দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন শেষে সিলেট বিএনপি ‘নীরব’

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে আন্দোলন ইস্যুতে অনেকটা নীরব হয়ে পড়েছে সিলেট বিএনপি। নির্বাচনের আগে ঢাকার নির্দেশে টানা আন্দোলন করলেও নির্বাচনের পর থেকে সিলেটে তেমন একটা মাঠে দেখা যাচ্ছে বিএনপি। তবে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে ভোটে না যেতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করে সিলেট বিএনপি। বর্তমানে জেলা বিএনপির উদ্যোগে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম।

এদিকে, আন্দোলন নিয়ে অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন করেছে দলটি। ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থতার পর এ মূল্যায়ন করা হয়। এ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সিলেট বিএনপির নানা চিত্র।

দলের নিজস্ব মূল্যায়ন বলছে- সিলেট বিভাগে বিএনপির রাজনীতি অনেকটা বিদেশনির্ভর। বিশেষ করে লন্ডনে অবস্থানরত নেতাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ। প্রায় প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিট কমিটিতে অর্থের ছড়াছড়ি। কমিটির পদ ভাগাভাগিতে গলাগলি থাকলেও, নেতাদের বেশির ভাগই আন্দোলন প্রশ্নে জড়িয়েছেন দলাদলিতে। ফলে মহানগর, জেলা-উপজেলার তৃণমূল পর্যন্ত রয়েছে কোন্দল।

আন্দোলন নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ৭ জানুয়ারির একতরফা দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থতার পর এ মূল্যায়ন করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট বিভাগে একটি মহানগর ও চারটি সাংগঠনিক জেলা কমিটি রয়েছে। প্রভাবশালী নেতা ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পর এ বিভাগের নেতৃত্বে আসেন এম ইলিয়াস আলী। এক যুগের বেশি সময় তিনিও নিখোঁজ। সাইফুর রহমানের পর সিলেট বিএনপির অভিভাবক বলা হতো মোহাম্মদ আবদুল হককে (এম এ হক)। ২০২১ সালে তাঁর মৃত্যুর পর থেকে অভিভাবকহারা বিএনপি। যদিও হাল আমলে সাবেক মেয়র ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী লাইম লাইটে এলেও তাঁকে কোণঠাসা করতে তৎপর আরেক অংশ। আরিফুল ছাড়াও সিলেটের তিন নেতা তাহসিনা রুশদীর লুনা (ইলিয়াস আলীর স্ত্রী), খন্দকার আবদুল মুক্তাদির এবং ড. এনামুল হক চৌধুরী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে মুক্তাদিরের নিয়ন্ত্রণেই জেলা বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের বেশির ভাগ কমিটি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবনের নির্লিপ্ততায় আন্দোলন শেষে রদবদল প্রক্রিয়ায় জনপ্রিয় ও সক্রিয় নেতা জি কে গউসকে ওই পদে বসানো হয়েছে। সহসাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে মিফতাহ সিদ্দিকীকে।

সিলেট জেলা বিএনপিতে ২০২২ সালে ‘অ্যারেঞ্জ’ কাউন্সিলের মাধ্যমে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী সভাপতি ও এমরান আহমদ চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন। এর প্রায় এক বছর পর গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে নেতাকর্মীর। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদে প্রবাসীদের রাখায় বিভক্তি দেখা দিয়েছে। নেতাদের অভিযোগ, জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজ নির্বাচনী এলাকার আস্থাভাজনদের কমিটিতে পদ দিয়েছেন। ফলে সিলেটে দলের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। ত্যাগীদের দূরে ঠেলে দেওয়ায় বিগত আন্দোলনে জেলা বিএনপির নেতারা কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। জেলা সভাপতি আন্দোলনের সময় বেশিরভাগ ঢাকায় ছিলেন। তবে ব্যতিক্রম যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, তিনি আন্দোলনে সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেছেন

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিনার, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি আহসান ছাড়াও জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা মাঠে ছিলেন। তবে যুবদলের কার্যক্রম তেমন দৃশ্যমান ছিল না। আন্দোলনে দলীয় তহবিল তছরুপের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে জেলা বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে।

এদিকে, ইলিয়াস আলীর অনুপস্থিতিতে স্তিমিত বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জের রাজনীতি। যদিও ইলিয়াসপত্নী তাহসিনার রুশদীর লুনা নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছেন। দক্ষিণ সুরমা ও ফেঞ্চুগঞ্জের নেতাকর্মীরা বর্তমান জেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আহমেদের পক্ষ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। দিলদার হোসেন সেলিমের মৃত্যুর পর গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে বিএনপির কোনো নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে দল বিভক্ত কয়েক ধারায়। এর মধ্যে জেলা কমিটির সহসভাপতি মামুনুর রশীদ ওঠেন-বসেন বর্তমান সভাপতির কথায়। তবে শক্ত হাতে হাল ধরে আছেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও সাবেক সহসভাপতি আশিক উদ্দিন চৌধুরী। আন্দোলনের মাঠে নেতাকর্মী নিয়ে সক্রিয় ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার রনি সরওয়ার চৌধুরীও ছিলেন নির্যাতিত নেতাকর্মীর পাশে।

গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে ত্রিধারায় বিভক্ত বিএনপি। এর মধ্যে জেলার সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম জেলা ও মহানগরের নেতাকর্মীর পাশে ছিলেন। নেতাকর্মীরা পাশে পাননি ২০১৮ সালে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলার সদস্য ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় জাসাস সভাপতি নায়ক হেলাল খানকে। তবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী মাঠে থাকার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, সিলেট মহানগর বিএনপিতে গত বছর মার্চে কাউন্সিলের মাধ্যমে নাছিম হোসেইন সভাপতি ও ইমদাদ হোসেন চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক হন। দেড় বছর গেলেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি। পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। সিলেট মহানগর নিয়ে প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যেও রয়েছে বিভক্তি। এক সময় সাইফুর রহমান ও ইলিয়াস আলীর পক্ষে বিভক্ত ছিলেন নেতাকর্মীরা। এখন বিভক্তি নেতৃত্বে আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী। আন্দোলনে মহানগর সভাপতি কিংবা মুক্তাদির তেমন ছিলেন না। সাধারণ সম্পাদক সক্রিয় ছিলেন, কারাগারেও গেছেন। আরিফুল হক চৌধুরীও আন্দোলনের মাঠে ছিলেন।

এ বিভাগের অন্যান্য