পাপ থেকে বিরত থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

পাপ থেকে বেঁচে থাকা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। তাই এই কষ্টসাধ্য বিষয়ের জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশা নিয়ে চেষ্টা করলে সফলতা অনিবার্য। তবে এ জন্য কষ্ট করতে হবে এবং গুনাহ পরিত্যাগের ব্যাপারে আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলে আল্লাহর সাহায্যও মিলবে।

আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা আমাদের রাস্তায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, আমরা অবশ্যই তাদের আমাদের রাস্তাসমূহের দিকে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সত্কর্মশীলদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)

সুতরাং কুপ্রবৃত্তি যাতে গুনাহে লিপ্ত করাতে না পারে সে জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো ও ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং সদা প্রস্তুত থাকো।

আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২০০)

পাপ বর্জনে ধৈর্যের সঙ্গে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ধৈর্য ধারণ করতে চায়, আল্লাহ তাকে তাই দান করেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৬৯)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এক যুবকের কাছে গেলেন। তখন সে মুমূর্ষু অবস্থায় ছিল। তিনি বলেন, তোমার কেমন অনুভূত হচ্ছে? যুবকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তাআলার রহমতের আশা করছি, কিন্তু আবার ভয়ও পাচ্ছি আমার গুনাহগুলোর কারণে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে বান্দার হৃদয়ে এ রকম সময়ে এরূপ দুই জিনিস (ভয় ও আশা) একত্র হয়, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তার কাঙ্ক্ষিত জিনিস তাকে দান করেন এবং তাকে তার শঙ্কা থেকে নিরাপদ রাখেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৮৩)

প্রবৃত্তির অনুসারী না হওয়া

প্রবৃত্তির পূজারি হওয়ার কারণে মানুষ নানা পাপাচার ও নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সেই জন্য মহান আল্লাহ বান্দাকে প্রবৃত্তির অনুসারী হতে নিষেধ করেছেন এবং প্রবৃত্তি পূজারিদের থেকে দূরে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন।

কেননা তাদের সঙ্গে থাকলে তাদের রীতিনীতির অনুসারী হয়ে পড়বে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই বহু লোক অজ্ঞতাবশত নিজেদের প্রবৃত্তি দ্বারা তাড়িত হয়ে লোকদের পথভ্রষ্ট করে। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিষয়ে ভালোভাবেই অবগত।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১১৯)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আর তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবে না। আর তাদের ব্যাপারে সতর্ক থেকো, যেন তারা তোমাকে আল্লাহ প্রেরিত কোন বিধানের ব্যাপারে বিভ্রান্তিতে না ফেলে। কিন্তু তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে রেখ যে আল্লাহ চান তাদেরকে তাদের কিছু কিছু পাপের দরুন (পার্থিব জীবনে) শাস্তি প্রদান করতে। বস্তুত লোকদের মধ্যে অনেকেই আছে পাপাচারী।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৯)

আল্লাহ প্রবৃত্তি পূজারিদের উদাহরণ পবিত্র কোরআনে এভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘আর তুমি তাদের সেই ব্যক্তির কথা শুনিয়ে দাও, যাকে আমরা আমাদের অনেক নিদর্শন (নিয়ামত) প্রদান করেছিলাম। কিন্তু সে তা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। ফলে শয়তান তার পিছু নেয় এবং সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। যদি আমরা চাইতাম তাহলে উক্ত নিদর্শনাবলি অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমে অবশ্যই তার মর্যাদা আরো উন্নত করতে পারতাম। কিন্তু সে মাটি আঁকড়ে রইল এবং নিজ প্রবৃত্তির অনুসারী হলো। তার দৃষ্টান্ত হলো কুকুরের মতো। যদি তুমি তাকে তাড়িয়ে দাও তবু হাঁপাবে, আর যদি ছেড়ে দাও তবু হাঁপাবে। এটি হলো সেসব লোকের উদাহরণ, যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে। অতএব, তুমি এদের কাহিনি বর্ণনা করো, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৭৫-৭৬)

অন্যদিকে, বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) প্রবৃত্তি পূজাকে ধ্বংসকারী আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আর ধ্বংসকারী তিনটি বস্তু হলো—(১) প্রবৃত্তি পূজারি হওয়া, (২) লোভের দাস হওয়া এবং (৩) অহংকারী হওয়া। আর এটিই হলো সবচেয়ে মারাত্মক।’ (বায়হাকি শোআব, হাদিস : ৬৮৬৫)

এ বিভাগের অন্যান্য