ছাত্র আন্দোলনে হামলা: রাবি ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকসহ ৬ জনের ছাত্রত্ব বাতিল

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব এবং সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুসহ ছয় নেতার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন মেয়াদে ৩৩ জনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী বহিষ্কৃত জয়ন্ত কুমার রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের ছাত্র এবং মাদার বখস হল ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মিশকাত হাসানও একই হল ছাত্রলীগের নেতা এবং হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের ছাত্র। দুই সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ এবং ফয়সাল আহমেদ রুনু কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ড্রপ আউট হয়েছেন। সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং গোলাম কিবরিয়া উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।

দুই বছর বহিষ্কৃতরা হলেন- সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্র শামীম রেজা। তিনি আব্দুল লতিফ হল ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্র মিনহাজুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধু হলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক। ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ আত তাসরীফ ও আরবি বিভাগের ছাত্র আরিফুল ইসলাম।

এক বছর বহিষ্কৃতরা হলেন- সমাজকর্ম বিভাগের আলফি শাহরিন আরিয়ানা। তিনি বেগম রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দর্শন বিভাগের কিশোর পাল। তিনি মাদার বখস হল ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্রী জারিফা আহনাফ ইলমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্র আহসানুল হক মিলন।

ছয় মাস বহিষ্কৃত হয়েছেন- সমাজকর্ম বিভাগের আনিকা আলম উষা ও মরিয়ম আক্তার শান্তা। পাঁচ বছর টাকা জরিমানাসহ ছয় মাস বহিষ্কার হয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাস। কেবল পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার শাস্তি পেয়েছেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন নাবিল।

১৩ জন আবাসিকতা বাতিলের শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন- আইন বিভাগের তাজরীন আহমেদ খান মেধা শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি, ইংরেজি বিভাগের নবনিতা বিশ্বাস বঙ্গমাতা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকসহ চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের মোছা. আশা খাতুন, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের নুসরাত জাহান পাপড়ি, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নূর-ই-জান্নাত কথা ও ফারিনা জামান মিম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের লিমা খাতুন, সংস্কৃত বিভাগের বাবলি আক্তার, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের জাফরিন খান প্রিয়া, চারুকলা বিভাগের বাবলী ইসলাম নিঝুম, লোক-প্রশাসন বিভাগের রাইতাহ ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের কাজী উর্বি ইয়াসমিন রুপ এবং ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের আফ্রিদা বিনতে ইকবাল।

মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে ফোকলোর বিভাগের শামীমা ইয়াসমিন জীবন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের নাছরিন আক্তার নেহা, ইতিহাস বিভাগের তানজিনা আক্তার; চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের মোছা. হুমায়রা আক্তার এবং চারুকলা বিভাগের মোছা. তামান্না তাসনিম আরিতা। এছাড়া পাঁচজন শিক্ষার্থীর প্রাথমিক পর্যায়ে অপরাধ প্রমাণিত অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর আগে, গত ২১ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির তথ্য জানানো হয়। এতে র‌্যাগিং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলা, ষড়যন্ত্র, ইন্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, ভয়-ভীতি, হলে সিট বাণিজ্য এবং গণরুমের ছাত্রীদের জোরপূর্বক স্লোগান দিতে বাধ্য করা, হলের কক্ষের তালা ভেঙে কক্ষ দখল, গভীর রাতে ছাত্রীদের ঘুম থেকে উঠিয়ে মিটিং, ব্লাকমেইল, ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে তল্লাশি, হত্যার হুমকি ও মারধরসহ নানা অপরাধে এই শাস্তি প্রদান করা হয়।

এ বিভাগের অন্যান্য