কমেছে ভোগ্য পণ্য আমদানি, রমজানে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

দেশে ভোগ্য পণ্য আমদানি গত বছরের তুলনায় কমে যাওয়ায় পবিত্র রমজান মাসে এসব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। রমজান মাসে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার আগেভাগে ব্যবস্থা নিলেও শঙ্কা থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। দেশে রমজান মাস শুরু হবে আগামী বছরের মার্চের প্রথম সপ্তাহে। সেই হিসাবে রোজার বাকি চার মাস।

 

ভোগ্য পণ্যের মধ্যে রোজায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় ছোলা, খেজুর, ভোজ্য তেল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনিসহ আরো কিছু পণ্য। রমজানে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যবসায়ীরা তিন-চার মাস আগেই এসব পণ্য আমদানি করে থাকেন। এবার এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। সরকার রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে চার মাস আগেই ব্যবস্থা নিয়েছে।

 

চাল, গম, ডিম, ভোজ্য তেল, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা, মটর, মসলা, খেজুরসহ ১১টি পণ্য বাকিতে আমদানির সুযোগ দিয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে এসব প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) মার্জিন সর্বনিম্ন রাখতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে গত রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সার্কুলার জারি করেছে।

এ ছাড়া বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভোজ্য তেলের ওপর বর্তমানে প্রযোজ্য আমদানি পর্যায়ের মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে সরকার।

গত মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপনে এই ভ্যাট ছাড়ের কথা জানায়। মূলত রমজান মাসে প্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম যাতে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে থাকে, তাই এসব উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। 

চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই থেকে অক্টোবর) দেশে সারা বছর চিনির চাহিদা থাকে ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। এর মধ্যে গত চার মাসে আমদানি করা হয়েছে চার লাখ ৩৮ হাজার টন। অথচ গত বছর একই সময়ে পণ্যটি দুই লাখ সাত হাজার টন বেশি আমদানি করা হয়।

 

ওই সময় ছয় লাখ ৪৫ হাজার টন আমদানি করা হয়েছিল। একইভাবে (জুলাই-অক্টোবর চার মাসে) পাম তেল আমদানি করা হয়েছে সাত লাখ ৩৪ হাজার ৭০ টন। গত বছর আমদানি করা হয় ৯ লাখ ১১ হাজার টন। এবার আমদানি এক লাখ ৪৯ হাজার টন কম। ছোলার আমদানি মাত্র দুই হাজার ৬৬২ টন। অথচ গত বছর আমদানি করা হয়েছিল ১১ হাজার ৩৬৬ টন। এবার পণ্যটির আমদানি কমেছে আট হাজার ৬৮৪ টন। এবার চিনির আমদানি কমেছে ১৯ হাজার ৪৫৫ টন।

চলতি বছরের চার মাসে আমদানি করা হয়েছে ৮১ হাজার ৬৮৮ টন। অথচ গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি করা হয়েছিল এক লাখ এক হাজার ১৪৩ টন। তবে মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল আমদানি গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। গত চার মাসে সয়াবিন তেল আমদানি করা হয়েছে তিন লাখ ৯১ হাজার টন। গত বছর ছিল দুই লাখ ৯২ হাজার টন। ওই হিসাবে ৯৯ হাজার টন বেড়েছে। আর মসুর ডাল আমদানি করা হয়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার ৫৬০ টন। আর গত বছর একই সময়ে (জুলাই-অক্টোবর) আমদানি করা হয়েছিল ৬৫ হাজার ৯৯৬ টন। আমদানি বেড়েছে এক লাখ ২৩ হাজার ৫৬৪ টন।

ভোগ্য পণ্য আমদানিকারক ও খাতুনগঞ্জের মেসার্স কবির অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আলমগীর কবির বলেন, সরকার বাকিতে ১১ পণ্য আমদানির সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু বেশির ভাগ আমদানিকারক রোজা শুরু হওয়ার তিন মাস আগে থেকে আমদানি শুরু করেন। যারা আমদানি করার, তারা এরই মধ্যে করেছেন। এ ছাড়া এখন মানুষের কেনার ক্ষমতা ও চাহিদা আগের চেয়েছে কমেছে। বাজারে এসবের প্রভাব পড়বে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, বেশির ভাগ ব্যাংক টাকা দিতে পারছে না। এ ছাড়া ডলার সংকটে ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) খোলাও কমেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভোগ্য পণ্যের বাজারে। এ অবস্থায় এলসি খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো উদার না হলে আসন্ন রমজানে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

দেশের অন্যতম ভোগ্য পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিত্ সাহা বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের ক্রেডিট লাইন খারাপ  হওয়ায় ওসব ব্যাংক থেকে ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যাংকিং সুবিধা, বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের সহায়তায় সরবরাহ স্বাভাবিক রাখাটা বিবেচনা করা উচিত।

অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম আরো বাড়তি : সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে রোজায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছোলা, খেজুর ও ভোজ্য তেলের দাম আরো বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে ছোলার দাম কেজিতে ৫৪ শতাংশ বেড়ে খুচরায় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানের খেজুর কেজিতে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এক বছরের ব্যবধানে সব ধরনের ভোজ্য তেলের দামই বেড়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১২ শতাংশ বেড়ে ১৭০ থেকে ১৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বছরে মোটা চাল ব্রি-২৮ ও পাইজামের দাম কেজিতে ১৩ শতাংশ বেড়ে ৫৯ থেকে ৬৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে এক বছরের ব্যবধানে চিনির দাম কিছুটা কমেছে। ১২ শতাংশ দাম কমে খুচরায় খোলা চিনি কেজি ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

দেশের সবচেয়ে বড় খেজুরের পইকারি বাজার ঢাকার বাদামতলী। এখানের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সাথী ফ্রেশ ফ্রুটস লিমিটেডের ডিরেক্টর মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাড়তি শুল্কের কারণেই ব্যবসায়ীরা আমদানি বন্ধ রেখেছিল। তাই এখন পর্যন্ত নতুন খেজুর বাজারে আসেনি। সরকার রমজান মাস সামনে রেখে আমদানিতে সুবিধা দেওয়ায় আমদানিকারকরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। যদি আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়, তাহলে রমজানে খেজুরের দাম সহনীয় রাখা সম্ভব।’

রাজধানীর বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রমজান মাসে চালের চাহিদা খুব কম থাকায় কখনো দাম বাড়ে না। এরই মধ্যে ভারত থেকে স্বল্প পরিসরে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। চাল আমদানি পুরোপুরিভাবে শুরু হলে দাম এমনিতেই কমে যাবে।’

 

এ বিভাগের অন্যান্য