জরায়ু ক্যানসার যেভাবে প্রতিরোধ করা যায়

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

গত কয়েক বছর ধরে জানুয়ারি মাসব্যাপী পালিত হয় জরায়ুমুখ ক্যানসার সচেতনতা মাস হিসেবে। গত শনিবার ষষ্ঠবারের মতো দিবসটি বেশ ঘটা করে উদযাপিত হলো। জরায়ুমুখ হলো জরায়ুর সবচেয়ে নিচের অংশটি, যা প্রসবের পথ বা যোনিতে গিয়ে মিশেছে। জরায়ুর বিভিন্ন অংশ। এর মধ্যে জরায়ুমুখে ক্যানসারের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।

লক্ষণ : অতিরিক্ত সাদাস্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, অতিরিক্ত অথবা অনিয়মিত রক্তস্রাব, সহবাসের পর রক্তপাত, মাসিক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় রক্তপাত, কোমর, তলপেট বা ঊরুব্যথা ইত্যাদি উপসর্গগুলো জরায়ুমুখ ক্যানসারের লক্ষণ।

যাদের হতে পারে : অল্প বয়সে যৌনাচারে অভ্যস্ততা, একাধিক পুরুষসঙ্গী বা পুরুষসঙ্গীর একাধিক নারীসঙ্গী থাকা, ঘন ঘন সন্তান প্রসব ইত্যাদি। বাল্যকালে বিয়ে হওয়া নারীর এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

যতদিনে হয় : একদিন বা একমাসে হঠাৎ করে এ ক্যানসার হয় না। স্বাভাবিক কোষ থেকে এ ক্যানসার হতে প্রায় ১০-১৫ বছর লাগে।

যখন চিকিৎসা নেবেন : রোগের শুরুতে উপসর্গগুলো অল্পমাত্রায় থাকে। এ অবস্থায়ই চিকিৎসা নিতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে ১০০ শতাংশ রোগীই ভালো হয়ে যেতে পারে।

পরীক্ষা : রোগমুক্ত থাকার জন্য যেসব নারীর বয়স ৩০-এর বেশি (বাল্যবিবাহ হলে ২৫-এর বেশি), তাদের প্রতি তিন বছর পরপর স্ত্রীরোগ চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে জরায়ুমুখ পরীক্ষা করাতে হবে। ভায়া (VIA (Visual Inspection of Cervix with Acetic acid), প্যাপ স্মেয়ার (PAP smear) ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগটি শনাক্ত করা সম্ভব।

প্রতিরোধের উপায় : জরায়ুমুখ ক্যানসার (Uterus cancer) প্রতিরোধে অতিকার্যকর টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। টিকা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত জরায়ু পরীক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যানসারের আক্রান্তের হার কমিয়ে দেওয়া সম্ভব। এজন্য ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী সব মেয়ে বা নারী জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে টিকা নিতে পারেন। এ টিকার তিনটি ডোজ নিতে হয়। প্রথম ডোজ যে কোনো দিন। দ্বিতীয় ডোজ প্রথম ডোজের একমাস পর এবং তৃতীয় ডোজ প্রথম ডোজের ছমাস পর। এ টিকা দীর্ঘমেয়াদি জরায়ু-মুখ ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রারম্ভিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ পদ্ধতি বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজেই আছে। এ জন্য রয়েছে ঢাকার মহাখালীতে অবস্থিত জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। প্রজননক্ষম মেয়েদের (১৫-৪৫ বছর) বা যাদের কোনো ধরনের সন্দেহ হচ্ছে, ক্যানসার টেস্ট করানো দরকার, তারা বছরে একবার বা নেগেটিভ ক্ষেত্রে ৩ বছর পর পর এ টেস্ট করবেন।

আমাদের দেশে প্রতিটি মেয়ে বা নারীকে সচেতন হতে হবে এবং পরিবারের সদস্যরা এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন, যাতে এ ঘাতকের কবল থেকে প্রিয়জনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।

লেখক : রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট
অধ্যাপক ও প্রধান, অনকোলজি বিভাগ

এ বিভাগের অন্যান্য