মেয়রের বাড়িতে আগুনে দগ্ধ স্কুলছাত্র, ২৭ দিন পর ঢামেকে মৃত্যু

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের দিন বিকেলে বরগুনার আমতলী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতিয়ার রহমানের বাসায় দুর্বৃত্তরা আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই অগ্নিকাণ্ডে দশম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত স্কুল শিক্ষার্থী ইহতাশিমুল হক তেশাম (১৭) আগুনে দ্বগ্ধ হয়। গত ২৭ দিন পর্যন্ত মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে সেই মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করলেন তেশাম।

রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

 

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ তার নিজ বাড়ি আমতলী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ছেলেকে হারিয়ে মা ইল্লিন বেগম ও বাবা রবিউল ইসলাম বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। 

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর মেয়র মতিয়ার রহমানের বাসায় আগুন দেয় একদল দুর্বৃত্ত। ওই সময় মেয়রের বাসার দোতলায় আমতলী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের সিকদার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলামের ছেলে ইহতাশিমুল হক তেশাম প্রায় আড়াই ঘণ্টা আটকে থাকে।

তখন সে আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। 

স্থানীয় ও স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে চার ঘণ্টা চিকিৎসার পর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে পাঠানো হয়।

সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ২৭ দিন পর রবিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। 

তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ছেলেকে হারিয়ে মা ইল্লিন বেগম, শেখ বাবা রবিউল ইসলাম ও ছোট দুই ভাই আসাদুল্লাহ রায়হান ও হোসাইন আহম্মেদ ত্বোহা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।

রবিবার বিকালে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইহতাশিমুল তেশামের প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে রাতেই তেশামের মরদেহ আমতলীতে নিয়ে আসা হয়। সোমবার সকালে তার দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের সিকদার সড়কে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

প্রতিবেশীরা জানান, ইহতাশিমুল হক তেশাম নম্র ভদ্র ছেলে হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি সে বিদ্যুতের কাজও করত। তার আয় দিয়েই তাদের পরিবারের ভরণপোষণ চলতো। তেশামের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।

তেশামের মা ইল্লিন বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মোর আর কিছুই রইল না। মোর পোলায় ল্যাহাপড়ার পাশাপাশি বিদ্যুতের কাম হরতো। হেই আয় দিয়াই মোরা সংসার চালাইতাম। মোর হেই পেলাডারে আগুনে পুইর‌্য হত্যা হরছে। আল্লায় মোর পোলার হত্যার বিচার করবে।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, বিষয়টি জেনেছি। দুই দফা জানাজা নামাজ শেষে ওই স্কুল শিক্ষার্থীর মরদেহ তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য