যুক্তরাজ্যের ‘বিল্ডিং সেফটি মিনিস্টার’র পদ ছাড়লেন সিলেটের রুশনারা

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

সাত বছর আগে লন্ডনের যে ভবনের অগ্নিকাণ্ড নাড়া দিয়েছিলে বিশ্বকে, সেই গ্রেনফেল টাওয়ার নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানির অনুষ্ঠানে গিয়ে সমালোচনার মুখে দায়িত্বের কিছু অংশ ছেড়ে দিয়েছেন ব্রিটিশ সরকারের উপমন্ত্রী  সিলেটের রুশনারা আলী।

স্কাই নিউজ লিখেছে, গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি রুশনারা আর ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন না। তবে তিনি আগের মতই আবাসন বিষয়ক উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে যাবেন। গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করা তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

বেঁচে যাওয়া ও শোকার্ত পরিবারগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন গ্রেনফেল ইউনাইটেড রুশনারাকে অপসারণের দাবি জানানোর পর তিনি দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন বলে সানডে টাইমস জানিয়েছে।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ এমপি বলেছেন, গ্রেনফেল অগ্নিকাণ্ডে যারা জীবিত আছেন, তাদের ‘অনুভূতি’ তিনি বুঝতে পারছেন। সরকার ও গ্রেনফেল কমিউনিটির মধ্যে সম্পর্কে বিশ্বস্ততা ‘প্রয়োজন’, আর সে কারণেই তার এ সিদ্ধান্ত।

স্কাই লিখেছে, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা আর ব্যবসায়ীদের অনেকেই বার্ষিক পলিসি ফোরাম ‘ফ্রাঙ্কো-ব্রিটিশ কলক’ এ অংশ নিয়ে থাকেন। রুশনারাও নিয়মিত সেখানে যেতেন।

এই আয়োজনে গত একযুগ ধরে (২০১২-২০১৪) কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন সেন্ট-গোবাইনের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান পিয়েরে-আন্দ্রে ডি চ্যালেন্ডার। ওই ফরাসি কোম্পানি কিছুদিন আগেও সেলোটেক্সের বেশিরভাগ অংশের মালিক ছিল। আর এই সেলোটেক্সই গ্রেনফেল টাওয়ারের প্যানেলের পেছনে ব্যবহৃত দাহ্য ইনসুলেশন তৈরি করেছিল।

গ্রেনফেল তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব কোম্পানি ভবনের আবরণের জন্য ব্যবহার করা দাহ্য পণ্যগুলোকে অসৎভাবে ‘অগ্নি নিরাপদ’ দাবি করে সরবরাহ করেছিল-তার একটি সেলোটেক্স। এসব নির্মাণ সামগ্রী যে দাহ্য তা জানত ওই কোম্পানি।

২০১৭ সালের ১৪ জুন স্থানীয় সময় ভোররাতে ২৪ তলা গ্রেনফেল টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে ৭২ জনের মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে লন্ডনের আবাসিক ভবনে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সেটি।

তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষায় ভবনের বাইরে ফলস প্যানেলের পেছনে যে দাহ্য ইনসুলেশন ব্যবহার করা হয়েছিল, তার কারণেই সেখানে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য।

এক বিবৃতিতে রুশনারা বলেন, “মন্ত্রী হওয়ার আগে আমি ফ্রাঙ্কো-ব্রিটিশ কলকের ফরাসি প্রতিনিধি দলকে সেন্ট গোবাইনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। তবে আমি বুঝতে পারছি, তাদের (গ্রেনফেল ইউনাইটেডের) অনুভূতি গুরুত্বপূর্ণ এবং সে কারণেই আমার মনে হয়েছে, ভবন সুরক্ষা পোর্টফোলিও কারো কাছে হস্তান্তর করা ভালো।”

তিনি বলেন, “ভবনগুলোকে নিরাপদ করা এবং আরেকটি ট্র্যাজেডি যাতে না ঘটে, সে নিশ্চিত করা আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার এই কাজে উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিপরিষদের সবারই সমর্থন আছে।”

গত জুলাইয়ে টানা পঞ্চমবারের মত লেবার পার্টি থেকে এমপি হন রুশনারা আলী। বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসনের এমপি তিনি।

রুশনারা আলী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নের ভুরকি গ্রামের প্রবাসী আফতাব আলী ও রানু দম্পত্তির দ্বিতীয় কন্যা। ১৯৭৫ সালের ১৪ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম স্বপ্না। বাবার ও মামার বাড়ি পাশাপাশি হওয়ার কারণে রুশনারা আলির ছেলেবেলা কেটেছে নানি গুলেস্তা বিবির সান্নিধ্যে। মাত্র সাত বছর বয়সে উপজেলার ভুরকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করার সময় বাবা-মায়ের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান রুশনারা। সেখানে যাওয়ার পর তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডনের মালবেরি স্কুল ও টাওয়ার হ্যামলেটস কলেজে লেখাপড়া শেষে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি, অর্থনীতি ও দর্শনে ডিগ্রি অর্জন করেন।

রুশনারা আলী ২০১০ সালের ৬ মে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রথম বাঙালি এমপি হয়ে ইতিহাস রচনা করেছিলেন। ২০১০ থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এরপর তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে ছায়া  শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। রুশনারা আলি ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ছাড়াও পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও কাজ করেছেন।

এ বিভাগের অন্যান্য