দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে কুকুরের মাংস বিক্রি বন্ধে বিল পাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ঃ

কুকুর জবাই ও মাংস বিক্রির বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদে একটি নতুন আইন পাস হয়েছে। নতুন এই আইনের অধীনে দক্ষিণ কোরিয়ায় কুকুর জবাই করা এবং মাংস বিক্রি অবৈধ। আইনটি ২০২৭ সাল নাগাদ কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় শতাব্দী প্রাচীন এই ভ্যাসের অবসান ঘটতে যাচ্ছে।

তবে নতুন আইনে কুকুরের মাংস খাওয়া বেআইনি হবে না।

কুকুরের মাংসের স্টু ‘বোশিনটাং’ দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু বয়স্ক একটি উপাদেয় হিসেবে বিবেচিত করে। তবে বর্তমানে কুকুরের মাংস কোরিয়ান তরুণদের কাছ মোটেও জনপ্রিয় নয়। ২২ বছর বয়সী এক কোরিয়ান ছাত্র লি চে-ইয়ন বলেন, ‘পশু অধিকার প্রচারের জন্য এই নিষেধাজ্ঞার প্রয়োজন ছিল।

সিউলে বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘এখন অনেক মানুষের পোষা প্রাণী কুকুর। তারা এখন পরিবারের মতো, তাই কুকুর খেতে আর ভালো লাগে না।’

আইনটি কার্যকর হওয়ার আগে কৃষক ও রেস্তোরাঁ মালিকদের কর্মসংস্থান এবং আয়ের বিকল্প উৎস খুঁজে পেতে তিন বছর সময় রয়েছে। আইন ভঙ্গ করলে তিন বছরের জেল বা ৩০ মিলিয়ন ওয়ান (২২ হাজার ৯০০ ডলার) জরিমানা হতে পারে।

প্রাণী সুরক্ষা গোষ্ঠী হিউম্যান সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল কোরিয়ার বোরামি সিও বলেছেন, ‘বিল পাসের মাধ্যমে মানুষের খাওয়ার জন্য কুকুরের প্রজনন এবং হত্যার অবসান ঘটবে। আমরা এই নিষ্ঠুর শিল্প থেকে লাখ লাখ কুকুরকে বাঁচানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছি।’ এর আগে কুকুরের মাংস নিষিদ্ধ করার প্রচেষ্টা ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদের মুখে ব্যর্থ হয়েছিল।

নতুন প্রস্তাবিত বিলে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে ব্যবসাগুলো এই বাণিজ্য থেকে সরে আসতে পারে।

দেশটির কৃষি মন্ত্রণালয় ধারণা করেছে, ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ১০০টি খামার প্রায় এক হাজার ৬০০টি রেস্তোরাঁয় কুকুরের মাংস পরিবেশন করার জন্য পাঁচ লাখ ৭০ হাজার কুকুরের প্রজনন করছে। কোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব এডিবল ডগস ব্রিডার এবং বিক্রেতাদের একটি জোট বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ১.৫ মিলিয়ন কুকুর পালনকারীর তিন হাজার ৫০০টি খামারের পাশাপাশি তিন হাজার রেস্তোরাঁকে প্রভাবিত করবে।

বিল পাস হওয়ার পর ৮৬ বছর বয়সী কিম সিওন-হো বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞায় তিনি হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মধ্যযুগ থেকে কুকুরের মাংস খেয়ে আসছি। কেন আমরা ঐতিহ্যবাহী খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকব? কুকুরের মাংস নিষিদ্ধ হলে, গরুর মাংসও নিষিদ্ধ করা উচিত।’

কোরিয়ার হিউম্যান সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক জং আহ চে বলেছেন, তিনি তার জীবদ্দশায় এই নিষেধাজ্ঞা দেখে অবাক হয়েছেন। তাঁর হৃদয় ভেঙে যেত লাখ লাখ কুকুরের জন্য। তবে এই পরিবর্তন অনেক দেরিতে এসেছে। তিনি বলেন,  ‘আমি আনন্দিত যে দক্ষিণ কোরিয়া এখন ইতিহাসের দুঃখজনক অধ্যায়টি বন্ধ করতে পেরেছে।’

সূত্র : বিবিসি

এ বিভাগের অন্যান্য