রোমানিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের ৩২ অভিবাসী আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ঃ

 

অভিবাসী পাচারের অভিযোগে রোমানিয়ার ক্লুজ নাপোকা শহর থেকে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) তিন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে দেশটির সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ তদন্তের দায়িত্বে থাকা বিশেষ অধিদপ্তর। এছাড়া, অন্য একটি একটি অভিযানে ভারত ও পাকিস্তানের ৩২ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির সীমান্ত পুলিশ।

পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশ।

প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মানবপাচারের দায়ে আটক ব্যক্তিরা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে একটি অপরাধমূলক কাজে যুক্ত ছিলেন। অভিবাসীদের নিজেদের জিম্মায় রেখে পরে বেআইনি উপায়ে রোমানিয়া সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে পাচার করতেন।

চক্রটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতে বেশ কিছু কৌশল অনুসরণ করেছিল। তারা বেশ কিছু কোম্পানিতে স্বল্প মেয়াদি চুক্তিতে অভিবাসীদের নিয়োগ দেয়। যাতে করে তাদের প্রশাসনিক অবস্থা অবৈধ হয়ে না যায়। পরবর্তীতে তাদের রোমানিয়া থেকে শেঙেন সীমান্তে প্রবেশে সহায়তা করত।

আটক ব্যক্তিদের একজন একটি কোম্পানির হয়ে চক্রের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করত। জনপ্রতি ৭৫০ ইউরোর বিনিময়ে অভিবাসীদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের চুক্তি দিত কোম্পানিটি। প্রকৃতপক্ষে অভিবাসীরা এসব কোম্পানিতে কাজ করতেন না। প্রশাসনিক টহল থেকে আটক এড়াতে অভিবাসীরা এটি ব্যবহার করত। অপরদিকে, এ সুযোগে ভুয়া চুক্তি দিয়ে বিপুল মুনাফা হাতিয়ে নেয় কোম্পানি ও চক্রটি।

তবে কোম্পানি ৭৫০ ইউরোর বিনিময়ে ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করলেও চক্রটি কয়েকগুণ বেশি টাকার বিনিময়ে অভিবাসীদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতো। শেঙেন সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছে দেওয়াসহ পুরো প্রক্রিয়ার জন্য অভিবাসীদের কাছ থেকে জনপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার ইউরো অর্থ দাবি করত অপরাধী চক্রটি।

তাদের অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ হিসেবে তদন্তের সময় মোট সাতটি বেআইনি অভিবাসী পাচার প্রক্রিয়া শনাক্ত করে প্রশাসন। যার মধ্যে ছয়টি রোমানিয়া ভূখণ্ডে এবং একটি হাঙ্গেরিতে সংগঠিত হয়েছিল।

৬ সেপ্টেম্বর পরিচালিত অভিযানটিতে সহায়তা করে সংগঠিত অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদ তদন্তে গঠিত অধিদপ্তর, ক্লুজ নাপোকা টেরিটোরিয়াল সার্ভিস, ক্লুজ অর্গানাইজড ক্রাইম ব্রিগেডের বিচার বিভাগীয় পুলিশ সার্ভিস, তিমিসোয়ারা বর্ডার পুলিশ।

অভিযানে তিন ব্যক্তি ছাড়াও বেশ কিছু মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, হার্ড ড্রাইভ, নগদ তিন হাজার ইউরো এবং নথিপত্র শনাক্ত ও জব্দ করা হয়।

অভিযুক্তদের ক্লুজ আদালতে হাজির করা হলে বিচারক জিজ্ঞাসাবাদের সুবিধার্থে প্রাথমিকভাবে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে।

আরেকটি বিবৃতিতে রোমানিয়া সীমান্ত পুলিশ জানিয়েছে, তিমিস কাউন্টির সেনাড বর্ডার ক্রসিং পয়েন্ট থেকে সীমান্ত রক্ষীরা একটি ভ্যানে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় পাকিস্তান ও ভারতের ৩২ জন নাগরিককে আটক করেছে।

তারা অবৈধভাবে হাঙ্গেরিতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। ভ্যানের চালক একজন ২০ বছর বয়সী তরুণ রোমানীয় নাগরিক। তিনি পোল্যান্ডে নিবন্ধিত একটি ভ্যান চালাচ্ছিলেন। নথি অনুসারে তিনি ইতালিতে স্যানিটারি সামগ্রী পরিবহন করার তথ্য দিয়েছিলেন।

অভিবাসীদের গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করে তদন্তের জন্য স্থানীয় পুলিশ সদর দপ্তরে নেওয়া হয়েছে। অভিবাসীরা জানান, তাদের সবাই ২০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ভারতীয় ও পাকিস্তানি নাগরিক। তারা বৈধভাবে রোমানিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। তবে তাদের মূল গন্তব্য ছিল অবৈধভাবে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছানো।

প্রাপ্ত তথ্য বিবেচনায় নিয়ে সীমান্তরক্ষীরা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলকভাবে রাষ্ট্রীয় সীমান্ত অতিক্রম করার অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।

এছাড়াও অভিবাসী পাচারের অপরাধের জন্য চালকের বিরুদ্ধে মামলা প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সীমান্ত পুলিশ। সূত্র : ইনফোমাইগ্রেন্টস

এ বিভাগের অন্যান্য