মাদ্রাসার ভূমিতে ‘পাবলিক টয়লেট’ করছেন মেয়র আরিফ জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া
স্টাফ রিপোর্টার
বলিক টয়লেট নগর জীবনের জন্য একটি অত্যান্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বলে কি এত জায়গা থাকতে মাদ্রাসার ভূমিতেই টয়লেট নির্মাণ করতে হবে? হ্যাঁ, তাই হচ্ছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ সরকারী আলিয়া মাদ্রাসায়। রাস্তার পাশে মাদ্রাসার নিরাপত্তা বেস্টনির মধ্যেই ভূমিতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধূরী। এ নিয়ে নগরজুড়ে তোলপাড় চলছে। সরেজমিন দেখা যায়, আলীয়া মাদ্রাসার এবং সিভিল সার্জন অফিসের ভূমিতেই সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এই দেয়ালের মধ্যেই পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করবে সিসিক। আর এতে অর্থ সহায়তা দেবে ওয়াটার এইড নামে একটি এনজিও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই ভূমিতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করবে ওয়াটার এইড নামে একটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা। তারা ইতিমধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনেও এরকম প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। তকে এখানে কোন প্রকার লিখিত অনুমতি ছাড়াই কাজটি করছে সিটি কর্পোরেশন। দুইটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানই দাবী করেছেন তারা লিখিতভাবে কোন অনুমতি দেননি। গত দুই দিন আগে আলিয়া মাদ্রাসার ছাত্ররা এখানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ফলে সিসিকের লেবারদের চলে আসতে হয় এখান থেকে। বর্তমানেও নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ও সাবেক ছাত্রদের মধ্যে। তারা মনে করছেন, সরকারের এত ভূমি থাকতে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ভূমিতে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ কতটুকু যুক্তি সংগত? মেহরাজ নামে আলিয়া মাদ্রাসার এক ছাত্র জানান, সিটি কর্পোরেশন কি আর কোন জমি পায়নি, যে মাদ্রাসার জমিতে টয়লেট নির্মাণ করতে হবে। সিভিল সার্জন অফিসের দিকে আরেকটু জমি নিলেই তো মাদ্রাসার জমি নিতে হতো না। এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িত রয়েছে। প্রক্ষান্তরে এখানে ধর্মীও অনভূতিতে আঘাত হানার উদ্দ্যেশ্যেই এই তৎপরতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার দুই কর্মচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাদ্রাসাতো পাবলিক টয়লেট তৈরির জায়গা নয়। এখানে দ্বীনি শিক্ষা দেয়া হয়। টয়লেটের জন্য সিটি কর্পোরেশন অন্য জমি বেছে নিতে পারত। সিসিকের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, আমরা কারো জমি জোর করে নিতে পারিনা। জমি নিতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে নিতে হবে। কেউ যদি স্বেচ্ছায় জমি না দেয় তবে নেয়া যাবেনা। সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ প্রফেসর আলী আহমদ খান বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে লিখিত কিছু পাইনি বা লিখিত অনুমতিও দেইনি। মেয়র মহোদয় আমাকে বলেছেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর সাথে কথা বলে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যেহেতু পাবলিক সংশ্লিষ্ট বিষয় এজন্য আমরা আর কিছু বলিনি। সিলেটের সিভিল সার্জন ডাঃ দিমাংশু লাল রায় বলেন, উন্নয়ন কাজে তো আর আমরা বাধাঁ দিতে পারিনা। আর এখানে জমিও আমি দিতে পারিনা। জমি দেয়ার এখতিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। আমি চিঠি মন্ত্রণালে পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় কোন অনুমতি দেয়নি। তিনি বলেন, মাদ্রাসার ছাত্ররা কাজ বন্ধ করার পর আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল। কিন্তু আমি অফিসে ছিলামনা। আজ তারা আবার আসবে আমার সাথে দেখা করতে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিষয়টিতে জনস্বার্থ জড়িত। আমরা সংশ্লিষ্টদের অনুমতি নিয়েই প্রকল্পটি করছি। নগরীর বৃহত্তর স্বার্থেই এটি করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, শত বছরের লালিত শিক্ষা প্রতিষ্টান ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসা। যে প্রতিষ্টান টি ১৯১৩ সালে প্রতিষ্টিত হওয়ার পর থেকে এদেশে অনেক আলিম উলামা তৈরী করে যাচ্ছে। যেখানে প্রতিদিন কোরআন ও হাদীসের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা পাঠদান করানো হয়। উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে লেখা-পড়া শেষ করে বাংলাদেশের উচ্চপদস্ত বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছেন অনেক ব্যক্তিবর্গ এমনকি এ মাদরাসার ছাত্র ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী।