রাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের ‘হাতাহাতি’
সিলেটের সময় ডেস্কঃ
রাবিতে উর্দু বিভাগের অনশনরত শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলার অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর চার শিক্ষার্থীকে রাবি মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন ওই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মনিজা আক্তার, রুনা আক্তার, নুসরাত জাহান প্রিয়া এবং সুমাইয়া।
তাদের মধ্যে মনিজা আক্তার ও সুমাইয়ার অবস্থা গুরুতর হলে তাদেরকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাকি দুজন ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার জন্য প্রশাসন ভবনের সামনে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষকরা। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। এর জেরে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। পরে উর্দু বিভাগের চার ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের দাবি, তাদের সবাইকে মারধর করা হয়েছে।
হাতাহাতির সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল টিপু, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, সহকারী প্রক্টর মো. জাকির হোসেন, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান রাজুসহ আরো অনেকে।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের সামনে বিভিন্ন স্লোগান দেন। রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করছিলেন।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগে ‘শিক্ষক রাজনীতির’ কারণে ফল বিপর্যয় হয়েছে―এমন অভিযোগ তুলে প্রশাসনের তদন্ত ও সমাধানের দাবি জানিয়ে আমরণ অনশনে বসেন উর্দু বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৫ ডিসেম্বর) শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে সকাল ১০টা থেকে তারা অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। এ সময় কর্মসূচি থেকে দাবি না মানা পর্যন্ত তারা অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
তাদের দাবি, শিক্ষকরা যে পন্থী রাজনীতি করেন তার বিপরীত পন্থী শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক ভালো থাকলে ওই পন্থী শিক্ষক তার সাবজেক্টে (বিষয়) নম্বর কম দেন। এ ছাড়াও এক শিক্ষকের কোনো প্রগ্রামে গেলে অন্য শিক্ষক নম্বর কমিয়ে দেন বলে দাবি তাদের।
উর্দু বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শরীফুল ইসলাম বলেন, “দ্বিতীয় সেমিস্টারে আমাদের ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে; কিন্তু প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল উর্দু বিভাগের ইতিহাসে সব থেকে ভালো হয়েছে আমাদের। এর ফলে আমরা শিক্ষকদের নজরে চলে আসি। পরবর্তী সময়ে শিক্ষকরা বলতেন, ‘তোমাদের ফলাফল কিভাবে এত ভালো হয়? সামনের পরীক্ষায় দেখা যাবে রেজাল্ট কিভাবে এত ভালো হয়। কাগজে-কলমে দেখায় দেব। ওপর থেকে নিচে কিভাবে নামাতে হয় এটা আমাদের জানা আছে। ’ এসব কথা আমাদের বলতেন তারা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতেন। তিন মাস ধরে আমাদের সমস্যা সমাধানের কথা বলে ১০-১২ বার সময় নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাই এবার যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো সমাধান না পাব ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব। ”
উর্দু বিভাগের সভাপতি ড. মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে কয়েকবার সভা করেছি। ভর্তি কমিটি প্রতিবেদনও দাখিল করেছে। প্রতিবেদনেও এই ফলাফল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি। ’
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য সভা করেছি। তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরত নিয়ে যেতে। এ ছাড়া ফল বিপর্যয়ের এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। ’