রাজপথে কর্মীরা ফেরায় সাফল্য ভাবছে বিএনপি

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

নেতাকর্মীদের ‘ক্লান্তি ও হতাশা’ দূর করে রাজপথে ফেরানোর প্রথম পদক্ষেপে সফল হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। গত শনিবার ঢাকায় কালো পতাকা মিছিলে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে এমন মূল্যায়ন দলটির নীতিনির্ধারকদের। এই অবস্থায় আগামীকাল মঙ্গলবার দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা ও পৌরসভাতেও একই কর্মসূচি করবে দলটি। সেখান থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। আগামীতে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, গণঅবস্থান, গণসমাবেশ, সমাবেশ, পদযাত্রার মতো নানা কর্মসূচির কথা ভাবছে দলটি। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বড় সমাবেশ করার কথাও ভাবছে বলে দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ নির্বাচনের পর গত শনিবার ঢাকায় প্রথম কর্মসূচি করে বিএনপি। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানান, গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনের সমাবেশ প- হয়ে যাওয়ার পর দলের মহাসচিব ও সিনিয়র নেতাসহ ২৫ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক দফা দাবি আদায়ে টানা হরতাল-অবরোধসহ নানা কর্মসূচি করতে গিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্লান্তিভাব চলে আসে। এই অবস্থায় গ্রেপ্তার ও ফেরারি নেতাকর্মীদের আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। পাশাপাশি নেতাকর্মীদের ক্লান্তিভাব দূর করে রাজপথে সক্রিয় করার উপায় খুঁজতে থাকেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অবৈধ সংসদ বাতিলসহ ১ দফা দাবিতে গত শুক্রবার জেলা সদরে এবং গত শনিবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল মহানগরে কালো পতাকা মিছিল করে বিএনপি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^রচন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, ‘আবারও প্রমাণিত হয়েছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার সরকার গণতন্ত্রকামী বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর যতই হামলা করুক, গায়েবি মামলা দিক, গ্রেপ্তার করুক, সাজাসহ ভয়ংকর নির্যাতন করুক কোনো লাভ হবে না। এসব নির্যাতন করে বিএনপিকে দমিয়ে রাখা যায় না। রাজধানী ঢাকার কালো পতাকা মিছিলে অসংখ্য নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ তার বড় উদাহরণ। এসব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সফল করব।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দুঃশাসনে শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষের পিঠও দেয়ালে ঠেকে গেছে। গত শুক্রবার ও শনিবার কালো পতাকা মিছিলে দলীয় নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। সামনে মুক্তির মিছিলে আরও জনস্রোত দেখা যাবে।’

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ বলেন, ‘অবৈধ ডামি সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ৩০ জানুয়ারি মঙ্গলবার দেশের সকল মহানগরের থানায় থানায়, সকল জেলা সদরে, সকল উপজেলা সদর ও সকল পৌরসভায় বিএনপির উদ্যোগে কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। শান্তিপূর্ণভাবে এই কর্মসূচি সফল করতে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

ঢাকা জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী, নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. আনোয়ারুল হক, দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার আহমেদ কচি ও সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু প্রায় অভিন্ন সুরে বলেন, হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার উপেক্ষা করে নির্বাচনপরবর্তী কালো পতাকা মিছিলের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা আরও চাঙ্গা ও সক্রিয় হয়ে উঠছেন। দল যখন যে কর্মসূচি দেবে তারা সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে থাকবেন বলে জানান তারা।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে যুক্ত করতে চায় বিএনপি। সেই লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা ভাবছে দলটি। যেসব কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে তার মধ্যে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, গণঅবস্থান, গণসমাবেশ, সমাবেশ, পদযাত্রার ইত্যাদি। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ‘বড় সমাবেশ’ করা কথাও ভাবছে দলটি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমাদের রাজপথের চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এটা চালিয়ে যাব। কোন সময়ে, কোন ধরনের কর্মকা- চলবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।’

তবে দলের অপর একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীকে সক্রিয় রাখা পাশাপাশি দলের কোন জায়গায় কী ধরনের দুর্বলতা রয়েছে, তা-ও চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেখানে সক্ষমতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে কাজ করছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল প্রত্যেক জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল উপায়ে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন। বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা বলেন, পরবর্তী কর্মসূচির জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা আরও বেশি সক্রিয় হয়েছেন, পরিবর্তনের জন্য আশাবাদী হয়ে উঠছেন।

এ বিভাগের অন্যান্য