আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করতে বললেন মামুনুল হক

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

শুধু ছাত্রলীগ নয়, আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক। আজ শুক্রবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর তেমুহনীর লিল্লাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে খেলাফত মজলিস জেলা শাখা আয়োজিত এক গণসমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মামুনুল হক বলেন, ‘অন্তবর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে তারা প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ এবং তার রাজনীতি ছিল সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি। আমরা বলতে চাই- শুধু ছাত্রলীগ নয়, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকেও বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যার বিচারের দাবি এবং নৈরাজ্যবাদ প্রতিরোধে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘যারা আমার মায়ের বুক খালি করেছে, যারা দেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনকে মৃত্যুপুরী করেছে, সারা বাংলার ৫৫ হাজার বর্গ মাইলকে এ দেশের সন্তানদের রক্ত দ্বারা লাল করেছে, সে আওয়ামী লীগের বাংলাদেশ রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।’

মামুনুল হক বলেন, ‘২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের নবীপ্রেমী তৌহিদী জনতার ওপর পরিচালিত গণহত্যায় এখন পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই গণহত্যার জন্য ২০২১ সালের মোদীবিরোধী আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনা এবং খুনির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হতে হবে। সে মামলায় বিচার করতে হবে। বাংলার মানুষ ইতিহাসের জঘন্যতম খুনির বিচার দেখতে চায়।’

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, ‘যে দেশে ফ্যাসিবাদ উৎখাতের জন্য স্বৈরাচার পতনের জন্য হাজার হাজার মানুষ জীবন দিয়েছে, শুধু ১ জুলাই থেকে আগস্টের সর্বশেষ রিপোর্ট পর্যন্ত এক হাজার ৬৩২ জন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আরও কত অসংখ্য মানুষ গুমের শিকার হয়েছে, তাদের লাশের হদিস পরিবারের কাছে নেই। এভাবে বিগত ১৫ বছরে কত হাজার মানুষকে হত্যা করে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মসনদকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছিল।’

মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছে জানিয়ে খেলাফত মজলিসের এ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ যাতে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার করে দেশকে তলাবিহীন ঝুঁড়িতে পরিণত করেছে তারা। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা দুর্নীতি করেছে। বাংলাদেশের অস্তিত্বকে বিপন্ন করাই ছিল শেখ হাসিনার রাজনীতি। অন্য আরেকটি দেশের সেবাদাসী হিসেবে বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদকে কুক্ষিগত করে এদেশের মানুষের ইচ্ছা এবং অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে সে রাজনীতি করে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন খুনি শেখ হাসিনা, যার বিরুদ্ধে শতাধিক হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে, বাংলাদেশের আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একজন খুনি, একজন হত্যাকারী, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে ভারত আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে দিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, যে কোনো মূল্যে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সহযোগিতা নিয়ে হলেও এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। ইন্টারপোলে রেড অ্যালার্ট জারি করে খুনি শেখ হাসিনাসহ তার সব দোসরকে ধরে এনে বাংলার মাটিতে বিচার করতে হবে।’

ইনসাফ পূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা জানিয়ে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘আমরা চাই একটি বৈষম্যবিহীন বাংলাদেশ গড়তে, ইনসাফ পূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে। বৈষম্যহীন ও ইনসাফপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে হলে মানব রচিত তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে পূর্ণাঙ্গ ইনসাফ সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন আল্লাহ প্রদত্ত রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। সে বন্দোবস্ত হলো খেলাফত ব্যবস্থা৷ আমরা ফ্যাসিবাদ উৎখাত করে আমাদের যাত্রা থামিয়ে দিতে চাই না। আমরা চাই পূর্ণাঙ্গ খেলাফত কায়েমের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ইনসাফপূর্ণ সমাজ গড়তে।’

গণ সমাবেশে খেলাফত মজলিসের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা লোকমান হোসাইনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মাদ ফয়সাল, মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, মাওলানা আবু সাঈদ নোমান ও মাওলানা ওজায়ের আমিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্মীপুরের সমন্বয়ক মো. বায়েজিদসহ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা এবং বরেণ্য ওলামায়ে কেরাম।

এ বিভাগের অন্যান্য