হিরো আলমকে দিয়ে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা চলছে
সিলেটের সময় ডেস্ক :
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন ১৪ দলের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ার প্রাক্কালে বিকালে কারা, কোন ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে হামলা করেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। হিরো আলমকে ইস্যু করে একটা মহল ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগেরও কেউ যদি যুক্ত থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সভায় উপস্থিত অন্তত তিনজন নেতা আমাদের সময়কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভা শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। রাতের খাবারসহ সভা সোয়া ১১টায় শেষ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সভাসূত্র জানায়, সভায় চৌদ্দ দলের শরিকদের প্রত্যেক দল থেকে একজন করে বক্তব্য দেন। এতে চলমান রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ নানা সংকট নিয়ে তারা কথা বলেন। সবার বক্তব্য শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে চৌদ্দ দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনার এ আহ্বানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন শরিক দলের নেতারা। বক্তারা বলেন, অতীতের মতোই সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটানোর প্রয়াসে কাজ করছে বিএনপি-জামায়াত। ইতোমধ্যে তারা মাঠেও নেমেছে। এদের মোকাবিলা করতে চৌদ্দ দলকে মাঠে নামতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ৩০ জুলাই রংপুর আওয়ামী লীগের সমাবেশের মধ্য দিয়ে চৌদ্দ দল মাঠে নামবে। নির্বাচন পর্যন্ত চৌদ্দ দল মাঠে থাকবে।
সভায় শরিকদের কেউ কেউ কয়টি আসন পাবেন এ নিয়েও কথা বলেন। শেখ হাসিনা জানান, আগামী বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আপাতত সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেসব বিদেশি শক্তি চাপ সৃষ্টি করবে তাদের মেনে নেওয়া হবে না। দেশের রাজনীতিতে বিদেশিদের কারও মাতব্বরি কাম্য নয়। আমাদের দেশের রাজনীতির সমস্যা আমরা নিজেরাই সমাধান করব।
এর আগে সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশটাকে এগিয়ে নেওয়া। আমরা সমাজের সবদিক থেকে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা এখন মোটামুটিভাবে এমন জায়গায় আছি, অর্থনৈতিক চাপটা আছে, ডলারের ক্রাইসিস সারা বিশ্বব্যাপী, আমাদের ওপরও চাপ আছে। তারপরও বলব আমাদের অর্থনীতি গতিশীল আছে। এবারও আমরা সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়েছি।
সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের চালের অভাব নেই। আমাদের চাল এবং অন্যান্য ফসল প্রচুর পরিমাণে আছে। আজকে আমাকে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের চাল রাখার জায়গা নেই। রাখার জন্য জায়গা খালি করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যাদের আমরা রেশন দেই, যেমন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আছে, পুলিশ বাহিনী আছে, তাদের মধ্যে যাদের রাখার ব্যবস্থা আছে তাদের আমরা একবারে তিন মাসেরটা দিয়ে দেব। যাদের ভিজিডি, ভিজিএফ মাসে মাসে দেই; সেটাও দরকার হয় তিন মাসের দিয়ে সেখানে আমরা জায়গা করব এবং সেখানে নতুন করে আবার খাদ্য মজুদ করব। যাতে ভবিষ্যতে কোনো দুর্যোগে সমস্যা না হয়।
গ্রামে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই ঢাকা শহরটাই দেখেন, গ্রামের দিকে যাননি। গ্রামে কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নেই। আজকেও আমি খবর নিয়েছি, বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা এসেছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম কি অবস্থা, বলেছে ঢাকায় দাম বেশি, গ্রামে সব ঠিক আছে। শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জীবন পরিবর্তন হয়েছে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, সেটাও কার্যকর করতে হবে। সেখানে কিছু চ্যালেঞ্জ আমাদের আসবে। সে প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি।
সভার বিষয়ে জানতে চাইলে গণআজাদী লীগের সভাপতি এসকে শিকদার আমাদের সময়কে বলেন, নির্বাচনে ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে হিরো আলমকে মারধরের বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। সবাই বলেছে, যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দলের কেউ জড়িত থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার আমাদের সময়কে বলেন, হিরো আলমকে মারধর করার বিষয় নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে। সবাই বলেছে, নির্বাচন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে তাকে কেন মারধর করতে হবে। এর সঙ্গে কারা জড়িত, খুঁজে বের করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, নিজের দলের কেউ থাকলেও আইনের আওতায় আনবেন।
বাসদের আহ্বায়ক রেজাউল রশিদ বলেন, হিরো আলমকে কারা হিরো বানাচ্ছে, এটা দেখতে হবে। কারা আক্রমণ করেছে সেটা নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, এটা কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। যারা মারধর করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দলের কেউ জড়িত থাকলেও শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
১৪ দলীয় শরিক জোটগতভাবেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে। এ ছাড়া সরকারবিরোধী অপশক্তিকে মোকাবিলায় মাঠে সরব থাকবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, শিরীন আখতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, পলিট ব্যুরোর সদস্য লুৎফর রহমান, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন, সহ-সভাপতি জহির হাসান, গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন, ন্যাপের সভাপতি আইভী আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ফারুক, গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এসকে শিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ড. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক ডা. অসিত বরণ রায়, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)-এর আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, সদস্য হামিদুল কিবরিয়া চৌধুরী আজাহার, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী, মহাসচিব ড. সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসীম সাহসিকতা প্রজ্ঞা, সততা ও দক্ষতা নিয়ে যখন বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন বাংলাদেশকে তার সৃষ্টির মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত করার এক সুগভীর ষড়যন্ত্র চলছে। দেশবিরোধী চক্রান্তকারীরা অপশক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপকে উৎসাহিত করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি চিহ্নিত মহল দেশের সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের লক্ষ্য সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ও চলমান উন্নয়নের গতিধারাকে ব্যাহত করা। পাশাপাশি চক্রান্তকারীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়, কেন্দ্রীয় ১৪ দল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে জাতির পিতার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কোনো প্রকার অসাংবিধানিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট কখনো আপস করবে না। কেন্দ্রীয় ১৪ দল রাজপথে থেকে সকল অপশক্তিকে মোকাবিলা করবে। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বাংলাদেশকে বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোটগতভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।