সিলেট-৫: দুই মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে লড়াইয়ে হুছামুদ্দীনও

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনের স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এখন তিনটি ধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীয় প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ ও আহমদ আল কবিরের পক্ষে দুটি পক্ষ সক্রিয়। অন্যদিকে দলের বড় একটি অংশ ভেতরে-ভেতরে সক্রিয় আছে ইসলামি চিন্তাবিদ  আনজুমানে আল ইসলাহের সভাপতি হুছামুদ্দীনকে নিয়ে। ওই পক্ষ নৌকাকে পাশ কাটিয়ে হুছামুদ্দীনকে জিতিয়ে আনতে চেষ্টা করছে। এমনকি তাদের কর্মী-সমর্থকদের হুছামুদ্দীনের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগেও অংশ নিতে দেখা গেছে।

সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে এই আসনে সব সময় ভোটের মাঠে ইসলামি দলগুলো বড় নিয়ামক হয়ে দেখা দেয়। স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত প্রায় সব কটি জাতীয় নির্বাচনে ইসলামি দলগুলোর নেতারা হয় সংসদ সদস্য নতুবা দ্বিতীয় হয়েছেন। এবারও ভোটের মাঠে একই চিত্র।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এ আসনে মোট প্রার্থী ৭ জন। তবে লড়াই হবে ত্রিমুখী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ (নৌকা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী (কেটলি) ও আহমদ আল কবিরের (ট্রাক) মধ্যেই মূলত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্র বলছে, ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের ওবায়দুল হক এবং ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ওবায়দুল্লাহ ফারুক দ্বিতীয় এবং সপ্তম ও নবম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ফরিদ উদ্দীন চৌধুরী দ্বিতীয় হন।

স্বাধীনতার পর সিলেট-৫ আসনে চারবার আওয়ামী লীগ, তিনবার জাতীয় পার্টি, একবার করে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে বিগত সব কটি সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতারা এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উল্লেখযোগ্য ভোট পান। ফলে এখানে ভোটের মাঠে বরাবরই ইসলামি দলগুলোর ‘নির্দিষ্ট ভোটব্যাংক’ সব সময় আলোচনায় থাকে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ সৎ ও নির্লোভ ব্যক্তি হিসেবে স্থানীয়ভাবে তিনি সর্বজনমান্য। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আহমদ আল কবির। স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন হুছামুদ্দীন চৌধুরী। তার প্রয়াত বাবা আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী সারা দেশে ‘ফুলতলী হুজুর’ হিসেবে পরিচিত। আবদুল লতিফের তৈরি করা সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহের অসংখ্য ভক্ত ও মুরিদ আছেন। ফুলতলী অনুসারীদের সিলেট-৫ আসনে একটা ‘ভোটব্যাংক’ আছে।

এবার নির্বাচনে হুছামুদ্দীন চৌধুরী নিজেই প্রার্থী হওয়ায় এলাকায় তাকে ঘিরে ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ অন্য প্রার্থীরা অনেকটা বেকায়দায় পড়েছেন। এর মধ্যে গেল ৫ ডিসেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে হুছামুদ্দীন চৌধুরীর সাক্ষাৎ আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। বৈঠকের পর থেকে হুছামুদ্দীনের নির্বাচনী এলাকায় তার অনুসারীরা বিষয়টিকে ‘শুভ ইঙ্গিত’ বলে প্রচার শুরু করেন।

হুছামুদ্দীনকে সমর্থন দিয়ে জকিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌর শহরে কেটলি প্রতীকের পক্ষে প্রচার মিছিল করেছে। তারা প্রকাশ্যে মিছিল দিয়ে কেটলী মার্কাকে বিজয়ী করার আহবান জানান। এ মিছিলে নেতৃত্ব দেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সুলতান আহমদ প্রমুখ। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও ‘ওপর মহলের চাপে’ আওয়ামী লীগের ওই পক্ষ হুছামুদ্দীনের পক্ষে কাজ করছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে।

মিছিলে অংশ গ্রহণকারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও কাজলসার উইপ চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা হুছামুদ্দিন চৌধূরীে পক্ষে কাজ করছেন। মিছিল করেছেন। কারণ হুছামুদ্দিন ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই ছিলেন। তাই দায় শোধ করতে তারা চান হুছামুদ্দিন নির্বাচিত হোন।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এতে কোনো বাধা নেই। এ ব্যাপারে কঠিন কোনো নির্দেশনাও নেই।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুক উদ্দিন বলেন, ‘এলাকার সব মানুষ আমার পক্ষে। আওয়ামী লীগও ঐক্যবদ্ধ। তবে তলেতলে দলের কিছু নেতা-কর্মী হুছামুদ্দীনের পক্ষে আছেন। এরাই আওয়ামী লীগকে শেষ করে দিচ্ছে। তবে কাজ হবে না, নৌকার বিজয় হবেই।’

তবে হুছামুদ্দীন চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।

এ আসনের অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন জাতীয় পার্টির শাব্বীর আহমদ (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির কুতুব উদ্দিন আহমদ শিকদার (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ কংগ্রেসের বদরুল আলম (ডাব) ও মুসলিম লীগের (বিএমএল) খায়রুল ইসলাম (হাত-পাঞ্জা)। এখানে ভোটার ৪ লাখ ২ হাজার ৩২৫ জন।

এ বিভাগের অন্যান্য