ডিবি পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে ৩৬ লাখ টাকা লুট, গ্রেপ্তার ২

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

জাকির হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী গত বছরের ৯ অক্টোবর যৌথভাবে একটি জমি কেনার জন্য ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যাওয়ার পথে ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপরে ডিবি পুলিশ পরিচয়ধারী ডাকাতদের খপ্পরে পড়েন। গাড়িতে থাকা ভাগনেসহ ব্যবসায়ী জাকিরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সব টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। পরে হাত-পা বেঁধে তাদের পূর্বাচলে ফেলে চলে যায় ডাকাত দল। পরে ভুক্তভোগী রাজধানীর ডেমরা থানায় করেন।

 

মামলার পর ছায়া তদন্ত ও ডাকাত দলের সন্ধানে নামে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনাল টিম। গত রবিবার থেকে আজ মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত টানা অভিযানে রাজধানীর ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা এবং পটুয়াখালী জেলার বিভিন্ন স্থানে ডিবি পরিচয়ধারী ওই ডাকাত দলের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলো- আবুল কাশেম ওরফে জাহিদ (৪৫) এবং মোস্তাফিজুর রহমান (৩৯)।

আবুল কাশেমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস এবং ৩টি গাড়ি, একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।

 

তবে লুণ্ঠিত টাকার মাত্র ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ডিবি পুলিশ। দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ডিবি ওয়ারী বিভাগে কর্মকর্তারা। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। 

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ জানায়, ধরা পড়ার ভয়ে ডাকাত দল ডাকাতির টাকা যাতে ফেরত দিতে না হয় বা নষ্ট না হয় সেজন্য বিনিয়োগ করে।

ডাকাতির টাকায় তারা কিনেছে গাড়ি ও জমি। ডাকাতির টাকায় কেনা গাড়ি ব্যবহার করে তারা আবারও নামে ডাকাতিতে। 

ডাকাতির শিকার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে একটি জমি যৌথভাবে কেনা ও রেজিস্ট্রেশনের জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলাম। ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপরে থাকা অবস্থায় পেছন থেকে ফলো করে আসা ঢাকাগামী একটি কালো রঙের গাড়ি আমাদের গতিরোধ করে। সামনে দাঁড়িয়ে ওয়াকি-টকি, পিস্তল হাতে গাড়ি থেকে নামায়।

নামার মাত্র ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে আমাকেসহ ভাগনের হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলা হয়। আমাদের গাড়িতেই তারা আমাদের জিম্মি করে বিভিন্ন সড়ক ঘোরাঘুরি শুরু করে। গাড়িতে কত টাকা আছে জানতে চায়। ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর বিকেল ৫টার দিকে পূর্বাচল বাণিজ্য মেলা সংলগ্ন সারুলিয়া এলাকায় রাস্তার পাশে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাদের ফেলে চলে যায়।’ 

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে গিয়ে আমরা মোস্তাফিজুর রহমান (৩৯) ও আবুল কাশেম ওরফে জাহিদ (৪৫) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করি। মোস্তাফিজের নামে ৫টি মামলা, কাশেমের নামে তিনটি মামলা রয়েছে। এসব ডাকাতি ও অস্ত্র মামলায় একাধিকবার তারা জেলে গেছে।’

গ্রেপ্তার দুই জন সোমবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে জানিয়ে হারুন বলেন, ‘টাকা বেশি আমরা উদ্ধার করতে পারিনি। তখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, ডাকাতির ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকায় তারা কি করেছেন? জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, দুজনের নেতৃত্ব একটি ডাকাত দল দীর্ঘ কয়েক বছর দরে ডাকাতি পেশায় জড়িত। তারা ধরা পড়ার বয়ে ডাকাতির টাকা নষ্ট বা বণ্টন না করে ইনভেস্ট করে। তারা তিনটা গাড়ি কিনেছে এবং একটা মোটরসাইকেল কিনেছে। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস এবং পটুয়াখালী জেলার মহিপুর থানা এলাকা থেকে ডাকাতির লুণ্ঠিত টাকায় কেনা একটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি প্রাইভেটকার, একটি মাইক্রোবাস এবং একটি মোটরসাইকেল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।’

হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ডাকাতিকালে ব্যবসায়ী জাকিরকে কব্জা করে টাকা সব লুণ্ঠনের পর হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে ছবি তোলে। কাউকে না জানানোর হুমকি দিয়ে বলে তুমি যে অস্ত্রবাজ এই ছবি প্রকাশ করব। তুমিই হবে তখন অস্ত্রবাজ ডাকাত। তারা বলে যে, পরবর্তীতে বাড়াবাড়ি করলে, তোদেরকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেব।’

এ বিভাগের অন্যান্য