ঈদের আগে ঘর পেলো ১৮ হাজার পরিবার
সিলেটের সময় ডেস্ক :
কোরবানির ঈদের আগে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬ পরিবার পেলো নতুন ঘর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের আবাসন কর্মসূচি আশ্রয়ণ-২ পরিকল্পনার আওতায় সারাদেশে গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারগুলোকে এ ঘর উপহার দিলেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা ও ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা যেমন জনগণের সেবক হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছিলেন, আমিও তেমনি জনগণের সেবক হিসেবে গড়ে তুলেছি। বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের মাধ্যমে সবার ভাগ্য বদলেছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তাদের চিন্তার কিছু নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে সরকার আছে। যাদের ঘর নষ্ট হয়েছে তাদের ঘর করে দেবে সরকার।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘর আপনার, যত্ন নিতে হবে। বিদ্যুৎ, পানির ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাথে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদেরও ঘরে করে দেওয়া হবে। মানুষের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে।’
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে লালমনিরহাটের এক হাজার ২৮২টি, কক্সবাজারে ২৬১টি ও ভোলা জেলায় এক হাজার ২৩৪টি বাড়ি হস্তান্তর করেন।
নতুন ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ও উপজেলা নিয়ে সারাদেশে জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৮টি এবং উপজেলা ৪৬৪টি।
নতুন করে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলাগুলো হলো- ঢাকা, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, বরগুনা, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রথম ধাপে ৬৩ হাজার ৯৯৯টি, দ্বিতীয় ধাপে ৫৩ হাজার ৩৩০টি, তৃতীয় ধাপে ৫৯ হাজার ১৩৩টি ও চতুর্থ ধাপে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি বাড়ি বিতরণ করেন।
প্রকল্পের আওতায় ভূমি ও গৃহহীন প্রতিটি পরিবারকে দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ জমির মালিকানা দিয়ে একটি আধা-পাকা বাড়ি দেয়া হচ্ছে, যা স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই হবে। প্রতিটি বাড়িতে দুটি রুম, একটি রান্নাঘর, একটি টয়লেট ও বারান্দা রয়েছে।
১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫৩টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়/সংস্থাসহ গৃহ নির্মাণ করে ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন করা হয়েছে ৮ লাখ ৬৭ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে। পাঁচজন করে এক পরিবার হিসেবে পুনর্বাসিত জনসংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৪৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫২০।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মোট পুনর্বাসিত জনসংখ্যা ২৯ লাখ ১০ হাজার ২৬৫। কেবল মুজিববর্ষের বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে পুনর্বাসিত হয়েছেন ১৩ লাখ ৩০ হাজার ৬০ জন ছিন্নমূল মানুষ।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ হিসেবে পরিচিত। জমি ও ঘর নেই এমন দরিদ্র পরিবারগুলোকে সেমিপাকা একক গৃহের পাশাপাশি দুই শতাংশ জমির মালিকানার দলিলপত্র এবং জমি আছে, কিন্তু জরাজীর্ণ বাড়ি– এমন অনেক পরিবারকে সরকারি খরচে ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রকল্প এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা এবং খাবার পানির জন্য গভীর ও অগভীর নলকূপ ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, অভ্যন্তরীণ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং পুকুর খনন ও বৃক্ষরোপণ করে উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
কয়েকটি প্রকল্পে মসজিদ-মন্দির ও কবরস্থান নির্মাণ ছাড়াও সুবিধাভোগীদের কৃষিকাজ, মৎস্যচাষ, গবাদি পশু পালন, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, সেলাইসহ আত্মকর্মসংস্থানের নানা প্রশিক্ষণ এবং সমবায় সমিতির মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে।
যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভিন্ন কলকারখানা কিংবা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরি, কাউকে যানবাহন কিনে দিয়ে অথবা কাউকে ছোট দোকান দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
আশ্রয় পাওয়া দরিদ্র পরিবারগুলো নিজস্ব জমিতে কৃষিকাজ, শাকসবজির ফলন, হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালন এবং দোকানপাট করে নিজেদের জীবনে আর্থিক সচ্ছলতা আনছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর মাধ্যমে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জীবনের নিশ্চয়তাও পাচ্ছেন।