প্রধানমন্ত্রীর বিরোধী অবস্থানে যাওয়ায় ব্রিটেনে দল থেকে বহিস্কার আপসানা

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

দলের অবস্থানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে ভোট দেওয়ায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আপসানা বেগমসহ সাত ব্রিটিশ এমপিকে লেবার পার্টি থেকে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের আদেশে তাদের বহিষ্কার করা হয়।

পার্লামেন্টে উত্থাপিত দুই সন্তানের সুবিধার সীমা তুলে নেওয়ার পক্ষে ভোট দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো। তবে তাদের সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকবে।

বহিষ্কৃতরা হলেন- আপসানা বেগম, জন ম্যাকডোনেল, রিচার্ড বার্গন, ইয়ান বাইর্ন, রেবেকা লং-বেইলি, ইমরান হোসেন ও জারাহ সুলতানা। এ ছয় মাস দলে তাদের পদবি ও দায়িত্ব স্থগিত থাকবে। পরে তারা আবার দলের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারবেন। তবে কারও কারও শাস্তি আরও বাড়তেও পারে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, রেকর্ড সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়ের পর এ প্রথম কিয়ার স্টারমার বিরোধিতার মুখে পড়েন। এ ঘটনায় দলের মধ্যে আলোচনার ঝড় বইছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিয়ার তার দলে কোনো বিরোধিতা সহ্য করবেন না- বহিষ্কারের মাধ্যমে এটির ইঙ্গিত দিলেন তিনি।

জানা গেছে, যুক্তরাজ্যে দুই সন্তানের জন্য ইউনিভার্সাল ক্রেডিট বা চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট (সামাজিক সুবিধা) দাবি করতে পারেন মা-বাবা। এর সুবিধায় সন্তানের সীমা তুলে দিতে সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। বিলটি পাস হলে দুইয়ের বেশি সন্তানের জন্যও সুবিধা দাবি করা যেত। তেমনি বাড়ত সরকারি ব্যয়। এরই পক্ষে ভোট দেন ওই সাত এমপি। যদিও প্রস্তাবটি পাস হয়নি। পক্ষে ১০৩ ও বিপক্ষে ৩৬৩ ভোট পড়ায় তা বাতিল হয়ে যায়।

ভোট দেওয়ার আগে আপসানা বেগম ফেসবুকে লেখেন, ‘যুক্তরাজ্যের মধ্যে শিশু দারিদ্র্যের সর্বোচ্চ হারের কিছু অংশ পূর্ব লন্ডনে। আমি আজ দুটি শিশু সুবিধার সীমা বাতিল করতে ভোট দেব।’ পরে পক্ষে ভোট দেওয়ার কারণেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে এক্সে পোস্ট দিয়ে নিশ্চিত করেন।

উল্লেখ্য, লেবার পার্টির মনোনয়ন পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো পার্লামেন্ট সদস্য হয়েছেন আপসানা বেগম। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসের পপলার অ্যান্ড লাইমহাউস আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। নির্বাচনে ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী গ্রিন পার্টির নাথালি বেইনফিট পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৭৫ ভোট।

জানা গেছে, নির্বাচনে সাবেক স্বামীকে হারিয়েছেন আপসানা বেগম। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তার সাবেক স্বামী এহতেশামুল হকও। তবে জনপ্রিয়তায় তার ধারেকাছেও যেতে পারেননি তিনি।

নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, আপসানা বেগম পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫৩৫ ভোট। পূর্ব লন্ডনের পপলার অ্যান্ড লাইসহাউস থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন গ্রিন পার্টির নাথালি বেইনফিট। তিনি পান ৫ হাজার ৯৭৫ ভোট। এ ছাড়া কনজারভেটিভ পার্টির ফ্রেডি ডউনিং তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। তিনি পান ৪ হাজার ৭৩৮ ভোট। আর সর্বশেষ অবস্থানে রয়েছেন প্রাক্তন স্বামী এহতেশামুল হক। তিনি পান চার হাজার ৫৫৪ ভোট।

২০১৯ সালের প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য হন আপসানা। ওয়েস্টমিনিস্টার পার্লামেন্টে প্রথম হিজাব পরিহিত সংসদ সদস্য তিনি। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জোরালো ভূমিকা রাখেন দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত এই নেতা। গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েও আলোচনায় এসেছিলেন আপসানা।

আপসানা বেগমের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জে।

এ বিভাগের অন্যান্য