নিখোঁজ হওয়া গাড়ি নিয়ে মেয়র আরিফের লুকোচুরি
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে তিনটি অকেজো গাড়ি গায়েব হয়েছে। গায়েব হওয়া গাড়িগুলোর মধ্যে একটি ট্রাকও রয়েছে। গাড়িগুলো নিখোঁজ হয়েছে উল্লেখ করে কোতোয়ালী থানায় ২৪ অক্টোবর সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ১৯৪৯) করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিবহন শাখার উপ সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) জাবেরুল ইসলাম। সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয় গাড়ি তিনিটি ২৭ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয়েছে।
একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকার পরও গাড়িগুলো গায়েব হওয়া নিয়ে কর্পোরেশনের ভেতরে নানা গুঞ্জন চললেও কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ। মুখ না খুললেও এ বিষয়টি নিয়ে গোপনে সিটি করপোরেশনে তদন্তও চলছে।
ডায়েরিতে জাবেরুল ইসলাম জানান,২৭ সেপ্টেম্বর অফিসে এসে গাড়িগুলো যথাস্থানে দেখতে পাননি। অনেক খোজাখুজি করে গাড়িগুলোর সন্ধান না পেয়ে তিনি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।তবে ডায়েরি করার ২ দিন পর সুর পাল্টালেন জাবেরুল ইসলাম,তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডায়েরির বিষয়টি অস্বীকার করেন,তিনি বলেন সিটি করপোরেশনের পরিবহন শাখা থেকে কোনও ধরনের অকেজো গাড়ি চুরি কিংবা নিখোঁজ হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌছ বলেন,গাড়ি নিখোজ হওয়ার বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছি,তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলতে পারব।
তবে একটি অনলাইনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মেয়র আরিফ বললেন ভিন্ন কথা, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানান, কর্পোরেশনের অনেক পুরোনো গাড়ির যন্ত্রাংশ অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে ফেলে রাখা ছিল। পরিষ্কার করার সময় গাড়ির কিছু যন্ত্রাংশ পরিচ্ছন্নকর্মীরা ডাম্পিংয়ে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর আমি নির্দেশ দিলে কিছু যন্ত্রাংশ খুঁজে বের করা হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
আরেকটি সূত্র থেকে জানা যায় সুরমাপাড়ের সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে দুইটি অকেজো গাড়ি ও একটি ট্রাক গায়েব করার নেপথ্যে রয়েছেন কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হানিফুর রহমান। আর তিনি নিজের উপর থেকে দায় এড়াতে রহস্যজনক কারণে নিখোঁজের কথা উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি করান করপোরেশনের পরিবহন শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) জাবেরুল ইসলামকে দিয়ে।সুত্র থেকে আরও জানা যায় হানিফুর রহমান এই গাড়িগুলো টেন্ডার ছাড়াই লোকচক্ষুর আড়ালে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কর্পোরেশনের টাকা। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হওয়ার সুবাধে হানিফ কর্পোরেশনের বিভিন্ন দফতরও নিয়ন্ত্রণ করেন।এছাড়াও মেয়র আরিফ ও জাবেরুল ইসলামের অমিল কথা থেকে সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হয়েছে নানান প্রশ্ন।জাবেরুল ইসলাম ডায়েরি করে অস্বীকার করছেন,অথচ ডায়েরির তথ্য অনুযায়ী জাবেরুল ইসলাম ডায়েরি করেছেন বলে সত্যতা পাওয়া যায়।এছাড়াও ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়েছে ৩টি গাড়ি নিখোঁজ হয়েছে অথচ আরিফের দাবি গাড়ি নয় কিছু যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে।এখন কার বক্তব্য সত্য তা নিয়ে চলছে নানান গুঞ্জন।
গাড়িগুলো নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই গাড়িগুলো নিখোঁজ হওয়ার পিছনে কার হাত আছে তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন।সমালোচনায় বাদ জাননি মেয়র আরিফও।সিলেট সরকারি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী জসিম হাওলাদার নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার একাউন্টে মেয়র আরিফকে এর দায়ভার নিতে হবে বলে জানিয়ে লিখেন, আপনি সিলেট সিটি কর্পোরেশন মেয়র,আপনার কাছে জনগণ অনেক আশা করে,সিসিকের আওতায় প্রত্যেকটা বিষয় আপনি গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত,অথচ আপনি দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও সরকারি তিনটা গাড়ি নিখোঁজ এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
আব্দুল মতিন নামের আরেক ব্যবহারকারি তার একাউন্টে মেয়র আরিফকে উদ্দেশ্য করে লিখেন,যিনি নিজের অফিসের সরকারি গাড়িগুলো খবর রাখতে পারেন না তিনি কিভাবে সাধারণ জনগণের খবর রাখবেন?।