চুরির অপবাদে দুই শিশুকে নির্যাতন, ইউপি সদস্যসহ দুইজন গ্রেফতার

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের পল্লীতে গরু চুরির আখ্যা দিয়ে দরিদ্র, সর্বহারা দুই শিশুকে গাছের সাথে বেঁধে বেধড়ক পিঠিয়েছে ইউপি সদস্য সহ মাতব্বররা। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য মমিনা খাতুন সহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে চুনারুঘাট থানা পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, চুনারুঘাট উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের কালিশিরি গ্রামের মো: মনফর উল্ল্যার স্ত্রী মোছা: মনিনা খাতুন (৩৮)। তিনি ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার।একই ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের আব্দুল কুদ্দুছের পুত্র আব্দুর রউফ (৩৫)।

তাদেরকে শুক্রবার দুপুরের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে থানার উপপরিদর্শক লিটন রায় ও মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের পৃথক অভিযানে ইউপি সদস্য সহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেন। বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের বিরুদ্ধে নির্যাতিত শিশুদের নানু আনোয়ারা খাতুন বাদী হয়ে ইউপি সদস্য মমিনা খাতুন সহ ৫ জনের নাম উল্লেখ করে চুনারুঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। নির্যাতনের শিকার শিশুরা হলেন-মৃত কন্টু মিয়ার ছেলে নুর ইসলাম (১০) ও আব্দুল হাকিমের ছেলে তোফাজ্জল (৮)।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের কালিশিরি গ্রামে নুরুল ইসলাম (১০) এর বাবা কন্টু মিয়া। তোফাজ্জল (৮) এর বাবার নাম আঃ হাকিম। নুরুল ইসলাম ও তোফাজ্জলের মা তাসলিমা। বাবা ভিন্ন হলেও তারা সহোদর। তারা নানীর বাড়িতে থাকে। নানী মানুষের সাহায্য সহযোগীতা নিয়ে সংসার চালান। তাদের মা প্রায় দুই সাপ্তাহ পূর্বে সৌদি গেছেন জীবিকার তাগিদে। ৪ মার্চ বিকেলে কালিশিরি গ্রামের জোবায়ের নামের এক যুবক শিশু নুরুল ইসলাম ও তোফাজ্জলকে মাঠ থেকে গরু চুরির অভিযোগে ধরে এনে বাড়ির একটি গাছের সাথে বেঁধে রাখে। এ সময় ঘনশ্যামপুর গ্রামের সাজল মিয়া, বনগাও গ্রামের আব্দুর রউফ, ইউপি সদস্য মমিনা খাতুন সহ ৭/৮ জন লোক ওই দুই শিশুকে মারধোর শুরু করেন।

মামলার বাদীনি আনোয়ারা বলেন, চোরির অপবাদ দিয়ে একজন ইউপি সদস্যসহ আমার দুই নাতিকে আটকে রেখে গাছের সাথে বেধেঁ অমানুষিক নির্যাতন করেছে। আমি এর বিচার চাই।

এবিষয়ে অভিযুক্ত সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য মমিনা খাতুন মারপিটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি মাত্র দুইটা বাড়ি দিছি পরে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। আব্দুর রউফ জানায় তারা চুরি করে এজন্য সবাই মারে সুযোগে আমিও দুইটা বাড়ি দিছি।

এবিষয়ে চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিল্লোল রায় বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে গত ৪ মার্চ আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের কালিশিরি গ্রামে। কিন্তু এবিষয়ে আমাদেরকে কেউ জানায়নি। শিশু নির্যাতনের এ ঘটনা গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে প্রকাশিত হবার পর আমাদের নজরে আসে। আমরা তাৎক্ষণিক পুলিশ পাঠিয়ে দুজনকে আটক করি। পরে ঘটনায় আহত শিশুর নানু বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৩জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় এজাহার নামীয় ২ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

স্থানীয় মেম্বার শেখ আঃ ছত্তার দু:খ প্রকাশ করে জানান, শিশুরা অপরাধ করলে শিশু আইন ছিলো কিন্তু শিশুদেরকে চুর আখ্যা দিয়ে বেঁধে রাখা ঠিক হয়নি।

এ বিভাগের অন্যান্য