প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কামরান সম্পর্কে যা বললেন /মবরুর সাজু/
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমন সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি সিলেটে জনসভায় বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে, একই বছরের ২৩ নভেম্বর তিনি সিলেটে সেনাবাহিনীর ১৭-পদাতিক ডিভিশনের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। ওই দিন জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কারণে তা স্থগিত করা হয়েছিল। সেই হিসেবে প্রায় দুই বছর পর প্রধানমন্ত্রী সিলেটে জনসভায় যোগ দিতে আসেন তিনি। প্রধামন্ত্রী প্রসঙ্গ উল্লেখ্য করে বলেন
বিএনপি জামাত জোটের আমলে দেশে জঙ্গি, বাংলা ভাই, সন্ত্রাসবাদের জন্ম হয়েছে। বিএনপি জামাত জোটের সময়ে এক যোদে ৬৪জেলা বোমা হামলায় হয়েছে। বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় এসে আওয়ামীলীগের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। অপারেশ ক্লিন হার্টের নামে আমাদের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে বিএনপি জামাত জোট।
৬৪ জেলায় বোমা হামার প্রতিবাদে আওয়ামীলীগের প্রতিবাদ র্যালিতে বোমা হামলা করে আইভি রহমান সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। প্রধামন্ত্রী এই প্রসঙ্গ উল্লেখ্য করে বলেন, সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের উপর বোমা হামলা হয়েছে। সে সময় আওয়ামীলীগ নেতা ইব্রাহিম নিহত হন এবং বহু নেতাকর্মী আহতন। প্রধামন্ত্রী অবারো বলেন কামরানের উপর দিত্বীয় বার গুলশান সেন্টারে বোমা হামলা করা হয়।
সে সময় অনেক নেতাকর্মী আহত হন। প্রধানমন্ত্রী বলেন ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। সেই সময় খাদ্যে স্বংসম্পূর্ন করতে আওয়ামীলীগ সরকার কৃষকের উন্নয়নে ও কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করে। তিনি বলেন, তখন বিএনপি নেত্রীও তাদের অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যদি খাদ্যে স্বংসম্পূর্ণ হয় তালে বাংলাদেশ রিলিফ ও ঋণ পাবো না।
আমারা বলছে বাংলাদেশ উন্নত হোক আমারা কারো কাছে সহজে হাত পাতাবো না। বিএনপির সাথে আওয়ামীলীগের প্রার্থক্য তুলে বলেন, আওয়ামীলীগ সৃষ্টি করে আর বিএনপি ধ্বংস করে। ৫জানুয়ারীর নির্বাচনে বিএনপি না এসে সারা দেশে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়। তারা দেশে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে। পেট্রোল বোমা হামলা প্রায় ৫শত মানুষ মৃত্যু বরণ করে। ৩হাজার ৩৬ জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ, ৩হাজার ২৫২টি গাড়ীত অগ্নিসংযোগ, ৯টি লঞ্চে আগুন, ৯টি ভূমি অফিসে ও বহু রেই লাইন আগুন ও বিছিন্ন করে রাখে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারি সফরে সিলেট এসে পৌঁছেন। মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীরা সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাঠে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা।
এদিকে সকাল থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভা অভিমুখে ঢল নেমে জনতার। শহর ছাড়াও বাইরের বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামাঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ যোগ দিচ্ছে এ জনসভায়। জনসভাকে কেন্দ্র করে সিলেট শহর পরিণত হয়েছে যেন মিছিলের শহরে। এ যেনো সিলেটের আ.লীগের নেতা কর্মীদের-এক মিলনমেলা। দেখে মনে হয় সিলেটে সব পথ এসে মিশেছে চৌহাট্টার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে।
‘জয় বাংলা’, ‘নৌকা নৌকা’ সহ বিভিন্ন স্লোগানে রঙিন ব্যানার-ফেস্টুন আর বিভিন্ন আকারের নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিলিত হয় জনসভাস্থলের দিকে।
এ জনসভাকে সফল করতে কেবল সিলেট নগরীই নয় সকাল থেকে বিভাগের ৪ জেলা ও ৩৯টি উপজেলাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে দলীয় নেতা কর্মীরা এসে জড়ো হচ্ছেন জনসভাস্থলে। নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে পুরো জনসভাস্থল কানায় কানায় ভরে উঠতে শুরু করেছে। এখন নেতাকর্মীরা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের আশপাশের রাস্তায় অবস্থান নিচ্ছেন। বিভিন্ন শ্লোগানের মাধ্যমে তারা পুরো জনসভাস্থল মুখরিত করে তুলেছেন। এছাড়া মহানগরীর বিভিন্ন থানা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জনসভাস্থলে প্রবেশ করন। ইতোমধ্যে দলের শীর্ষ নেতারা সভামঞ্চে উপস্থিত হচ্ছেন।
এর আগে, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার, হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার ও গাজী বোরহান উদ্দিনের (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন।
মাজার জিয়ারত শেষে বেলা পৌনে ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত সিলেট সার্কিট হাউসে জোহরের নামাজ ও মধ্যাহ্ন-বিরতির জন্য অবস্থান করবেন। এরপর বেলা ২টা ৪০ মিনিটে সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৮টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিকেলে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন তিনি। জনসভা শেষে বিকেল সোয়া ৫টায় বিমানযোগে ঢাকায় রওনা হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সিলেট আগমন উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও পুরো সিলেট নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে যান চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়।