এই সরকার জনগণের নয়, ভারত-চীন-রাশিয়ার: গয়েশ্বর

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

টানা তিন মাস ‘আত্মগোপনে’ থাকার পর শনিবার রাজধানীতে ‘কালো পতাকা’ হাতে মিছিল করেছেন বিএনপির হাজারও নেতাকর্মী। ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম মাঠের এ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর ঢল নামে। পূর্বঘোষিত কালো পতাকা মিছিলে ঢাকা ও আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা কালো পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে এতে অংশ নেয়। এ কর্মসূচি তাদের মনোবল ফের চাঙ্গা করেছে বলে তারা জানিয়েছেন।

পতাকা মিছিল শুরুর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশের জনগণের বদলে অন্য রাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলে তাকে বৈধ সরকার বলা যায় না। এই (আওয়ামী লীগ) সরকার জনগণের সরকার নয়। তারা ভারত, চীন ও রাশিয়ার সরকার।

শনিবার বিকালে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

গয়েশ্বর রায় বলেন, আমরা বর্তমান সরকারকে মানতে বাধ্য নই। প্রধানমন্ত্রী বিদেশিদের সার্টিফিকেট জোগাড় করেছেন। দেশের মানুষ যদি সার্টিফিকেট না দেয়, বিদেশি সার্টিফিকেট দিয়ে আপনাকে (শেখ হাসিনা) বৈধ সরকার প্রমাণ করার কোনো সুযোগ নেই।

এ সময় ‘দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং অবৈধ ডামি সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে’ আগামী ৩০ জানুয়ারি দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা-থানায়, পৌরসভা অর্থাৎ সব ইউনিটে কালো পতাকা মিছিলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ওই দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে।

কালো পতাকা মিছিলে অংশ নিতে দুপুর ১২টা থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাথায় কালো টুপি পরে ও হাতে কালো পতাকা নিয়ে নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন।

ব্যাপক মানুষের উপস্থিতিতে নেতাকর্মীরা ‘অবৈধ সরকার, মানি না, মানব না’, ‘অবৈধ সংসদ মানি না, মানব না’, ‘দফা এক দাবি এক, ঘুরে ফিরে পদত্যাগ, ‘ভোট চোর ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে তোলেন। কর্মীদের অনেকের হাতে দলের গ্রেফতার হওয়া নেতাদের মুক্তির দাবি সংবলিত প্ল্যাকার্ডও ছিল।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শেষ করে বিকাল সাড়ে ৩টায় মিছিলটি নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফকিরাপুল, আরামবাগ মোড় ঘুরে নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয়।

কোনো ধরনের বিচ্ছৃঙ্খলা এড়াতে দলটির পক্ষ থেকেও নেওয়া হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবকরা মিছিলের অগ্রভাগে ও পেছনে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিয়োজিত ছিল। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে বক্তব্য দেন সিনিয়র নেতারা।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে গয়েশ্বর রায় বলেন, ৭ জানুয়ারি মানুষ ভোটকেন্দ্রে যান নাই। ৭ শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দেয়নি। শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) দেশের ৭ ভাগ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আর বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৯৩ শতাংশ মানুষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতেই হবে। এটা আমাদের ভোট, গণতন্ত্র এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই। প্রতিরোধের আগেই মানে মানে কেটে পড়ুন। মানসম্মান ও লাজ্জা থাকলে জনগণের ভোটাধিকার ফেরত দেন। দেখেন ১ শতাংশ ভোট পান কিনা?

স্থায়ী কমিটির এই নেতা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘোষণা দিয়ে গণভবনে ঘন ঘন বৈঠক করেছে। তৃণমূল দল করল কিন্তু সেটাও ছাগলে খেয়ে ফেলল। আজকে ৭ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে যায়নি। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আইডি কার্ড নিয়ে নিজেরা নিজেরা ভোট দিয়েছে। সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কার্ড নিয়ে জোরকরে ভোট দিতে বাধ্য করেছে। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে শিয়াল কুকুর ছাড়া কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজকে ৬ শতাধিক সংসদ সদস্য। এর মধ্যে তারা নতুন সরকার গঠন করেছে। এটা তো আইনের লঙ্ঘন। আবার ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বলছেন বিরোধী দল কারা হবে?

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, আজকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিলেন! আর যেদিন সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে দেশ ছাড়া করলেন তখন কি হয়েছিল? তাহলে প্রধান বিচারপতির পদটা কতটা কলঙ্কিত করলেন?

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আমরা অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকারের পদত্যাগ ঘটাতে রাজপথে নেমেছি। সরকার কালো পতাকার কালো চিহ্নে নিশ্চিহ্ন হয়ে বিদায় নিতে বাধ্য হবে। গত ৭ জানুয়ারি দেশের জনগণ এ সরকারকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছে। সেদিন সরকারের নৈতিক পরাজয় হয়েছে। তারা সেদিন পুলিশ দিয়ে গায়ের জোরে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে নির্বাচন করেছে।

মঈন খান বলেন, সরকার যত শতাংশ ভোট দেখাতে চেয়েছিল সেই মোতাবেক নির্বাচন কমিশন ভোট কাস্টিং দেখিয়েছে। সুতরাং কত শতাংশ ভোট পড়েছে সেটি কথা নয়। সেদিন কোনো ভোট হয়নি।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ ও সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর যৌথ সঞ্চালনায় মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ।

মিছিলে আরও অংশ নেন- সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খান রিতা, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, কামরুজ্জামান রতন, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, শিরিন সুলতানা, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, রাশেদা বেগম হীরা, বিলকিস ইসলাম, নাজিম উদ্দিন আলম, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, তাবিথ আওয়াল, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, দুলাল হোসেন, খন্দকার আবু আশফাক, নিপুণ রায় চৌধুরী, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ইকবাল হোসেন শ্যামল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গণি চৌধুরী, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ।

এ বিভাগের অন্যান্য