২৯ বছরে সিলেটে ছাত্ররাজনীতিতে প্রাণ গেল অর্ধশতাধিক /মবরুর সাজু/

শিবিরে শুরু ছাত্রলীগে শেষ..

আবার অস্থির ও উত্তপ্ত সিলেটের শিক্ষাঙ্গন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের কোন্দলের কারণে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ও বিভিন্ন ক্যাম্পাসে খুন, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, বিরাজ করছে। আজকের ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস এবং যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় দেশের সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। ছাত্রদের ভবিষ্যত্ নিয়ে সবাই শংকিত।সিলেটের রাজনীতির ইতিহাসে প্রথম সহিংস ঘটনার জন্ম দেয় ছাত্রশিবির ১৯৮৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আর সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর তান্ড দেখালে ছাত্রলীগআধিপত্য বিস্তার নিয়ে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ওমর আলী মিয়াদ (২৬) নামে এক কর্মী প্রাণ যায়। ছাত্র রাজনীতিতে অবক্ষয় বাড়ছেই। কোনভাবেই যেন লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা ছাত্র নেতাদের বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ছাত্র রাজনীতিতে । একশ্রেণীর নেতাকর্মীর খুনোখুনি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ, শিক্ষক লাঞ্ছনা, অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে কোন্দল আর আধিপত্যে শিক্ষাঙ্গনে বাড়ছে সহিংসতা । সিলেটের শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এমসি কলেজ, মদনমোহন কলেজ, সরকারি কলেজ, ভেটেরিনারি কলেজ, সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজসহ এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই যেখানে ঘাতকের অস্ত্র কোনো মেধাবীর প্রাণ কেড়ে নেয়নি। আর এ কারণে অভিভাবকরাও সন্তানদের ক্যাম্পাসে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন না। গত দুই যুগে সিলেটের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘাতকের নির্মম বলি হয়েছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী। সর্বশেষ গতকাল ওমর আহমদ মিয়াদর প্রাণ হারায় এছাড়া বিভিন্ন ক্যাম্পাসে খুন, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, চাঁদাবাজি, তো রয়েছেই সিলেটের রাজনীতির ইতিহাসে প্রথম সহিংস ঘটনার জন্ম দেয় ছাত্রশিবির ১৯৮৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর । সেদিন শিবির ক্যাডাররা জাসদ ছাত্রলীগের তিন নেতাকে খুন করে। এরপর থেকে সেই সহিংস রাজনীতি বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। তাতে যোগ দিয়েছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলও। প্রতি বছরই সহিংস ঘটনায় শিক্ষার্থীরা প্রাণ হারাচ্ছে। ২৬ বছরে সিলেটে ছাত্র সংগঠনগুলোর কোন্দল, হামলা, সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে ৪৬ জন। এর মধ্যে ছাত্রলীগের হাতে নিহত হয়েছে ১০, শিবিরের হাতে ৭ এবং ছাত্রদলের হাতে ২ জন। ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ১৪ এবং ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৫ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া ছাত্র রাজনীতিকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছে আরও ৮ জন। এসব ঘটনায় যথারীতি থানায় মামলা হয়েছে। কিন্তু একটি মামলায়ও হত্যাকারীরা শাস্তি পায়নি। প্রায় সব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়ই প্রকৃত অপরাধীরা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।১৯৮৮ সালের ঘটনায় শিবির ক্যাডারদের হাতে নিহত হন জাসদ ছাত্রলীগের নেতা মুনীর-ই-কিবরিয়া চৌধুরী, তপন জ্যোতি ও এনামুল হক জুয়েল। এ ট্রিপল মার্ডারের পর দ্বিতীয় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয় সিলেট পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে। ১৯৯১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে খুন হয় ছাত্রদলকর্মী মাহবুব আলম। ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের গুলিতে এক পুলিশ সদস্য প্রাণ হারান। একই বছর সিলেটের বিশ্বনাথ কলেজে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে মারা যান দলের কর্মী বিধান। ১৯৯৩ সালের ২৩ মে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রাবাসের গেটে নিহত হন ছাত্রদল নেতা দুলাল। ১৯৯৪ সালে মদনমোহন কলেজে ছাত্রলীগের কোন্দলে খুন হন এক কর্মী। একই বছর ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন এনামুল হক মুন্না। ১৯৯৫ সালে ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে হত্যা করা হয় মুরাদ চৌধুরী সিপারকে। একই বছরের ২১ নভেম্বর সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে প্রাণ হারান ছাত্রদল নেতা মুহিন খান। এর ঠিক এক মাস পর শাহজালাল সেতুর ওপর খুন করা হয় শিবির নেতা আবদুল করিমকে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি নির্বাচন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের হাতে খুন হন এমসি কলেজ ছাত্রদল নেতা বাবুল আহমদ রাহি। ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যান ছাত্রদল কর্মী রুহুল আমিন। ১৯৯৮ সালের ২৩ মে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের ব্রাশফায়ারে নিহত হন শিবির নেতা মহসীন। পরদিন ২৪ মে এ ঘটনার জের ধরে ব্লুবার্ড স্কুলের সামনে ছাত্রলীগ নেতা সৌমিত্র বিশ্বাসকে একা পেয়ে খুন করে ছাত্রশিবির। ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে ছাত্রদলের হাতে নিহত হন স্বপন নামে এক ছাত্রলীগ নেতা। আগস্ট মাসে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন ছাত্রদল কর্মী বকুল ধর। সেপ্টেম্বর মাসে ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলায় নিহত হন ছাত্রদল নেতা জগলু। নভেম্বর মাসে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল। একই মাসে নিজ সংগঠনের কর্মীদের হাতে খুন হন ছাত্রদল কর্মী ঝুটন মজুমদার। ২৫ ডিসেম্বর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গুলিতে খুন হন মাদ্রাসাছাত্র ও শিবির কর্মী বেলাল। ২৮ ডিসেম্বর টিলাগড় পয়েন্টে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের বন্দুকযুদ্ধের সময় ক্রসফায়ারে নিহত হন আতাউর রহমান নামের এক পথচারী যুবক। ২০০১ সালের ৩ মে আবদুল হালিম ও ১০ অক্টোবর ফখরুল ইসলাম খুন হন। তারা উভয়ই ছাত্রদল কর্মী এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তারা নিহত হন। ২০০২ সালের ২৭ জানুয়ারি মদনমোহন কলেজ ছাত্রদল নেতা মোমিনকে ছাত্রলীগ কর্মীরা পাঠানটুলায় তার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে। একই বছরের ২৮ জুলাই জাহাঙ্গীর শামীম নামের ছাত্রদল নেতা ওসমানী মেডিকেলের গেটে এবং ৯ সেপ্টেম্বর মদনমোহন কলেজ ক্যাম্পাসে শিবিরের হাতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা হামিদ আহমদ খান। একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর শিবিরের হাতে খুন হন মদনমোহন কলেজ ছাত্রদল নেতা হামিদ খান দুয়েল, ২০০৩ সালে কলবাখানি এলাকায় ছাত্রদলের দুই গ্রুপে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন সাহাদ আহমদ। ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট শিবিরের হাতে নিহত হন সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের ছাত্র রফিকুল হক সোহাগ। একই বছরের ১৭ অক্টোবর ছাত্রদল কর্মীরা মেস থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে খুন করে সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মিজান কামালীকে। ২০০৫ সালের ১৪ জুলাই ছাত্রদলের কোন্দলে হত্যা করা হয় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিটনকে। ২০০৬ সালের ১৪ মে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ও জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে মোশারফ হোসেন মারা যান। ১৭ এপ্রিল এইডেড স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী রেজওয়ানের শ্বাসনালী কেটে নেয় তার সহপাঠীরা। পরে তিনি হাসপাতালে মারা যান।২০১০ সালের ১২ জুলাই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হন এমসি কলেজের গণিত বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী উদয়েন্দু সিংহ পলাশ। ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর ছাত্রদল কর্মীদের হাতে খুন হন মদনমোহন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আল মামুন শিহাব। ২০১২ সালে নিজ দলের ক্যডারদের হাতে শিবগঞ্জে খুন হন ছাত্রদল নেতা মেহরাব সিদ্দিকি সজিব। একই বছরের ২২ মার্চ ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে খুন হন ছাত্রদল নেতা মাহমুদ হোসেন শওকত। ২০১৩ সালে ছাত্রশিবির ক্যাডারদের হাতে খুন হন ছাত্রলীগ নেতা জগৎজ্যোতি। চলতি বছরের ৪ জুন চাঁদা না দেয়ায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্র তাওহিদকে ছাত্রলীগের টর্চার সেলে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে খুন করে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। একই বছর প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হন মদনমোহন কলেজের ছাত্র সোহান। ১৪ জুলাই রাতে ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ কচিকে খুন করে নিজ দলের ক্যাডারা। ২৭ জুলাই নগরীর পাঠানটুলায় গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর ছাত্রদল নেতা জিল্লুল হক জিলু আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজ দলের কর্মীদের হামলায় নিহত হন। উদয়েন্দু সিংহ পলাশ: ২০১০ সালের ১২ জুলাই অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে নগরীর টিলাগড়ে খুন হন এমসি কলেজের গণিত বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী উদয়েন্দু সিংহ পলাশ। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন পলাশের বাবা বীরেশ্বর সিংহ। এই মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতার হোসেন। আব্দুল্লাহ কঁচি: ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট-কালিবাড়ি রোডের মদিনা মার্কেট অংশে ইজিবাইকের (টমটম) একটি নতুন স্ট্যান্ডের দখল নিয়ে স্থানীয় নেতা ইমরান আহমদ ও গোলজার আহমদ গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময় ছাত্রলীগকর্মী আবদুল্লাহ ওরফে কঁচি নিহত হয়। এ ঘটনায় কঁচির ভাই আসাদুল হক ভূঁইয়া বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি এখন সিআইডিতে তদন্তাধীন আছে বলে জানিয়েছেন জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম। সুমন চন্দ্র দাস: ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের পার্থ-সবুজ গ্রুপের সাথে অঞ্জন-উত্তম গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী সুমন চন্দ্র দাস। এ ঘটনায় সুমনের মা প্রতিমা দাস বাদী হয়ে ছাত্রলীগের অজ্ঞাতনামা শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এই মামলাটিও এখন সিআইডি তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম। আব্দুল আলী: ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট দুপুর আড়াইটায় সিলেট মদনমোহন কলেজ ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজ দলের ক্যাডারদের ছুরিকাঘাতে খুন হন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার সিলাম তেলিপাড়া গ্রামের আকলিস মিয়া আরকানের ছেলে আব্দুল আলী (১৯)। তিনি ছাত্রলীগ বিধান সাহা গ্রুপের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ঘটনার দিন বিকেলে দক্ষিণ সুরমা থানার চণ্ডিপুলস্থ ফুলকলি মিষ্টিঘর থেকে আটক করা হয় মূল ঘাতক সিলেটের ওসমানীনগর থানার দয়ামীর গ্রামের চিত্তরঞ্জন দাশের ছেলে প্রণজিৎ দাশ ও সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের বাসিন্দা হারুনুর রশিদের ছেলে আঙ্গুর মিয়া। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রণজিত দাশ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এই মামলাটি এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন। কাজী হাবিবুর রহমান: ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগের গ্রুপিংয়ের শিকার হন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র ও ছাত্রলীগকর্মী কাজী হাবিবুর রহমান। ঐদিন সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর শামীমাবাদে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মাঠে ছাত্রলীগ নেতা হোসাইন মুহাম্মদ সাগর ও সোহেলের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগকর্মী তার উপর হামলা চালায়। এসময় হাবিবকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তারা। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় হাবিবের। এ ঘটনায় ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি নিহতের ভাই ১১ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। এই মামলার সকল আসামিরা জামিনে রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি গৌছুল হোসেন। খালেদ আহমদ লিটু: চলতি বছরের ১৭ জুলাই সোমবার দুপুরে সিলেটের বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের ১০২নং শ্রেণি কক্ষের ভিতরে নিজেদের অবস্থানে পাইপগানের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক পাভেল গ্রুপের কর্মী খালেদ আহমদ লিটু। ঐদিন বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব ও জেলা ছাত্রলীগের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক পাভেল মাহমুদ গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে শ্রেণিকক্ষের ভেতরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন উপজেলা ছাত্রলীগকর্মী খালেদ আহমদ লিটু (২৩)। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই রাতেই নিহত লিটুর বাবা ফয়জুর রহমান বাদী হয়ে পাভেল গ্রুপের ছাত্রলীগকর্মী ফাহাদ আহমদসহ মোট সাতজনকে আসামি বিয়ানীবাজার থানায় মামলা করেন। এদিকে, ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে একের পর এক প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও একটি মামলারও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। মামলা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধরা পড়ে না আসামিরা। আবার কদাচিৎ ধরা পড়লেও কিছুদিন পরই জামিনে বেরিয়ে যায়। ঘুরে বেড়ায় প্রকাশ্যে। দলের নেতাদের আশকারা পেয়ে তারা হয়ে ওঠে আরো বেপরোয়া। কোন কোন ক্ষেত্রে নিজেদের কর্মীকেও অস্বীকার করে ছাত্রলীগ। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু বিচার, দোষীদের গ্রেপ্তারের মুখস্থ বাণী আওড়ালেও কিছুদিন পরই তা অতীত হয়ে যায়। আবার যখন কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটে তখন আবার আলোচিত হয় বিগত দিনে নিজ দলের কর্মীদের হাতে বলি হওয়া দুর্ভাগা কর্মীদের কথা। অথচ সামান্য রেষারেষির কারণে খালি হচ্ছে কতো মায়ের কোল। এসব পরিবারের একটাই প্রশ্ন, এভাবে আর কতো মায়ের কোল খালি হবে? বিচারের বাণী কী এভাবেই নিভৃতে কেঁদে যাবে? এ অবস্থা আর কতদিন চলবে? যে ছাত্রসমাজের ওপর দেশ ও জাতির অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা, যারা একদিন দেশের হাল ধরবে, তাদের মধ্যে এ হানাহানি ও প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ না হলে দেশ কিভাবে উন্নত হবে? অনেক বাবা-মা কষ্ট করে তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান। অনেক আশা ও স্বপ্ন থাকে তাদের মনে—একদিন সন্তান মানুষ হয়ে তাদের ভাগ্যের উন্নতি ঘটাবে। কিন্তু সন্ত্রাসের কারণে যখন তাদের সন্তান লাশ হয়ে বাড়ি আসে, তখন সব স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল বাসিত রুম্মান বলেন ছাত্রলীগ গঠনমূলক রাজনীতি করে, সন্ত্রাসের নয়। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনায় দু’-একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, এর বেশি নয়। ক্যাম্পাসের সব হত্যাকাণ্ডের দোষ ছাত্রলীগের ওপর চাপানো উচিত নয়। আর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বা অভিযোগ উঠেছে এমন সব নেতা-কর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানান। তবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব পুলিশের এবং একাডেমিক ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব প্রশাসনের। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ বলেন লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ না হলে হত্যাকাণ্ডও বন্ধ হবে না। সব হত্যাকাণ্ডই নিন্দনীয়। সব হত্যাকাণ্ডের দায় ছাত্রলীগের নয়। এরকম ঘটনায় সংগঠনের কেউ জড়িত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ছাত্ররাজনীতি নিয়ে মহানগর ছাত্রদল সভাপতি সাইদ আহমদ বলেন দেশের আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতি বলতে কিছু নেই। প্রতিনিয়ত মানুষ খুন হচ্ছে। চলছে গুপ্ত হত্যা। শিক্ষাঙ্গনে চলছে নৈরাজ্য। এসব ব্যাপারে সরকার কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। আমরা চাই ক্যাম্পাসে সবাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবস্থান করি। কিন্তু ছাত্রলীগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক সহাবস্থান বিলুপ্ত করেছে। এখন ছাত্রদলের কেউ ক্লাস, পরীক্ষায়ও অংশ নিতে পারছেন না। ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষও আমাদের সহযোগিতা করছেন না, বরং বলছেন, উপরের চাপ আছে। শুধু ছাত্রদল করার অপরাধে কেউ ক্যাম্পাসে গেলে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জেদান আল মুসা বর্তমান আইনশৃঙখলা পরিস্থিতি নিয়ে বলেন মিয়াদ হত্যার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। রাজনীতির নামে ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ কর্মী মিয়াদ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকা ছাত্রলীগকর্মী তোফায়েল আহমদকে আটক করেছে পুলিশ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে যে বা যারা কিংবা যে কোনো দলের হোক না কেন তাকে গ্রেফতার করা হবে । তবে পুলিশ বাহিনী তার নিজস্ব গতিতে চলবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি আরো বলেন সহিসংতা হলে তা প্রতিরোধ করতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাস্তায় নেমে মানুষের জানমাল ও নিরাপত্তা বিঘ্নকারী যেকোনো কর্মসূচি কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। আর এ জন্য পুলিশ বাহিনী সদা প্রস্তুত রয়েছে ।

এ বিভাগের অন্যান্য