সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালাতে গিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক নেতার মৃত্যু

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না মারা গেছেন। ভারতে পালাতে গিয়ে মেঘালয়ের শিলং পাহাড়ে ওঠার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। শুক্রবার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে।

ভারতের কলকাতায় অবস্থান করা তার এক ঘনিষ্ঠজন শনিবার পান্নার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ঘনিষ্ঠজন জানান, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন আত্মগোপনে থেকে ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন পান্না। সীমান্ত পার হয়ে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ের একটি পাহাড়ে ওঠেন তিনি। পাহাড় পার হয়ে ওপারে যাওয়ার চেষ্টার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এতেই তার মৃত্যু ঘটে।

তবে পান্নার মৃত্যু নিয়ে ভিন্ন তথ্যও মিলেছে। কেউ কেউ বলছেন, পাহাড়ে ওঠার সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে তিনি মারা যান।

পান্নার বড় ভাইয়ের শ্যালক জসিম উদ্দিন খান। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল পান্নার। জসিম সমকালকে জানান, তিন দিন আগে পান্নার সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়েছে। ২৫ জুলাই তিনি পিরোজপুর শহরের বাড়িতে এসে দু’দিন পর ফিরে যান।

জসিমের দেওয়া তথ্যমতে, বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন,  সিলেটের তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন পান্না। ওপারেই তার মৃত্যু হয়। গুলি, নাকি স্ট্রোকজনিত কারণে, সেটা নিশ্চিত হতে পারেননি তারা। সীমান্তের ভারত প্রান্তের একটি থানায় তার মৃতদেহ রয়েছে বলে জেনেছেন।

একই তথ্য জানান, পান্নার ভাগনে ও কাউখালীর চিড়াপাড় সাতুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েকুজ্জমান মিন্টু।

ভিন্ন একটি সূত্র বলছে, ভারতে পালানোর সময় পান্নার সঙ্গে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনও ছিলেন। তবে বিষয়টি নিশ্চিত হতে আমিনের মোবাইল ও হোয়াটসআপ নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। আরেকটি সূত্র বলছে, পান্নার সঙ্গে ঝালকাঠি ছাত্রলীগের একজন নেতা ছিলেন।

তবে এ বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পান্নার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়েও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা জানান, কেউ বৈধ বা অবৈধ যেভাবেই ভারতে যাক, মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। শুধু বিষয়টি যে কোনো পক্ষ থেকে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসে জানাতে হবে। এর পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত হবেন, মৃত ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক কিনা। পরে দূতাবাসের তহবিল থেকে বা স্বজনের খরচে মৃতদেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করে দূতাবাস।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন ইসহাক আলী খান পান্না। সেদিনই তাঁর পিরোজপুর শহরের পাড়েরহাট সড়কের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। পান্নার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার বেকুটিয়া গ্রামে। তবে গ্রামের বাড়িতে তাঁর যাতায়াত তেমন নেই। পিরোজপুরে গেলে শহরের বাড়িতেই থাকতেন তিনি।

ইসহাক আলী পান্নার স্ত্রী আইরীন পারভীন বাঁধন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল ৪৫ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। এর পর পান্না আর বিয়ে করেননি।

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ১৯৯৪ সালের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন পান্না। ওই সম্মেলনে নির্বাচিত সভাপতি একেএম এনামুল হক শামীম পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, একাধিকবার এমপি ও উপমন্ত্রী হলেও পান্না বরাবরই এসবের বাইরে ছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান পান্না। পরে ১৪ দলীয় জোটগত নির্বাচনের কারণে সরে যেতে হয় তাঁকে। পেশাগত জীবনে বীমা কোম্পানি ডায়মন্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারমান ছিলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।

এ বিভাগের অন্যান্য