বান্দরবানে ফের গুলি, আগের ঘটনার দায় স্বীকার করল কেএনএফ

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

বান্দরবানের রুমায় গতকাল শনিবার বিকেল ৫টার দিকে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা যৌথ বাহিনীর একটি টহল দল লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে কেউ হতাহত হওয়ার খবর জানা যায়নি। বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

 

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, আক্রান্ত হওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনীও পাল্টা জবাব দেয়। এতে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যায়। লাইরুমপিপাড়া এলাকাটি কেএনএফের বিচরণ ক্ষেত্র বলে পরিচিত। এ ঘটনার পর এলাকায় উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।

 

এদিকে গত শুক্রবার সেনাবাহিনীর ওপর সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে কেএনএফ। নিজস্ব ফেসবুক পেজে তাদের মিডিয়া উইং জানায়, কেএনএফের একটি কমান্ডো টিম এবং সেনাবাহিনীর একটি গ্রুপ গত শুক্রবার বিকেলে মুখোমুখি হয়ে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষ ফায়ার ওপেন করে। তবে এ ঘটনায় কেএনএফের কেউ হতাহত হয়নি বলে উল্লেখ করে তারা।

 

রুমায় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে যৌথ বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। যৌথ বাহিনীর সদস্যরা গতকালও রুমায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছেন।

গত ১৮ দিন ধরে চলমান যৌথ বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী চিরুনি অভিযানের মধ্যেই গত শুক্রবার বিকেলে বান্দরবানের রুমা উপজেলার রুমা খাল, রেমাক্রি প্রাংসা, পাইন্দু ও রাঙামাটির বিলাইছড়ির বড়থলি সীমান্ত এলাকায় তুমুল গোলাগুলির সংবাদ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে স্থানীয় বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যৌথ বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে পাহাড়ের সেনা ক্যাম্পে যৌথ বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রামে নেওয়া হয়।

ওই ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের ধরতে যৌথ বাহিনী অভিযান আরো জোরদার করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, কেএনএফ ও কেএনএর সদস্যদের চলাচলের সব কয়টি পথ বন্ধ করে দিয়েছে তারা।

দোকানপাট এখনো বন্ধ

রেমাক্রি প্রাংসা ও বড়থলির মধ্যবর্তী এলাকায় গোলাগুলির ঘটনার পর থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া দোকানপাট গতকালও খোলা হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, যৌথ বাহিনীর সাঁজোয়া যানগুলো চলাচল করতে দেখা গেছে। রাস্তায় সন্দেহভাজন কাউকে পেলে তারা তাকে তল্লাশি করছে। পরিচয় শনাক্ত হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

রুমা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৭ এপ্রিল থেকে বাজারের ওষুধের দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। মুদি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কিছু দোকান খোলা হলেও পাঁচ কেজি চাল এবং আধা কেজির বেশি অন্য কোনো পণ্য বিক্রি করছেন না দোকানিরা। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসীদের খাদ্য ও ওষুধের সাপ্লাই চেইন বন্ধ করতে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এদিকে সেনাপ্রধানের শনিবার চট্টগ্রাম সেনানিবাস এবং সিএমএইচ পরিদর্শনের কথা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সিএমএইচে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ সৈনিকদের খোঁজখবর নিতেই তিনি সেখানে এসেছেন।

সম্প্রতি রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় গত ৫ এপ্রিল থেকে সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান শুরু করে যৌথ বাহিনী। অভিযানে এ পর্যন্ত কেএনএফ সদস্য, তাদের সহযোগীসহ ৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫২ জনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

শান্তি সংলাপ পুনরায় শুরু করায় একমত

বান্দরবানে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলার পরিস্থিতিতে কেএনএফের সঙ্গে শান্তি সংলাপ পুনরায় শুরু করার বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (কেএসআই) মিলনায়তনে বান্দরবানে বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালিদের অংশগ্রহণে এক মতবিনিময়সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সভার সভাপতি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ক্যশৈহ্লা।

তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই শান্তি চাই। এ জন্য শান্তি সংলাপ ছাড়া সমস্যা সমাধানের ভিন্ন পথ নেই। কিন্তু এই শান্তি সংলাপ শুরুর আগে কেএনএফ এবং তাদের সামরিক শাখা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে দিতে হবে। লুট করে নিয়ে যাওয়া পুলিশ ও আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র অবশ্যই ফেরত দিতে হবে।

মতবিনিময়সভায় বম সোশ্যাল কাউন্সিল, ম্রো সোশ্যাল কাউন্সিল, ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ, মারমা অ্যাসোসিয়েশন, খেয়াং সোশ্যাল কাউন্সিল, খুমী সোশ্যাল কাউন্সিল, চাকমা সোশ্যাল কাউন্সিল, চাক সামাজিক পরিষদ, তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ পরিষদ, পাংখোয়া-লুসাই এবং বাঙালি সামাজিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা স্থগিত শান্তি সংলাপ পুনরায় শুরু করার পক্ষে মত দেন।

এ বিভাগের অন্যান্য