রিসোর্টে ১২ তরুণ-তরুণীকে আটকের পর বিয়ে দিলেন এলাকাবাসী

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার একটি রিসোর্ট থেকে ১২ তরুণ-তরুণীকে আটক করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। পরে এদের মধ্যে ৮জনকে এলাকাবাসীর উদ্যোগে বিয়ে দেওয়া হয়। আর বাকী ৪ জনকে অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

রোববার দুপুরে দক্ষিণ সুরমার সিলাম এলাকার রিজেন্ট পার্ক এন্ড রিসোর্টে এমন ঘটনা ঘটে। পুলিশের উপস্থিতিতেই এমন ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর রাতে ওই রিসোর্ট বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার কয়েকজন প্রেমিকা-প্রেমিকা রিজেন্ট পার্ক এন্ড রিসোর্টে বেড়াতে যান। ‘অসামাজিক কাজ’ চলছে এমন অভিযোগ তুলে সিলাম এলাকার শতাধিক লোক বিকেলে ওই রিসোর্টে অভিযান চালান। এসময় তারা রিসোর্টের ৬ টি কক্ষ থেকে ৬ জোড়া তরুণ-তরুণীকে আটক করেন। আটককৃতদের বয়স ১৬ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। তাদের একটি কক্ষে আটকে রাখেন এলাকার লোকজন।

পরে পুলিশকে খবর দেয়া হলে মোগলাবাজার থানার একটি দল ঘটনাস্থলে যায়।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, তরুণ-তরুণীকে আটকের পর জড়ো হওয়া এলাকার লোকজন উত্তেজিত হয়ে পরেন। ওই রিসোর্ট এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে এমন অভিযোগ তুলে তারা রিসোর্টটি এবং আটক তরুণ-তরুণীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। এসময় রিসোর্টের একটি অংশে অগ্নিসংযোগও করা হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরে এলাকার একাধিক মুরব্বী ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে আটক করা তরুণ-তরুণীদের বিয়ে করানোর উদ্যোগ নেন। তার আগেই আটক তরুণ-তরুণীদের অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয়। অভিভাবকরা আসার পর সন্ধ্যার দিকে আটকদের মধ্যে ৪ তরুণের সাথে ৪ জন তরুণীর বিয়ে পড়ানো হয়। বিয়ের দেনমোহর ধার্য করা হয় ১০ লাখ টাকা। বাকী ৪ তরুণ-তরুণীর বিয়ের বয়স না হওয়ায় তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়।

মোগলাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে আটকের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পরে এলাকার মুরুব্বিরা তাদের অভিভাবকদের খবর দেন। অভিভাবকের সম্মতিতে কয়েকজনের বিয়ে দেওয়া হয় বলে শুনেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) সাইফুল ইসলাম বলেন, কেউ অপরাধ করে থাকলে পুলিশ তাকে ধরে আনবে। আদালত বিচার করবে। কিন্তু আটকের পর বিয়ে পড়ানোর কোন আইন নেই।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানি না। শুনেছি আটকদের মধ্যে ৮ জনের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিভাবে এটি করা হলো তা খোঁজ নিচ্ছি।

আট তরুণ-তরুণীর বিয়ে পড়িয়েছেন দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের কাজী আব্দুল বারী।

তিনি বলেন, “এলাকাবাসী ছেলেমেয়েদের আটক করেন। তারপর আমাকে খবর দিয়ে নেওয়া হয়। তখন এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে চার ছেলে ও চার মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয়। তিনটি বিয়ের দেনমোহর ১০ লাখ; আরেকটির দেনমোহর ১২ লাখ টাকা।”

কাজী বলেন, এসব ছেলে-মেয়ে সিলেটের বিশ্বনাথ, মোগলাবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ ও দক্ষিণ সুরমার এলাকার বাসিন্দা বলে নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন।

বিয়ের সময় স্থানীয় কয়েকজন বিএনপি নেতাও উপস্থিত ছিলেন বলে তুলে ধরেন তিনি।

ঘটনাস্থলে থাকা জাতীয়তাবাদী কৃষকদল সিলেট জেলার সদস্যসচিব তাজরুল ইসলাম তাজুল বলেন, “অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে আটক শুনে এলাকার প্রায় দুই হাজার মানুষ এসেছিলেন রিসোর্টে। আমরা চেষ্টা করেছি, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। এজন্য রিসোর্টের গেইট বন্ধ করেছিলাম।

“কিন্তু অনেকে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করেন। রিসোর্টে আগুন জেনারেটর থেকে লেগেছে। তবে কোনো রুমে আগুন লাগেনি। অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে ১৬ জন ছেলেমেয়েকে আটক করেছিল এলাকাবাসী। এর মধ্যে আটজনের বিয়ে এবং বাকি আটজনকে পরিবারের সদস্যদের কাছে দেওয়া হয়েছে।

তাজুল বলেন, “তবে রিসোর্টে ছেলেমেয়ে আরও বেশি ছিল। তারা স্থানীয়রা আসার আগেই চলে গেছে। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী রিসোর্টের মালিকের সঙ্গে বসেছি।”

এ ব্যাপারে রিজেন্ট পার্ক এন্ড রিসোর্টের কারো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে সন্ধ্যার পর রিসোর্টটির ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়- ‘অনিবার্য কারণবশত আমাদের রিসোর্টের সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকিবে’।

এ বিভাগের অন্যান্য