ও বহুমুখীকরণে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেই এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৫ জানুয়ারি) বিকালে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন তিনি। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গোলাম শাহি আলম। রাষ্ট্রপতি বলেন, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আপনারা সবাই আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। সমাবর্তন একটি প্রতীকী অনুষ্ঠান। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক সাধনা ও সিদ্ধির সাথে সমাজের আশা আকাঙ্ক্ষার মেলবন্ধন ঘটে থাকে। সাফল্যের সাথে শিক্ষাজীবন শেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে সনদপত্র গ্রহণের মাধ্যমে নবীন গ্রাজুয়েটদের সামনে খুলে যায় বৃহত্তম কর্মজীবনের সাফল্যের পথ। সমাবর্তনের মাধ্যমে তাদের এই অগ্রাভিযানে যুক্ত হয় জাতীর শুভ কামনা। সমাবর্তনের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমি সদ্য সনদপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েট ও তাদের অভিভাবক এবং সেই সাথে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে ফেব্রুয়ারি মাস অশেষ গুরুত্ব বহন করে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার যে স্ফুরণ ঘটেছিল, তা দু দশক ধরে নানা আন্দোলন-সংগ্রাম চরাই উতরাই পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাস্তব রুপ লাভ করে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ ও ব্যাপক কর্মযজ্ঞের পৌরহিত্যে ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার প্রাজ্ঞ ও দুরদর্শী নেতৃত্ব বাঙ্গাই জাতিসত্তার উন্মেষ ও বিকাশকে অবারিত করে। আমি আজ শ্রদ্ধাবণত চিত্তে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। একই সাথে গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি ভাষা আন্দোলনের চিরঞ্জীব শহীদসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী ত্রিশ লক্ষ শহীদের অমর স্মৃতির প্রতি। আমরা এদেরই গর্বিত উত্তরাধিকার। এদের স্বপ্ন ও আদর্শকে জীবনের সর্বস্তরে বাস্তবায়ন করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব। রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অগ্রগতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখে বর্তমান সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় রুপকল্প-২০২১ ও রুপকল্প-২০৪১ এর পথচিত্র অনুসরণ করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে চলছে। আমাদের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন যুদ্ধে জয়লাভের জন্য কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন অপরিহার্য। কেননা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও স্থিতিশীলতা অর্জনে কৃষির ভূমিকা আজও মুখ্য। সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় জলবায়ু পরিবর্তনজড়িত বৈরিতা মোকাবেলা করে খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ধান, গম, ভুটা, সবজি, মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ উৎপাদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলছে। এটিই সম্ভব হয়েছে সরকারের বাস্তবমুখী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে। বিশেষ করে কৃষকদের অনুকূলে সার, সেচ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাবদ ব্যাপক ভিত্তিতে কৃষি সহায়তা প্রদানের ফলশ্রুতিতে। আব্দুল হামিদ বলেন, সিলেটের পাহাড়, নদী, হাওড়, সবুজ বনাঞ্চল ও প্রান্তর এই অঞ্চলকে এক অনন্য প্রাকৃতিক লীলাভূমিতে পরিণত করেছে। এখানকার বিস্তৃর্ণ জলজ সম্পদ, উর্বর ভূমি, লালচে ও পাথুরে মাটি এক বিস্তীর্ন প্রান্তরে ছড়িয়ে আছে বিপুল সম্ভাবনা। লাগসই কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এর উৎপাদনশীলতা বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব। এভাবে এই অঞ্চল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মাঠ পর্যায়ে গবেষণা পরিচালনার এক আকর্ষণীয় ক্ষেত্র তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকবৃন্দ ইতোমধ্যেই মাঠ গবেষণার মাধ্যমে উন্নত শস্যজাত উদ্ভাবনসহ বেশ কিছু চাষ ও ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি উদ্ভাবনে কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছন জেনে আমি খুশি হয়েছি। তবে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে আরো সুদুরে। ২০৫০ সাল কিংবা ২১০০ সালে দেশেরে প্রক্ষেপিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা ও খাদ্য নিরাপত্তাকে মাথায় রেখে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। রাষ্ট্রপতি গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, আজ শুধু স্বজন পরিজন নয়, সমগ্র জাতি তোমাদের নিয়ে গর্ব করে। এতোদিন তারা তোমাদের দিকে সহায়তার হাতি বাড়িয়ে দিয়েছে। নিজেদেরকে তোমরা জ্ঞান দক্ষতায় সমৃদ্ধ করেছো। পেশাগত শিক্ষালাভের মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধকে শানিত করার অনন্য সুযোগ পেয়েছ। এই সবই সম্ভবপর হয়েছে জনগনের ট্যাক্সের টাকায়। এভাবে তোমাদের অনেক ঋণ জমেছে দেশ ও জাতির কাছে। এখন তোমাদের এই ঋণ পরিশোধের পালা। সমগ্র জাতি তোমাদের ঘিরে স্বপ্ন দেখে। দেশের খাদ্য ও পুষ্ঠি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তোমরা একযোগে কাজ করবে।