পাকিস্তানের নির্বাচন: নতুন জোটে পুরনো সমস্যারই ছায়া
পাকিস্তানের সদ্যঃসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জোট সরকার তাই ছিল অনিবার্য পরিণতি। ইমরান খানের পতনের পর পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম) নামের জোট সরকার গঠন করা পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টিসহ (পিপিপি) কয়েকটি দল এবারও জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। পুরনো মিত্রদের এই নতুন জোটে পুরনো সমস্যারই প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
দুই বছর আগে অনাস্থা ভোটে পিটিআই নেতা ইমরান খানের সরকার হটিয়ে ক্ষমতায় বসেছিল পিডিএম নামের জোট। পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাফসা খাজা এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা সেই একই সেটআপ, শুধু নতুন নির্বাচনের ছাপ্পা পড়েছে এতে।’ ইমরান খানের অনুসারীদের প্রতি জনসমর্থন বেড়ে যাওয়ায় স্বভাবতই নতুন সরকার গঠনে বড় জোটের প্রয়োজন ছিল ইমরান বিরোধীদের। কিন্তু পিএমএল-এন ও পিপিপির এবারের সম্ভাব্য জোট সরকার দৃশ্যত দুই বছর আগেরটির তুলনায় বেশ নড়বড়ে হবে।
এ বিষয়ে বিশ্লেষক শামসি বলেন, ‘যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের বিবেচনায় পিপিপি এই ঝামেলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে চাইছে।’ প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সমর্থন হারিয়ে বছর দুয়েক আগে ইমরান খানের সরকারের পতন ঘটে। তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর চরম দুঃসময় ঘনিয়ে আসে। বিশ্লেষকরা অনুমান করেছিলেন, ইমরানের গ্রেপ্তারজনিত বিক্ষোভের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়ানো পিটিআই নিপীড়নে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এখনো তৎপর সেনাবাহিনী
পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রায় পুরোটা সময় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ শাসন চলেছে বলে মনে করা হয়। অনেক সময় কাগজে-কলমে বেসামরিক সরকার থাকলেও নেপথ্যে ‘কিংমেকারের’ ভূমিকা রেখেছে প্রভাবশালী সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে শেহবাজ শরিফকে নিজেদের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করেছে পিএমএল-এন। শেহবাজের নেতৃত্বেই ইমরান সরকারের পতন হয়েছিল এবং তাঁর প্রতি সেনাবাহিনীর সমর্থন ছিল বলে মত বিশ্লেষকদের। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে একটি ভঙ্গুর জোট সরকার গঠিত হলে সামরিক বাহিনীর খুশিই হওয়ার কথা। কারণ ইমরানের পতনের পর বেসামরিক বিষয় নিয়ে তাদেরই সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল।
ইসলামাবাদভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানোবার ইনস্টিটিউটের কামার চিমা বলেন, ‘এই রাজনীতিকদের নিয়ে সামরিক বাহিনী অনেকটাই দ্বিধাগ্রস্ত। বৃহত্তর স্থিতিশীলতার স্বার্থে নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের ওপর নির্ভরশীল সেনাবাহিনী। যতক্ষণ এই সরকারের ওপর জনসমর্থন আছে, ততক্ষণ তারা নিজের মতো কিছু করতে পারবে না।’
সূত্র : এএফপি