মুসলিম লিগের কারণেই সরকার গঠনে অচলাবস্থা : বিলাওয়াল
সিলেটের সময় ডেস্ক :
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বলেছেন, পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) উদাসীনতার কারণেই সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বিলাওয়াল।
বিলাওয়াল বলেন, সরকার গঠনের এই অচলাবস্থা পাকিস্তানের গণতন্ত্র এবং অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকার গঠনে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলে সেটি অবশ্যই ভালো হতো। পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠছে।
তবে সরকার গঠনের জন্য পিপিপি তাড়াহুড়ো করবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “কেউ (পিএমএল-এন) যদি অবস্থান পরিবর্তন করে, তাহলে অগ্রগতি হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে তেহরিক-ই-ইনসাফ আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু দলটি বলছে যে, তারা কারও সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত নয়। এটি এই মুহূর্তে আরেকটি বড় সমস্যা।
নির্বাচনের পর ১১দিন পেরিয়ে গেলেও কোন দল পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, সেটি এখনও স্পষ্ট হয়নি।
দেশটির সংবিধানে বলা হয়েছে, ভোটের দিন থেকে ২১ দিনের মধ্যে নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন ডাকতে হবে। সে হিসাবে, আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার গঠনের সকল প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
কিন্তু একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় কোনো দল এখন পর্যন্ত সরকার গঠনের প্রক্রিয়াই শুরু করতে পারেনি। যদিও ক্ষমতায় যেতে জোট গঠনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বড় দলগুলো।
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সাথে সমঝোতা করে সরকার গঠনের চেষ্টা করে যাচ্ছে নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন)।
৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে পিএমএল-এন মোট ৭৫টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। অন্যদিকে, বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৪টি আসন। জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় এই দুই দল অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে বলেও কয়েকদিন আগে নেতারা জানিয়েছিলন। কিন্তু নওয়াজ শরিফ যেই ফর্মুলায় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সেটিতে রাজি হননি।
“আমাকে বলা হয়েছিল প্রথম তিন বছর তাদেরকে দিতে এবং পরের দুই বছর আমাকে প্রধানমন্ত্রী হতে। কিন্তু আমি তা মানা করেছি”, রবিবার পাকিস্তানের থাট্টায় এক র্যালিতে ভাষণ দেওয়ার সময় এ কথা বলেন বিলাওয়াল ভুট্টো।
ফলে দল দু’টি শেষ পর্যন্ত জোট গঠন করতে পারবে কি না, সেটি নিয়েই এখন সংশয় তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে, পার্লামেন্টে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের সাথে জোট গঠন করতে সম্মত হয়েছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছেন। তারা পেয়েছে ৯৩টি আসন। আর সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল বিজয়ী হয়েছে একটি আসনে।
সমঝোতা অনুযায়ী, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ইতোমধ্যে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে যোগ দিতে শুরু করেছেন।
পাকিস্তানে সরকার গঠন করার জন্য একটি দল বা জোটকে পার্লামেন্ট ১৬৯টি আসন পেতে হয়।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ৩৬৬টি আসনের মধ্যে ২৬৬টি আসনের জনপ্রতিনিধি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। এর বাইরে ৭০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে, যার মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের এবং ১০টি অমুসলিমদের।
বস্তুত জাতীয় পরিষদে কোন দলের আসন সংখ্যা কত, সেটির ওপরে নির্ভর করেই সংরক্ষিত এসব আসনের বণ্টন করা হয়ে থাকে। তবে পাকিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত আসন বণ্টনে ভূমিকা রাখতে পারেন না।
সে কারণেই সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে যোগ দিচ্ছেন পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
সূত্র : বিবিসি।