পরস্পরকে নিয়ে ভুল হিসাব-নিকাশ করেছে ইরান ও ইসরাইল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ঃ

 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্যান্য পশ্চিমা নেতারা যতটা ভেবেছিলেন ইরানে ইসরাইলের হামলা ততটা ভয়ঙ্কর হয়নি।

গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইসরাইলের হামলায় ইরানের একজন সিনিয়র জেনারেল নিহত হওয়ার পর থেকে ঘটনাপ্রবাহ যেভাবে বিপজ্জনক দিকে মোড় নিয়েছিল সে প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা নেতারা ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছিলেন, তারা যাতে একটা সীমারেখা টানে।

হামাস ইসরাইলে আক্রমণ করার ছয়মাসের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও এখনো গাজায় যুদ্ধ চলছে এবং সেই যুদ্ধ লেবানন ও ইসরাইলের দুপাশের সীমান্তে ছড়িয়েছে।

আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য এখন সর্বাত্মক যুদ্ধের মুখে আছে এবং সেটি আঞ্চলিক ও বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

ইসফাহানে যে ঘটনা ঘটেছে সেটিকে ইরান খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছে।

প্রথমে বলা হয়েছিল কোনো হামলা হয়নি। পরবর্তীতে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক বিশ্লেষক বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীরা উৎক্ষেপণ করা ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।

ইরানের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কৌতুক করে ড্রোনের ছোট আকারের ছবি প্রকাশ পোস্ট করেছে। গত শনিবার ইরান যে হামলা চালিয়েছিল সেটির জবাব দিয়েছে ইসরায়েল।

দুদেশের মধ্যে বহু বছরের শত্রুতা থাকলেও এই প্রথমবারের মতো ইসলামিক রিপাবলিক ইরান ইসরাইলের মাটিতে আঘাত হেনেছে।

সে হামলার সময় ইরান ৩০০’র বেশি ড্রোন ও মিসাইল ছুঁড়েছে। প্রায় সবগুলোই ধ্বংস করেছে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী। তাদের সহায়তা করেছিল আমেরিকা, ব্রিটেন ও জর্ডান।

সে হামলার মাধ্যমে ইরান তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে তুলে ধরেছে। হামলার বেশ আগে থেকেই তারা ইসরাইল এবং তাদের মিত্রদের প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে।

এরপর বেশ দ্রুততার সঙ্গে জাতিসংঘে ইরান এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের পালটা জবাব দেওয়ার বিষয়টি শেষ হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইসরাইলকে আহবান জানিয়েছিলেন, তারা যাতে বিষয়টি ‘তাদের বিজয়’ হিসেবে ধরে নেয়। কিন্তু ইসরাইল জেদ ধরেছিল যে তারা পালটা আক্রমণ করবে।

এই সংকটের শুরু থেকে দেখা গেছে ইরান এবং ইসরাইল পরস্পরকে বুঝতে পারেনি। উভয় পক্ষ পরস্পরকে নিয়ে ভুল হিসাব-নিকাশ করেছে। ফলে সংকট আরও গভীর হয়েছে।

দামেস্কে ইরানের সিনিয়র জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জায়েদিকে হত্যার পর ইসরাইল ভেবেছিল যে ইরান শুধু চরম ক্ষোভ প্রকাশ করবে, এর বাইরে তারা কোনো শক্ত জবাব দেবে না।

ইরান বলেছিল দামেস্কে তাদের কনস্যুলেটে হামলার বিষয়টিকে তারা নিজের দেশের ওপর হামলা হিসেবে বিবেচনা করছে।

ইসরাইল দাবি করেছিল কনস্যুলেট চত্বরটি কূটনৈতিক কনভেনশন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল না। কারণ, ইসলামিক রেভ্যুলশনারি গার্ডের সদস্যরা সেটিকে একটি সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেছিল।

কিন্তু ইসরাইলের এই সংজ্ঞা ইরান মেনে নেয়নি। তেহরান ভেবেছিল তাদের হামলার পর ইসরায়েলে একটি সীমারেখা টানবে। এটি ছিল ইরানের দিক থেকে আরেকটি ভুল হিসাব-নিকাশ।

ইসফাহানে হামলার জবাবে ইরান যদি পালটা হামলা না চালায় তাহলে এখনকার উত্তেজনা আপাতত প্রশমন হবে।

গত রাতে যা ঘটেছে সেটি হতে পারে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একটি জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন এতদিন ধরে যে আহ্বান জানাচ্ছিলেন সেটিতে পাশ না কাটিয়ে এই জবাব দেওয়া চেষ্টা হতে পারে।

বিষয়টি যদি সেরকম কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আরও একটি প্রশ্ন আছে এখানে। সেটি হচ্ছে– ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় যেসব সাবেক জেনারেল আছেন তারা কি এই জবাব দেওয়াকে যথেষ্ট মনে করবেন?

কারণ, তারা চায় আরও কঠিন জবাব দিতে; যার মাধ্যমে শত্রুকে প্রতিহত করার সামর্থ্য পুন:প্রতিষ্ঠা করা যায়।

নেতানিয়াহুর উগ্র জাতীয়তাবাদি জোটসঙ্গীরাও ইসরাইলের দিক থেকে আরও ভয়ঙ্কর জবাব দেওয়ার দাবি করেছেন।

ইসরাইলের ন্যাশনাল সিকিউরিটি মিনিস্টার ইটামার বেন গাভির বলেন, ইরান যখন আক্রমণ করেছিল তখন ইসরাইলের প্রয়োজন ছিল ‘ধ্বংসাত্মক জবাব দেওয়া’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন – ইসফাহানের হামলাটি খুবই ক্ষীণ।

পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, এ অঞ্চলের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে ইরান এবং ইসরাইলের মধ্যে চলমান ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে একটি সীমারেখা টানা।

এ ঘটনার মাধ্যমে যদি চলমান সংকটের শেষ হয়, তাহলে এর মাধ্যমে নতুন উদাহরণ তৈরি হয়েছে।

ইরান ইসরাইলের ভূমিতে সরাসরি আঘাত করেছে। ইসরাইলও ইরানের মাটিতে পালটা হামলা করে জবাব দিয়েছে।

দুদেশের মধ্যে যে দীর্ঘ গোপন যুদ্ধ চলছে সেটি ছায়া ভেদ করে এখন সামনে এসেছে। ইরান এবং ইসরাইল দেখিয়েছে যে তারা পরস্পরের প্রতি অতিমাত্রায় মনোযোগ দিলেও পরস্পরের উদ্দেশ্যে বা ইচ্ছা বোঝার ক্ষেত্রে তারা কেউই দক্ষ নয়।

এ বিভাগের অন্যান্য