কোন্দল এড়িয়ে অংশগ্রহণ বাড়াতে চায় আওয়ামী লীগ

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

মূলত দুই কারণে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। কারণ দুইটি হলো—দলের তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ সংঘাত এড়ানো এবং নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতা কালের কণ্ঠকে এ কথা বলেছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে দলের নেতাদের স্বতন্ত্র প্রার্থিতার সুযোগ উন্মুক্ত রাখায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বড় ধরনের সংঘাতপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ অবস্থা নিরসনে কেন্দ্রীয় নেতারা হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর বাড়াতে চাইছেন না তাঁরা। 

নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্র মতে, শিগগিরই স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। পাঁচ ধাপে ৪৮৫টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আগামী এপ্রিলে প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠনের পর থেকে নিয়মিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকারসংক্রান্ত একটি নতুন আইন প্রণয়নের পর থেকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন শুরু হয়। এর আগে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী দিতে পারত না।

 

তবে তারা প্রার্থীদের সমর্থন দিতে পারত। ২০১৫ ও ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়েই অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। আইন প্রণয়নের পর থেকে এবারই প্রথম দলটি দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

দলীয় প্রার্থী না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অনেক বড় একটি দল। এ দলে অনেক যোগ্য নেতা আছেন।

ফলে অনেকেই জনপ্রতিনিধি হতে চান। প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকলে তৃণমূলে কার কেমন জনসম্পৃক্ততা আছে তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। এর মধ্য দিয়ে আগামীর যোগ্য নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে।’ 

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার পেছনে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আশঙ্কা ছাড়াও আরেকটি বড় বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার চাপ রয়েছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে আসবে না এটা অনেকটাই নিশ্চিত। ফলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখাকেই সবচেয়ে সুবিধাজনক কৌশল বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রার্থিতা উন্মুক্ত থাকায় দলের যাঁরাই আগ্রহী তাঁরাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। আবার বিএনপির অনেক নেতাও নির্বাচনে আগ্রহী হবেন। নৌকা না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা যেমন বাড়বে, তেমনি বিএনপিসহ অন্য বিরোধী দলগুলোর স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারাও নির্বাচনে আসবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

গত সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভায় উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দুই ঘণ্টা আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেন।

সভার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, তফসিল ঘোষণার পর দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা ডেকে উপজেলা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র বলেছে, বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলো ধারণামতো নির্বাচন বর্জন করলে উপজেলা নির্বাচনে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যেই। সদ্য অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও যদি দল কাউকে মনোনয়ন বা সমর্থন দেয়, তাহলে মনোনয়ন বঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ হবেন। দলের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি আরো বেড়ে যাবে। স্বতন্ত্রদের আটকালে ভোট প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে না। এতে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হলে তা নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠবে। তাই প্রার্থিতা উন্মুক্ত রাখাই সবচেয়ে ভালো পথ মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে। কিন্তু আমাদের দলের তৃণমূলে সাংগঠনিক ক্ষতি হয়েছে। ফলে উপজেলায় আর নৌকার বিরুদ্ধে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা চান না কেন্দ্রীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ার আরেকটি বড় কারণ উল্লেখ করেছেন। তা হচ্ছে—দলীয় প্রতীক নৌকার প্রতি নেতাকর্মীদের আবেগ ধরে রাখা। নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়া হলে দলের নেতাকর্মীরা অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেন। এতে করে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়াটা তাঁদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে।

এ বিভাগের অন্যান্য