থানা চত্বরে যুবদল নেতাকে পিটিয়ে হত্যা
সিলেটের সময় ডেস্ক :
কুড়িগ্রামের উলিপুর থানায় সালিসের সময় প্রতিপক্ষের হামলায় পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল আলম (৩৮) নিহত হয়েছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত কর্মীরা প্রতিপক্ষের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।
আজ শনিবার বাদ আসর উপজেলার কাজিরচর মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে আশরাফুলকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে আশরাফুলকে থানা চত্বরে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা আয়নাল হক বাদী হয়ে আজ শনিবার ২০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের সমর্থকরা পিটিয়ে হত্যা করে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভীর উল ইসলামের পক্ষের যুবদল নেতা আশরাফুলকে।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান বুলবুল জানান, বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের সমর্থকরা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল আলমকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
তিনি সালিসে উপস্থিত নেতাকর্মীদের বরাতে আরও জানান, উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দোলন এলাকার এক ছেলেকে গুনাইগাছ ইউনিয়নের নন্দুনেফড়া এলাকার এক মেয়ের সঙ্গে (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় ওই ছেলের বাবা ছাত্রদলের এক নেতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। ঘটনা মিমাংসার জন্য গতকাল শুক্রবার থানার গোল ঘরে উভয় পক্ষ মিমাংসায় বসেন।
এ সময় রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকের পক্ষের লোকজন ছেলের পক্ষে অবস্থান নেন এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য ঘোষিত জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভীর উল ইসলামের পক্ষের লোকজন ছাত্রদল নেতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে সালিসে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এরই এক পর্যায়ে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের ওপর হামলা চালান। এ সময় পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফুল আলম ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হাসনাত রাজিবসহ কয়েকজন আহত হন। হামলার সময় ঘটনাস্থলে আশরাফুল আলম মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সহকর্মীরা তাকে দ্রুত উলিপুর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আশরাফুল পৌরসভার কাজিরচর এলাকার ডিস ব্যবসায়ী আয়নাল হকের একমাত্র ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, আশরাফুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে তাসভীর উল ইসলামের সমর্থকেরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আব্দুল খালেকের সমর্থক আমিনুল ইসলামের শুভেচ্ছা হোটেল ভাঙচুর করেন। এরপর হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা কৃষকদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু জাফর সোহেল রানা ও সাবেক ছাত্রদল নেতা ফিরোজ কবির কাজলের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় অগ্নিকাণ্ড এবং ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি সংঘঠিত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মেহেরুল ইসলাম জানান, আশরাফুল ইসলাম নামের এক যুবককে হাসপাতালে নেওয়া হয় রাত আনুমানিক ৮টার দিকে। পরীক্ষা করে দেখা যায় হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা বিএনপি সভাপতি হায়দার আলী মিয়া এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তাসভীর উল ইসলামকে বারবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেককে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি ছুটিতে ছিলাম। গত রাতেই কর্মস্থলে যোগ দেই। ঘটনা থানা চত্বরের বাইরে ঘটেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। নিহতের পিতা আয়নাল হক বাদী হয়ে শনিবার ২০ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ২৫ জনের বিরুদ্ধে উলিপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের সর্বোচ্চ গুরত্ব দিয়ে অভিযান চালাচ্ছি। প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পুলিশি টহল জোড়দার রয়েছে। বিকেল ৫টায় নিহতের বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়।’