কিশোর নাঈমকে গলাকেটে হত্যা: দুজন গ্রেফতার

সিলেটের সময় ডেস্ক :

 

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে নাঈম (১৪) নামে এক কিশোরকে গলাকেটে হত্যার তার অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করেছে চুনারুঘাট থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের শুক্রবার বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

কাছে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের শরীফপুর এলাকার মর্তুজ আলীর পুত্র কামাল মিয়া (১৭) ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলার জয়নগর এলাকার মৃত জিতু মিয়ার ছেলে সুবীর মিয়া (৩৫)। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্য মতে চুরি হওয়া টমটমের ৪টি ব্যাটারী উদ্ধার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশেদুল হক জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে নাঈম তার বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে চালানোর জন্য বের হন। এর পর থেকে তিনি অটোরিকশাসহ নিখোঁজ ছিলেন। পরে (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে দিকে চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের নিখোঁজের ৩দিন পর চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন পাহাড়ের রাবার বাগানের উঁচু চূড়া থেকে ১৪ বছর বয়সের এক কিশোরের গলাকাটা পচে গলে যাওয়া অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে চুনারুঘাট থানা পুলিশ। পরে সুরতহাল শেষে বিকেলে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে চুনারুঘাট থানা পুলিশ অজ্ঞাত লাশের পরিচয়ের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে প্রচার করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর পেয়ে চুনারুঘাটে এসে নিহতর পিতা তার ছেলের লাশ সনাক্ত করেন। নিহত নাঈম হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের হাতিরখান এলাকার নিদন মিয়ার ছেলে।

নিহতের পিতা নিদন মিয়া জানান, তার ছেলে গত ৭ তারিখ টমটম নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাড়ি ফিরেনি। তিনি সম্ভাব্য স্থানে খোঁজাখোজি করে না পেয়ে ৮ তারিখ হবিগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু সদর থানা পুলিশ অভিযোগ পেয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে হয়তো নাঈম বেঁচে থাকতো বলে দাবী নিহতর পিতার। এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে নিহতের পিতা নিদন মিয়া চুনারুঘাট থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর আসামিদের গ্রেপ্তারে চুনারুঘাটসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন মাধবপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী।

অবেশেষে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ পৃথক অভিযান পরিচালনা করে মামলার ঘটনায় জড়িত কামাল মিয়াকে হবিগঞ্জ সদর এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন। পরে তার দেখানো মতে হবিগঞ্জ কামড়াপুর সামিয়া ও আল্লাহরদান ব্যটারী হাউজে বিক্রি করা চারটি ব্যাটারি উদ্ধার করে জব্দ করেন। এর আগে শায়েস্তাগঞ্জ ওলিপুর সিটি পার্কের সামন থেকে অটোরিকশার বডি উদ্ধার করা হয়। একই সাথে এ চক্রের দুজনকে গ্রেফতার করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী জানান, গ্রেপ্তার কামালসহ একটি চক্র নাঈমকে ভাড়া করে চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের রঘুনন্দন পাহাড়ের নির্জন স্থানের উঁচু চূড়ায় নিয়ে গিয়ে গলাকেটে হত্যা করে টমটম গাড়িটি ওলিপুরে রেখে ব্যাটারী খুলে প্রথমে হবিগঞ্জের সামিয়া ব্যটারী হাউজে ২১ হাজার টাকায় বিক্রি করে। পরবর্তীতে সামিয়া হাউজ থেকে আল্লাহর দান ব্যটারী হাউজ থেকে ২১ হাজার ৫০০ টাকায় খরিদ করে সুবীর মিয়া এসব তথ্য প্রাথমিকভাবে পুলিশের স্বীকার করেছে গ্রেপ্তারকৃতরা। এর মধ্যে আসামী সুবীর মিয়া শুক্রবার সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিম এর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছে। পুলিশের কাছে কামাল মিয়া স্বীকার করে সে হত্যাকারীদের সাথে ছিল এবং মিশুকের ব্যাটারী সবুর মিয়ার নিকট বিক্রির সময় সাথে ছিল। কিন্তু তার বয়স কম হওয়ায় আদালতে তার জবানবন্দি গ্রহণ করেনি। সুবীর মিয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে চোরাই ব্যাটারী ক্রয়ের কথা স্বীকার করে। এর মধ্যে মূল আসামি সহ কয়েকজন পলাতক রয়েছে তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।

এদিকে, ‘রঘুনন্দ পাহাড় থেকে বছরে ডজন খানেক লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন পাহাড়ে কাজ করতে গিয়ে পাহাড়ের উঁচু চূড়ায় চোখে পড়েছে পচাগলা গলাকাটা লাশ। মৃত্যুপুরী পাহাড়টি মাধবপুর শায়েস্তাগঞ্জ ও চুনারুঘাট তিন উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত। খুবই উঁচু হওয়ায় এ পাহাড়ের চূড়ায় কেউ সহজে উঠতে চায় না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাহাড়টিতে একের পর এক হত্যা, ধর্ষণ, জুয়া খেলাসহ নানা অপকর্ম করে আসছে অপরাধীরা। ৫ বছরের ব্যবধানে প্রায় ১২টি লাশ উদ্ধারের পর পাহাড়ের চূড়ায় দীর্ঘদিনের অপকর্মের প্রমাণ সামনে আসে। অপরদিকে, নাঈমের লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা রঘুনন্দন পাহাড়ের চূড়ায় অনেক মানুষের কঙ্কাল, হাড়গোড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকার ভয়ংকর চিত্র দেখতে পান।

এ বিভাগের অন্যান্য